মোহাম্মদ মিঠুন
নাম | মোহাম্মদ মিঠুন |
জন্ম | মার্চ ০২, ১৯৯১ |
ধরন | ডানহাতি মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান |
অভিষেক | বনাম ভারত, জুন ১৭, ২০১৪ |
বিকেএসপিতে পড়ছেন যখন, তখন থেকেই তাঁর নাম ছড়িয়েছে ‘প্রডিজি’ হিসেবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে থাকতেই যখন এত বড় এক উপাধি পেয়ে যান কেউ, সেই প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গী হয় পাহাড় সমান চাপ। সেই চাপ জয় করে কেউ কেউ হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি, আবার সেই চাপেই কেউ কেউ ভেঙে পড়েন হঠাৎই। মোহাম্মদ মিঠুন ছিলেন দ্বিতীয় দলে।
শুরুটা হয়েছিল উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে, বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এই ভূমিকাতেই মন জিতেছেন সবার। তবে ব্যাটিংটাই ছিল মূল অস্ত্র, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে জানা একজন খেলোয়াড় হিসেবেই তাঁর পরিচয় গোটা দেশে।
মিঠুনের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হলো যখন, বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। তত দিনে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে বেশ জাঁকিয়ে বসেছেন মিঠুন, প্রায়ই দারুণ সব পারফরম্যান্সে তাঁর নাম শোনা যায়। মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও খেলে ফেললেন তিনি।
২০০৮-০৯ মৌসুমে ঘরোয়া লিগে ২৮৫ রান সংগ্রহ করেন মিঠুন। স্ট্রাইকরেট বেশ নজরকাড়া, ১০৫। তবে পরবর্তী পর্যায়ে ঠিক যেতে পারছিলেন না ধারাবাহিকতার অভাবের কারণে। সেই সময়টা আসতে আসতে তিন বছর লেগে গেল।
২০১১-১২ মৌসুমে ঘরোয়া লিগে ৫০.৮১ গড়ে রান করলেন, হাঁকালেন তিনটি সেঞ্চুরিও। ফলাফলও পেলেন হাতেনাতে, বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ক্যারিবিয়ান সফরে সুযোগ পেয়ে গেলেন প্রথমবারের মতো। এরপর আবারও একটু যতি পড়ল তাঁর পারফরম্যান্সে।
২০১৩-১৪ মৌসুমে মাত্র নয় ম্যাচ ৭০৬ রান করে চোখে পড়লেন নির্বাচকদের। এখন পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে সেটাই তাঁর সেরা মৌসুম। ফলাফলও এল এবার। এর আগেও বেশ কয়েকবার ১৫ জনের স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন মিঠুন। বেশ কয়েকবারই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে ওঠানোর, তবে নানা কারণে হয়ে উঠছিল না।
অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে অভিষিক্ত হলেন মিঠুন। সুযোগ মিলল বটে, তবে রানের দেখা মিলল না। প্রথম বলেই কুলাসেকারাকে উইকেট উপহার দিয়ে ফিরলেন সাজঘরে।
দুঃস্বপ্নের টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পরও ওয়ানডে অভিষেকের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। ভারতের বিপক্ষে ওই বছরেরই জুনে অনুষ্ঠিত সিরিজে অভিষেক হয়ে যায় মিঠুনের। সেই ম্যাচে অভিষিক্ত হয়েছিলেন তাসকিন আহমেদও, বল হাতে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। তবে সেই ম্যাচটা হয়তো মনেপ্রাণে ভুলে যেতেই চাইবেন মিঠুন। নিজে ২৬ রানের একটা ইনিংস খেললেও দল যে গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৫৮ রানে!
এরপর আরেকবার যতি পড়ল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে। ২০১৬ সালে আরেকবার ডাক পেলেন দলে, তবে পারফর্ম করতে পারলেন না ঠিক। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সঙ্গে ঠিক যাচ্ছিল না তাঁর ব্যাটিংয়ের ধাঁচ। ফলাফল, আবারও দলের বাইরে।
অবশেষে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেলেন ২০১৮ সালে। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ফিরলেন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে। প্রথম ম্যাচে ১০ করলেও ওই বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচেই চাপের মুখে খেললেন ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস। পরের তিন ম্যাচে পারফরম্যান্স তথৈবচ, তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আরেকবার বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে খেললেন ৬০ রানের আরেকটি ইনিংস। তবে ফুটে উঠল ভালো মানের স্পিনের বিপক্ষে তাঁর দুর্বলতা।
এরই মধ্যে অভিষেক হয়ে গেল সাদা পোশাকেও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে শুরুটা হয়েছিল শূন্য দিয়ে, ঠিক যেমনভাবে শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও। তবে দ্বিতীয় ইনিংসেই ৬৭ রানের একটি ইনিংস খেলে ভরসার প্রতিদান দিলেন মিঠুন। এরপর আবারও সেই অধারাবাহিকতা ঘিরে ধরল তাকে, পরের চার টেস্টে আর নেই কোনো ফিফটি। স্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতাটা দারুণভাবে ভোগাচ্ছিল তাকে।
সেই দুর্বলতাকে পাশ কাটিয়েই ওয়ানডে ফরম্যাটে নিয়মিতই ছোট্ট কিছু অবদান রেখে যাচ্ছিলেন দলের সংগ্রহে, মিডল অর্ডারে ভরসা জোগাচ্ছিলেন। নিউজিল্যান্ড সফরে গোটা দল যখন থরহরিকম্প অবস্থা, সেই পরিস্থিতিতেই টানা দুই ম্যাচে করলেন ফিফটি। আস্থা অর্জন করলেন অধিনায়কের। এরপর উইন্ডিজের বিপক্ষেও খেললেন ৪৩ রানের একটি ইনিংস।
মিঠুন বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো এসেই হারিয়ে যাওয়ার জন্য আসেননি। ধ্রুবতারা হতেই এসেছেন।
[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত]