ক্রিকেটে এমন কথা বেশ প্রচলিত—মাঠে নামলে শরীরী ভাষাটা ইতিবাচক হতে হয়। কাঁধ ঝুঁকিয়ে আর যাই হোক লড়াই হয় না। সিনা টান করে লড়তে হয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ড দলের কোচ হয়ে আসার পর বেন স্টোকসরা এর আগে মাঠে নামেননি। লর্ডসে আজ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে ইংলিশ ক্রিকেটে শুরু হচ্ছে ম্যাককালাম-স্টোকস যুগ। ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস এই ‘যুগে’ পা রাখার আগেই জানিয়ে দিলেন, আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে দল। শরীরী ভাষা এতটাই ইতিবাচক যে খেলোয়াড়দের মনে হচ্ছে, তাঁদের ‘উচ্চতা বেড়ে ১০ ফুট হয়ে গেছে।’
অ্যাশেজে বিপর্যয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পর ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়েন জো রুট। ক্রিস সিলভারউডকেও কোচের পদ ছাড়তে হয় অ্যাশেজ বিপর্যয়ের পর। ইংলিশ ক্রিকেট এই পালাবদল রুটের জায়গায় অধিনায়ক বানায় তারকা অলরাউন্ডার স্টোকসকে।
সিলভারউডের জায়গায় কোচ করে নিয়ে আসা হয় নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ম্যাককালামকে। দুজনকে একসঙ্গে এক ফ্রেমে রেখে একটি অদৃশ্য ছবি গড়ে নিয়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটের ভক্তরা। সেটি সম্ভাব্য স্টোকস-ম্যাককালাম যুগ শুরুর ছবি। দুজনের মধ্যে মিলও তো কম নেই। স্টোকসের জন্মও নিউজিল্যান্ডে, খেলার ধরনও ম্যাককালামের মতোই—আক্রমণই শেষ কথা। আরও একটি মিল আছে। দুজনেই শ্মশ্রুমণ্ডিত—অর্থাৎ, মুখে দাঁড়ি!
রোমান্টিক সমর্থকেরা এভাবে নিলেও বাস্তবতা কিন্তু কঠিন। লর্ডসে আজ নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে স্টোকস-ম্যাককালাম যুগ শুরু করবে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে এটি দুজনের প্রথম ম্যাচ।
কিন্তু কাঁধের ওপর চাপ কম নেই। সর্বশেষ ১৭ টেস্টের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে ইংল্যান্ড। গত ১২ মাসে জেতা হয়নি একটি টেস্ট সিরিজও। এই খাদ থেকে দলকে উদ্ধার করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ স্টোকস-ম্যাককালাম জুটির জন্য।
স্টোকস অধিনায়ক হওয়ার পর স্টোকস দলে ফিরিয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনের মতো অভিজ্ঞ পেস জুটিকে। আজকের ম্যাচে পেসার ম্যাথু পটসকে অভিষেকও করিয়ে দিতে পারে ইংল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্ট। ব্যাটিংয়ে ওলি পোপকে তিনে নিয়ে এসে রুটকে তাঁর পছন্দের চার নম্বর পজিশনে ফেরত পাঠিয়েছেন স্টোকস। তবে এসব তো দলীয় কৌশল।
লড়াইয়ের টোটকা পাওয়ার পেছনে নতুন কোচের অবদানও দেখছেন স্টোকস। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ব্রেন্ডনের সঙ্গে কয়েক দিন বেশ ভালো কাজ হয়েছে। সে সবাইকে উদ্দীপ্ত করতে পারে। তার ভাষায়—“১০ ফুট লম্বা।” আমি মোটেও নার্ভাস নই, মাঠে নামতে মুখিয়ে আছি।’
প্রায় ১২ মাসের ব্যবধানে ইংলিশ ক্রিকেটে নানা রদবদলের পর ইংল্যান্ড নতুন করে সব শুরু করছে কি না, এ প্রশ্নে স্টোকসের উত্তর, ‘সবাই নতুন শুরু নিয়ে কথা বলছে, যা আমার পছন্দ হচ্ছে না। আমি ক্যানভাসটা সম্পূর্ণ ফাঁকা দেখছি। আমি চাই আমার অধিনায়কত্বের ছায়াতলে সবাই যেন ফুরফুরে মেজাজে খেলতে পারে।’
স্টোকস আরও জানিয়েছেন, অধিনায়ক হিসেবে তিনি সব খেলোয়াড়েরই পাশে থাকবেন, ‘দলের সবাইকে বলেছি, তোমরা সমর্থন পাবে। এটা আমাদের সময় এবং আমরাই আগামীতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করব।’ স্টোকস-ম্যাককালামের সামনে মাঠের বাইরেও আরেকটি চ্যালেঞ্জ আছে। সমর্থকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। লর্ডস টেস্টে টিকিটের দাম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে সমর্থকদের মধ্যে।
রস টেলর ও বিজে ওয়াটলিং অবসর নেওয়ায় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটও একরকম পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কেইন উইলিয়ামসনের অধিনায়কত্বে এই সময়টা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে নিউজিল্যান্ড।
ম্যাককালামের পর নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন উইলিয়ামসন। সাবেক অধিনায়ককে আজ প্রতিপক্ষ শিবিরে দেখে কেমন লাগবে উইলিয়ামসনের? ম্যাককালাম-স্টোকস জুটির আক্রমণাত্মক খেলার ধরনটা নিশ্চয়ই মাথায় আছে কিউই অধিনায়কের।