মোড় ঘুরিয়েছে ভারতের 'প্রথম প্রেম'
>১৯৮৩ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ওই ঘটনা চিরতরে বদলে দিয়েছে দেশটির ক্রিকেটকে
প্রথম প্রেমের মতো আর কিছু হয় না। এ স্মৃতি ভুলে থাকা অসম্ভব। প্রেম—শব্দটি উচ্চারিত হলে তা আলগোছে উঁকি দেয় মনে। মনে আছে তো, নাকি নেই?
মনে থাকে। মানুষের জীবনে তো প্রেমের উপকরণের অভাব নেই। নারী-পুরুষের চিরায়ত সম্পর্ক ছাড়াও আরও অনেক রকম প্রেম আছে। বেশির ভাগ ক্রিকেটারের কাছে যেমন খেলার প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। তাদের কাছে প্রথম প্রেমে সিদ্ধিলাভ আর ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ জয় একই কথা!
সৈয়দ কিরমানি যেমন প্রথম প্রেমের স্মৃতি ভোলেননি। ১৯৮৩ সালে লর্ডসে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল প্রথমবারের মতো। কিরমানি ছিলেন কপিল দেবের সে দলের উইকেটরক্ষক। তাঁর কাছে ৮৩ মানেই প্রথম প্রেমকে আলিঙ্গনের চিরকালীন স্মৃতি। কিরমানির ভাষায়, ‘প্রথম প্রেমের সেই স্মৃতি ভোলা যায় না।’
আসলে আশির দশকে ভারতের যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর জন্যই কথাটা সত্য। জোর দিয়ে কেউ ভাবেনি দোর্দন্ডপ্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারবে ভারত। কপিলরা সেবার বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতে বাজার ধরে ক্রিকেট। সেই ধারাবাহিকতায় বিসিসিআই এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড।
কপিল-অমরনাথরা বিশ্বকাপ জয়ের আগে ভারতে হকি ছিল ভীষণ জনপ্রিয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত পাঁচটি অলিম্পিক স্বর্ণ জিতেছিল ভারতীয় হকি। বিশ্বকাপে ভারতের সম্ভাবনা কতটুকু ছিল সে কথা শুনুন কিরন মোরের মুখে, ‘আমরা কখনো ভাবিনি কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা নকআউট পর্বে পৌঁছাতে পারব। সতীর্থদের কেউ কেউ তো ভেবেছিল যাব, মজা করব চলে আসব। কিন্তু বিশ্বকাপটা জিতে আমরা ভিত্তিটা (দেশের ক্রিকেট) মজবুত করি। এটা অনেকটা প্রথম প্রেমের স্মৃতির মতো, যা কখনো ভোলা যায় না। ৩৭ বছর পর লোকে আজও তা মনে রেখেছে।’
বলিউডে কপিলদের সেই বিশ্বজয়ের চিত্রায়ন ঘটেছে। কপিলের ভূমিকায় ছিলেন রনবীর সিং। পরে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি আজও অনেকের কাছে সেরা।
৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের দলে থাকলেও একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি সাবেক বাঁ হাতি পেসার সুনীল ভালসন। তাঁর মতে, সেবার বিশ্বকাপ জয়ের পর বাণিজ্যিক দরজা খুলে যায় বিসিসিআইয়ের। ‘বিশ্বকাপ জয়ের পরই বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখে বোর্ড। ৮৩ আসলে ৮৩, এর কোনো তুলনা হয় না। খেলায় পরে প্রচুর টাকা এসেছে। কিন্তু তখন আবেগটা অন্য রকম ছিল।কেউ ভাবেনি আমরা চ্যাম্পিয়ন হব।’
লর্ডসে আগে ব্যাট করে ১৮৩ রান তুলেছিল ভারত। তাড়া করতে নেমে ১৪০ রানে গুটিয়ে যায় টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩টি করে উইকেট নেন মদনলাল ও মহিন্দর অমরনাথ। আগের দুটি সংস্করণে মোটেও ভালো ছিল না ভারতের পারফরম্যান্স। দেশটির খ্যাতিমান সংবাদকর্মী আয়াজ মেননের ভাষায়, ‘আগের পারফরম্যান্সের জন্য প্রত্যাশা ছিল শূন্যেের কোটায়। কিন্তু ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বদলে গেল পরিস্থিতি।’
অর্থাৎ কিরন মোরে-কপিলদের প্রথম প্রেমটা অপ্রত্যাশিত ছিল। মেঘ না চাইতেই জল পড়লে তার অনুভূতি তো অন্যরকম হবেই। কাল ভারতের সেই জল পড়ার দিন; ১৯৮৩, লর্ডস, কপিল দেবের হাতে বিশ্বকাপ। এরপর সুনীল গাভাস্কারদের দেখে শচীনদের পথচলার শুরু, তারপর এখন বিরাট কোহলিরা। এসবই ভারতের প্রথম প্রেমের উপস্থাপন।