মোস্তাফিজকে কি আইপিএলে আর দেখা যাবে
ঢাকা টেস্টের জন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে কি ডেকে পাঠাবে বাংলাদেশ দল? আইপিএল খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি পেয়েছেন বাঁহাতি পেসার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজেও থাকবেন না বলে জানেন সবাই। কিন্তু হঠাৎ পেসার সংকটে পড়ে তাঁর কথা মনে হয়েছিল দলের। এর মধ্যে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মোস্তাফিজের নিজেরও মনে হতে পারে, দেশে ফিরে এলে খারাপ হয় না।
আজ দিল্লি ক্যাপিটালস ও রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচেও দর্শক মোস্তাফিজ। এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ বসে রইলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে যাওয়ার পর কোয়ারেন্টিনের কারণে দিল্লি ক্যাপিটালসের প্রথম ম্যাচে দেখা যায়নি তাঁকে। এরপর নেমেই গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে ৩ উইকেট। মোস্তাফিজকে ছাড়া দিল্লি ক্যাপিটালস একাদশের কথা চিন্তাও করা যায়নি এত দিন। সেই বোলার কিনা টানা তিন ম্যাচ বসে আছেন। প্রশ্ন জাগছে, এবারের আইপিএলে মোস্তাফিজকে আর দেখা যাবে কি না।
প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট পেয়েছিলেন, গত ২৮ এপ্রিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষেও মাত্র ১৮ রানে পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। তবু ৮ ম্যাচে মোস্তাফিজের অর্জন মাত্র ৮ উইকেট। অবশ্য আইপিএলে মোস্তাফিজ ২০১৬ সালের পর কখনোই ম্যাচপ্রতি ১ উইকেটের বেশি পাননি। ২০১৬ সালেও সবাইকে চমকে দেওয়ার বছরেও ১৬ ম্যাচে তাঁর ১৭ উইকেট ছিল।
দুটি দিক থেকে ২০১৬ সালের পর এবারই সেরা বোলিং মোস্তাফিজের। ৩০.৫০ গড়ে রান নিয়েছেন, ওভারপ্রতি রান ৭.৬৩। উইকেট পেয়েছেন ২৪ বল পরপর। ২০১৬ সালে তাঁর গড়, স্ট্রাইকরেট ও রানরেট ছিল যথাক্রমে ২৪.৭৬, ২১.৫২ ও ৬.৯০। গত তিন আইপিএলে ওভারপ্রতি ৮–এর বেশি রান দিয়েছেন মোস্তাফিজ। গড় ছিল ৩১–এর বেশি। ২০২১ আইপিএলে রাজস্থানের হয়ে বোলিং আলোচনায় তুলে এনেছিল মোস্তাফিজকে। সেবারও ১৪ ম্যাচে ১৪ উইকেট পাওয়া মোস্তাফিজের গড়, রানরেট এবারের চেয়ে খারাপ (৩১.১৪, ৮.৪১)।
কিন্তু নিকট অতীতের চেয়ে ভালো করেছেন—এ যুক্তিতেও দিল্লি একাদশে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি মোস্তাফিজ। এর পেছনে আইপিএলের দলগুলোর নতুন চিন্তাধারা ভূমিকা রেখেছে। এবারের আইপিএলে প্রতিটি দল ভারতীয় তরুণ পেসারদের ওপর জোর দিয়েছে। অনেক দলেই এখন দেশি বাঁহাতি পেসার আছে। শুধু বাঁহাতি পেসার খেলাতে হবে, এই যুক্তিতে যেন কোনো বিদেশি কোটা পূরণ না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা।
তাই ২ কোটি রুপি দিয়ে মোস্তাফিজকে কেনা দিল্লি আরও দুই স্থানীয় বাঁহাতি পেসার কিনে রেখেছিল। ২৫ বছর বয়সী খলিল আহমেদকে ৫ কোটি ২৫ লাখ রুপি দিয়ে কেনার পর চেতন সাকারিয়াকেও কিনেছে ৪ কোটি ২০ লাখ রুপিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার আনরিখ নর্কিয়া চোটে থাকায় খলিল ও মোস্তাফিজ বেশ কিছু ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছেন। কিন্তু নর্কিয়া চোট কাটিয়ে ফেরার পরই ঝামেলায় পড়েছে দলটি। বিদেশি কোটায় ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের জায়গা নিশ্চিত। মিডল অর্ডারে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে রোভমান পাওয়েলও জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। ফলে শুধু একটা জায়গাই খালি ছিল। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারা নর্কিয়াই জায়গা পেয়েছেন।
এরপর মোস্তাফিজের দলে জায়গা পেতে হলে অন্য কাউকে ব্যর্থ হতে হতো। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ব্যর্থ হয়েছিলেন সবাই। কিন্তু যাঁর ব্যর্থ হওয়া মোস্তাফিজের পক্ষে যেত, তিনি ঠিকই সফল। প্রতিপক্ষ দুই শর বেশি রান তুলেছে, এমন ম্যাচেও ২৮ রান দিয়ে দুই উইকেট পেয়েছেন বাঁহাতি পেসার খলিল। এবারের আইপিএলে ১৬ উইকেট পাওয়া খলিল আজ নেই। কিন্তু তাতেও মোস্তাফিজের জায়গা মেলেনি।
সে জায়গায় খেলার জন্য তো সাকারিয়া আছেনই। মোস্তাফিজের মতোই যার মূল অস্ত্র স্লোয়ার ও কাটার। এবার মাত্র তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা সাকারিয়াও আজ সফল। ২৩ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।
১১ ম্যাচে মাত্র ১০ পয়েন্ট দিল্লির। আজ যদি রাজস্থানের কাছে হেরে বসে দলটি, তাহলে প্লে-অফে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হয়ে যাবে তাদের। সে ক্ষেত্রে পরের দুই ম্যাচেও হয়তো মোস্তাফিজকে আর দেখা যাবে না। আইপিএল থেকে আগেভাগেই ছুটি মিলে যাচ্ছে তাঁর।