মোস্তাফিজের বৈচিত্র্য ছাপিয়ে ফার্গুসনের গতির জয়
খেলাটা যখন দিল্লি ক্যাপিটালসের, বাংলাদেশি সমর্থকদের সব আগ্রহ যে মোস্তাফিজুর রহমানকে ঘিরেই ছিল, তা বোধ হয় না বললেও চলে। পুনের এমসিএ স্টেডিয়ামে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে মোস্তাফিজকে রেখেই একাদশ সাজিয়েছিল ঋষভ পন্তের দিল্লি। দিল্লির হয়ে অভিষেক ম্যাচে দলের সেরা বোলারও মোস্তাফিজ।
পাওয়ার–প্লেতে ১ উইকেট, ডেথ ওভারে ২—নতুন দলের হয়ে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে এমন স্বপ্নময় শুরুর ছবিই হয়তো এঁকেছিলেন মোস্তাফিজ। ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে মোস্তাফিজের শিকার ৩ উইকেট। মোস্তাফিজের বৈচিত্র্যময় বোলিং অবশ্য স্বচ্ছন্দেই সামলেছেন গুজরাটের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শুবমান গিল। ৪৬ বলে খেলেছেন ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস, যাতে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা। তাতে গুজরাটও পেয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৭১ রানের লড়াকু পুঁজি। গুজরাটের ১৪ রানের জয়ের নায়ক অবশ্য অন্য একজন।
গুজরাটের ফাস্ট বোলার লকি ফার্গুসন এই রানকেই জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণ করেছেন। এই কিউই ফাস্ট বোলারের সঙ্গে গুজরাটের বোলিং আক্রমণে রশিদ খান, মোহাম্মদ শামির মতো তারকারা। দিল্লির ব্যাটসম্যানদের জন্য পরীক্ষাটা তাই কঠিনই ছিল। সেই পরীক্ষায় তাঁরা পাস করতে পারেননি। বিশেষ করে ফার্গুসনের বাউন্সের সামনে রীতিমতো অসহায় মনে হয়েছে দিল্লির ব্যাটসম্যানদের। ৪ উইকেট নিয়েছেন কিউই ফাস্ট বোলার। উইকেট পেয়েছেন শামি, রশিদ ও হার্দিক পান্ডিয়াও।
দিল্লির ব্যাটিংয়ে প্রথম ধাক্কাটা দেন গুজরাটের অধিনায়ক পান্ডিয়া। উদ্বোধনে নামা টিম সাইফার্টকে বাউন্সারে বোকা বানিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান তিনি। পৃথ্বী শ ও মান্দিপ সিং একটা জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে পুরো সফল হতে দেননি ফার্গুসনই।
ইনিংসের পঞ্চম ওভার দুটি গতিময় বাউন্সারে আউট হন দুজনই। পন্ত ও ললিত যাদব ফাটল ধরা দেয়াল জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মাঝের ওভারে তাঁদের খেলতে হচ্ছিল রশিদ খানের লেগ স্পিন। যাঁর বিপক্ষে দ্রুত রান তোলা কতটা কঠিন, এটা এখন আর কারও অজানা নয়।
ওদিকে আস্কিং রেটও তরতরিয়ে বাড়ছে। এই চাপের মুখেই যাদব রানআউট ২২ বলে ২৫ রান করে। অবশ্য পন্ত যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, দিল্লিরও জয়ের আশা ছিল। এবারও গুজরাটের ত্রাতা হয়ে আসেন ফার্গুসন। সেই ব্যাক অফ দ্য লেংথ, সেই গতিময় বাউন্সার—১৫তম ওভারের প্রথম বলে যেটির শিকার পন্তও (২৯ বলে ৪৩)। একই ওভারে ফার্গুসনের স্লোয়ার বলে আউট অক্ষর প্যাটেল। দিল্লির পরাজয় তখনই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৮তম ওভারে মোহাম্মদ শামি পরপর দুই বলে দুটি উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালে উবে যায় শেষ সংশয়টুকুও। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৫৭ রানে থেমে যায় দিল্লি।
ফার্গুসন যদি গুজরাটের বোলিংয়ের নায়ক হয়ে থাকেন, দিল্লির নায়ক সংশয়াতীতভাবে মোস্তাফিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মোস্তাফিজের গুড লেংথের বলটি স্কুপ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন ম্যাথু ওয়েড। মোস্তাফিজের পরের দুটি উইকেট আসে ইনিংসের শেষ ওভারে। ১৫ বলে ২০ রান করে চোখ রাঙানি দিতে থাকা রাহুল তেওয়াতিয়াকে কাভারে থাকা শার্দূল ঠাকুরের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। তৃতীয় উইকেটের জন্যও মোস্তাফিজকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। অভিনব মনহরের উইকেটটি মোস্তাফিজের ট্রেডমার্ক সেই কাটারে।
ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হিসেবে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু লকি ফার্গুসন যে রাতটাকে তাঁর করে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমেছিলেন!