মেসিকে ছাড়িয়ে জাভিকে ভরসা দিচ্ছেন গাভি

গাভিকে ঘিরে বার্সা তারকাদের উল্লাসছবি : রয়টার্স

ঠিক আগের লিগ ম্যাচেই ওসাসুনার বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ২-২ গোলে ড্র করেছিল বার্সেলোনা। একই অবস্থা বোকা জুনিয়র্সের বিপক্ষে ডিয়েগো ম্যারাডোনা কাপ প্রীতি ম্যাচেও। সেখানে এগিয়ে যাওয়ার পরও গোল খেয়ে বসে বার্সেলোনা।

টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচটিতেও শেষ পর্যন্ত হারই জোটে কপালে। আগে এগিয়ে গিয়েও পরে ড্র করা বা হেরে যাওয়ার এক বাজে অভ্যাস গড়ে তুলেছিল যেন বার্সা।

গতকালও তেমন কিছুই হতে যাচ্ছিল বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল বার্সেলোনা সমর্থকদের। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি, তরুণ মিডফিল্ডার গাভি দলকে হারতে তো দেনইনি, এমনকি ড্রর ফাঁদেও আটকে থাকতে দেননি। একটি গোল করেছেন, আরেকটি গোল করিয়েছেন নিকোলাস গঞ্জালেসকে দিয়ে। তাঁর এমন নৈপুণ্যেই এলচেকে ৩-২ গোলে হারিয়ে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বার্সেলোনা। আর গাভির নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়েছে গোটা ক্যাম্প ন্যু। গাভি, গাভি চিৎকারে কান পাতা দায় হয়ে যাচ্ছিল যেন!


আর হবে না-ই বা কেন? ১৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার দুর্দান্ত তো খেলেছেনই, বার্সার জার্সি গায়ে নিজের প্রথম গোল করার পথে এক তালিকায় পেছনে ফেলেছেন সাবেক অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে। বার্সার হয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার তালিকায় মেসিকে সরিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন গাভি।

গাভিকে আটকাতেই পারছিলেন না এলচের খেলোয়াড়েরা
ছবি : রয়টার্স

বার্সার হয়ে মেসি যখন নিজের প্রথম গোল করেন, তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৩১ দিন। কাল গাভি বার্সার দ্বিতীয় গোলটি করেছেন ১৭ বছর ১৩৫ দিন বয়সে। ১৬ বছর ৩০৪ দিন বয়সে ওসাসুনার বিপক্ষে নিজের প্রথম গোল করা আনসু ফাতি এ তালিকায় আছেন সবার ওপরে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন সাবেক স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড বোয়ান কিরকিচ।


গোলটা হয়েছিলও দেখার মতো। ক্যাম্প ন্যু-র অনেককেই হয়তো চোখ কচলে দেখতে হয়েছে, মেসি বার্সেলোনার জার্সি গায়ে খেলা শুরু করলেন না তো আবার! মাঝমাঠ থেকে বল ধরে চকিতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে এলচের ডি বক্সের দিকে দৌড়াতে থাকেন গাভি। পথে একে একে বাধা আসতে থাকে, কিন্তু গাভিকে আটকায় সে সাধ্য কার! পরে বক্সের একটু বাইরে থেকে ডান পায়ের মাপা শটে পোস্টের নিচের কোনা বরাবর গোল করেন গাভি। আর তাতেই ছাড়িয়ে যান মেসিকে।

এই গোলেই মেসিকে ছাড়িয়েছেন গাভি
ছবি : রয়টার্স

কোচ জাভিও গাভির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জাভি নিজে কখনোই খেলোয়াড়ি জীবনের একদম প্রথম থেকে আলো ছড়াতে শুরু করেননি। সময় যত গড়িয়েছে, জাভি ততই দুর্দান্ত খেলতে থেকেছেন। গাভির সঙ্গে নিজের এই একটা জায়গাতেই পার্থক্য দেখছেন বার্সেলোনার কোচ, ‘গাভি অসাধারণ খেলেছে। ১৭ বছর বয়স অনুযায়ী ওর খেলা চমক জাগায়। আমার বয়স যখন ১৭ ছিল, সবকিছুই অনেক কঠিন বলে মনে হতো। বার্সেলোনা দুর্দান্ত এক প্রজন্মের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। যেখানে গাভি আছে, নিকো আছে, আছে আবদে ও আরাউহো।’


ফেরান জুতগ্লার গোলে ১৬ মিনিটেই এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। কিছুদিন আগেই বোকা জুনিয়র্সের বিপক্ষেও গোল পেয়েছিলেন এই তরুণ। তা দেখেই কি না, আবদে এজালজুলি আর উসমান দেম্বেলের সঙ্গে জুতগ্লাকেও একাদশে নামিয়ে দিলেন জাভি। ওসাসুনার বিপক্ষে গত সপ্তাহে অভিষেক হয়ে গেলেও মূল একাদশের অংশ হিসেবে গত রাতেই মাঠে নেমেছিলেন জুতগ্লা। কোচের ভরসার প্রতিদান দিতে সময় নেননি তরুণ ফরোয়ার্ড। দেম্বেলের কর্নারে মাথে ছুঁইয়ে এগিয়ে দেন বার্সেলোনাকে। এর তিন মিনিট পরেই গাভির অবিশ্বাস্য গোল।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের দুই মিনিটে দুই গোল করে বার্সেলোনার মনে আবারও ভয় ঢুকিয়ে দেয় এলচে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লুকাস বোয়ের কাছ থেকে বল নিয়ে মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে এসে গোল করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হোসে মরেন্তে। পরের মিনিটে এই মরেন্তের ক্রসেই মাথা ছুঁইয়ে এলচেকে সমতায় ফেরান স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পেরে মিয়া। ৮৫ মিনিটে দলকে জেতাতে আবারও এগিয়ে আসেন গাভি। তাঁর পাস থেকে ৮৫ মিনিটে গোল করে স্কোরলাইন ৩-২ করে ফেলেন নিকো গঞ্জালেস। আর তাতেই নিশ্চিত হয় তিন পয়েন্ট।


আর গাভিও বুঝিয়ে দেন, মেসি-পরবর্তী বার্সা যুগেও সমর্থকদের আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে!