মুরালির ‘৮০০’ সিনেমা নিয়ে এবার হত্যার হুমকি পেলেন এক পরিচালক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগে এমন মানসিকতার কোনো প্রতিকার নেই? কোনো কিছুর সঙ্গে মত মিলল না অমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া হয় নানা রকম হুমকি। ধর্ষণ, জীবননাশের হুমকি এখন যেন ডাল-ভাত।
খেলাধুলার জগতে এমন নজির কম নেই। খেলোয়াড়দের কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের তো কত কিছু করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কোনো খেলোয়াড়ের জীবনী নিয়ে সিনেমা করা হবে, সেই খেলোয়াড়কে পছন্দ কিংবা অপছন্দ হওয়ায় হুমকি পাচ্ছেন সিনেমা-সংশ্লিষ্টরা।
বোঝাই যাচ্ছে, কোন সিনেমার কথা বলা হচ্ছে—‘৮০০’। ক্রিকেটে এ সংখ্যাটা এক ভীষণ ‘পর্বত’। টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারের মাইলফলক। ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন মুত্তিয়া মুরালিধরন। লঙ্কান কিংবদন্তির এই কীর্তি কেউ কখনো ভাঙতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
মুরালির জীবনী নিয়েই বানানো হচ্ছে সিনেমা। এই সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল ভারতের তামিল তারকা বিজয় সেথুপাতির। তাঁকে মুরালির চরিত্রে অভিনয় করতে মানা করার পর থেকেই জীবননাশের হুমকি পাচ্ছেন তামিল খ্যাতনামা পরিচালক সেনু রামস্বামী।
খ্যাতিমান এ পরিচালক টুইট করে জানিয়েছেন, ‘আমার জীবন এখন হুমকির মুখে। মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়ের সাহায্য করা উচিত। জরুরি।’ রামস্বামী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে অনেকের মতো আমিও অভিনেতা বিজয় সেথুপাতিকে “৮০০” সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করি। তার মেয়ের মতো আমিও হুমকি পাচ্ছি। প্রকাশের অযোগ্য ভাষা ব্যবহার করছে তারা। হোয়াটসঅ্যাপও খুলতে পারছি না।’
সেথুপাতি এ সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হওয়ার পর তাঁর মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে স্বয়ং মুরালিধরনের অনুরোধেই সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ান সেথুপাতি।
আইপিএলে ভালো করতে না পারায় কিছুদিন আগে চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ঠিক একই পৈশাচিক মানসিকতার মানুষের মুখোমুখি হতে হয়। ধোনির মেয়ে বিভাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আবারও মাথাচাড়া উঠল এমন হুমকির অভিযোগ।
প্রশ্ন উঠতে পারে ‘৮০০’ সিনেমার সঙ্গে এসব হুমকির কি যোগসূত্র? শ্রীলঙ্কান তামিলদের ওপর সে দেশের সরকারের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ভারতের তামিলনাড়ুর মতো তামিল অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর মানুষও অনেক খ্যাপা। মুরালিধরন জাতিগতভাবে তামিল।
কিন্তু কিংবদন্তি এ অফ স্পিনার তামিলদের চোখে সব সময়ই বিশ্বাসঘাতক। তামিলদের অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের প্রতিবাদ কখনো করেননি মুরালি বরং শ্রীলঙ্কা সরকারকে সমর্থন করেছেন। ২০০৯ সালে তামিলদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও মুরালির দেওয়া বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক। অভিযোগ আছে, মুরালি নাকি তখন বলেছেন, তামিলদের মৃত্যুতে তিনি খুশি!
মুরালিধরন অবশ্য সব সময়ই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র বেরোচ্ছে, সেটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তো সমালোচনা শুরু হয়েছিল চারদিকে। গত কিছুদিনে আরও বেড়ে গেলে মুরালি নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডন করেন।
২০০৯ সালের বিবৃতি নিয়ে বিতর্কের জবাবে বলেছেন, ‘২০০৯ সালে বলেছিলাম (যুদ্ধ শেষ হওয়ার) দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। কারণ যুদ্ধের কারণে দুই পক্ষেই কত জীবন শেষ হয়ে গেছে, সেটি আমার মাথায় ছিল। এই মন্তব্যটাকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে, ‘‘তামিলদের যে দিনে খুন করা হয়েছে, সেটি আমার জীবনের সুখের দিন।’’ অথচ আমি কখনোই নিরীহদের খুন করার পক্ষে নই, কখনো থাকবও না।’
রামস্বামী জানিয়েছেন, তিনি কাউকে সন্দেহ করছেন না। তবে চেন্নাই পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।