মুশফিক–লিটন অপরাজিত, বাংলাদেশ দিন শেষে ২৭৭

ষষ্ঠ উইকেটে লিটন–মুশফিকের ২৫৩ রানের জুটিছবি: শামসুল হক

এই ব্যাটিংকে কী বলা যায়! ধ্রুপদি ব্যাটিং? রূপকথার গল্পেই উল্লেখ থাকে এমন বীরত্বের। ঢাকা টেস্টের সকালটা ছিল বিপর্যয়ের। টসে জিতে ব্যাটিং করতে নামা দল দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারাল। এরপর দ্বিতীয় ওভার শেষ হতে না হতে নেই আরেকজন। সেখানে থামলেও হতো। দলের সংগ্রহ ২৫ পেরোতে না পেরোতে নেই গোটা টপঅর্ডার। ব্যাটিংয়ের আর কী বাকি থাকে!

বাকি ছিল। মাহমুদুল হাসান, তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক আর সাকিব আল হাসানদের ব্যর্থতার দিনে সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস। সকালে স্বপ্নের মতো শুরু করা লঙ্কানরা দুজনের ব্যাটিংয়ে দুঃস্বপ্ন দেখে দিনটা শেষ করেছে।

সকালে কাসুন রাজিতা আর আসিতা ফার্নান্দোর সুইং, গতির সামনে অসহায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের উল্টোচিত্রটাই দেখা গেল মুশফিক আর লিটনের ব্যাটে। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এ দুজন টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ড ২৫৩ রানের জুটি গড়ে দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন। দলের সংগ্রহটাও ২৪ রানে ৫ উইকেট থেকে, ওই ৫ উইকেটেই ২৭৭। টেস্টে এত কম রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মুশফিক–লিটনের এ জুটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি, যেকোনো উইকেটে।

এত কম রানে ৫ উইকেট হারানোর পর সেরা জুটি লিটন–মুশফিকের
ছবি: শামসুল হক

মুশফিক আগাগোড়াই খেলেছেন আস্থার সঙ্গে। লিটনের ব্যাটে ছিল শিল্পীর তুলির ছোঁয়া। সেই নান্দনিক ব্যাটিং। চট্টগ্রাম টেস্টে এ দুজন ছিলেন দুর্দান্ত। মুশফিকুর রহিম শতরান পেলেও লিটন মাত্র ১২ রানের জন্য সেই সুযোগ হারিয়েছিলেন। আজ ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মুশফিক আর লিটন চট্টগ্রামের ফর্মই টেনে আনলেন। শুরু করলেন সেখান থেকেই, যেখানে চট্টগ্রামে শেষ করেছিলেন। আর সেটি করলেন কী দারুণ প্রয়োজনের সময়, কী দুর্দান্ত কেতায়!

২৪ রানে ৫ উইকেট থেকে দলের সংগ্রহ লিটন–মুশফিক নিয়ে গেছেন ২৭৭–এ
ছবি: শামসুল হক

২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো দল ধ্বংসস্তূপই। এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে লড়াই করাটা সহজ কোনো ব্যাপার নয়। মুশফিক শুরু থেকেই খেলেছেন আস্থার সঙ্গে। তবে লিটন ক্রিজে এসেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিক সঙ্গী লিটনের মধ্যে কথাবার্তা বলে সেই আত্মবিশ্বাস এনে দেন। এরপর বাকিটা ইতিহাসই। দুজন আর পেছনে ফিরে তাকাননি। মিরপুরে জন্ম দিয়েছেন দারুণ এক রূপকথার। ৪৭ রানে যদিও ক্যাচ তুলেছিলেন। তবে সেটি ধরতে পারেননি শ্রীলঙ্কান ফিল্ডাররা। মুশফিকের আগেই ফিফটি পেয়েছেন লিটন, এর একটু পরেই মুশফিক।

দুই ব্যাটসম্যান উইকেটে জমে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কান বোলিংকে আর একটা বারের জন্যও হুমকি মনে হয়নি। স্পিনারদের খেলেছেন আরাম করেই। পেসারদের মেরেছেন দারুণ সব পুল শট। শতকের পথে দুজন প্রায় এক সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। দুজনেই ছিলেন সত্তরের ঘরে। কিন্তু প্রবীণ জয়াবিক্রমার একটি ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মেরে মুশফিককে পেছনে ফেলে অনেকটা পথ এগিয়ে যান লিটন। ওভার থ্রো থেকে বাউন্ডারি পেয়ে পৌঁছে যান শতরানে। এটি লিটনের তৃতীয় টেস্ট শতক। ১৪৯ বলে তিনি পৌঁছান তিন অঙ্কে। এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে শতক পেতে গিয়েও পাওয়া হয়নি তাঁর আউট হয়েছিলেন ৯৪ রানে। আজ চট্টগ্রামেই আগের টেস্টে ৮৮ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি।

মুশফিক শতক পেয়েছেন রমেশ মেন্ডিসের বলে পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিয়ে। আগের টেস্টেই ২৭০ বলে নিজের সবচেয়ে ধীর গতির শতকটি করেছিলেন মুশফিক। আজকের ইনিংসটিও দারুণ ধৈর্যশীল। উইকেট আগলে রেখে পাল্টা আক্রমণের মিশেলে করা এই শতকটি মুশফিক পেয়েছেন ২১৮ বলে। টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম শতরান মুশফিকের। ক্যারিয়ারে এই প্রথম টানা দুই ইনিংসে শতরান করলেন।