মুমিনুল ‘ফর্ম হারায়নি, স্রেফ রান পাচ্ছে না’
৮৮, ১৩*, ০, ৩৭, ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯— টেস্টে মুমিনুল হকের শেষ ১০ ইনিংসের স্কোর। ৮৮ রানের ইনিংসটি গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে।
অবিস্মরণীয় সেই জয়ের পর বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের ব্যাটে হাসি উধাও। মাঝে আরও চারটি টেস্ট চলে গেছে কিন্তু চওড়া হয়ে ওঠেনি মুমিনুলের ব্যাট। আজও তা–ই; ৯ রানেই আউট।
মুমিনুল যতই বলুন, নিজের ব্যাটিং নিয়ে তিনি মোটেও ভাবছেন না, স্কোরবোর্ডে তাকিয়ে সমর্থকদের মনে ‘কু’ ডাক যে থামছে না!
টেস্ট ক্রিকেটে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। এ সংস্করণে মুমিনুলের সর্বশেষ অর্ধশতকের পর মাঝে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। ব্যস্ততার এ সময়ে তিন-চার মাস আগে পাওয়া শতকের সুবাস কে মনে রাখে!
আধুনিক ক্রিকেটে যেহেতু ব্যাটসম্যানদের কাছে ধারাবাহিকতার প্রত্যাশা বেড়েছে, তাই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর সর্বশেষ কয়েক ইনিংসে মুমিনুলের রান–খরাই বেশি বিঁধবে সবার চোখে। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ শতক পাওয়া ব্যাটসম্যানের এই হাল!
মুমিনুল অবশ্য তা স্বীকার করতে নারাজ। চট্টগ্রাম টেস্টে শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি আসলে আমাকে নিয়ে ভাবি না। আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত নই।’ অথচ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পর ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ করা মুমিনুল এরপর টানা পাঁচ ইনিংসে দুই অঙ্কের দেখাও পাননি।
আজ মিরপুর টেস্টে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সকালের সেশনে বিপর্যয় এড়াতে পারেননি মুমিনুল। টানা দুই ওভারে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর নামেন ব্যাটিংয়ে। মাঝে তিন ওভার পরই লঙ্কান পেসার আসিতা ফার্নান্দোর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুমিনুল। বলটা খেলবেন না ছাড়বেন—এ নিয়ে দ্বিধায় ভোগার খেসারত দেন তিনি। দেখে মনে হয়েছে, নিজের ব্যাটিংয়ের ছন্দ হারিয়ে খুঁজছেন এই ব্যাটসম্যান।
মুমিনুলের এই বাজে সময় নিয়ে চারপাশে যখন ফিসফাস-গুঞ্জন এবং কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনাও হচ্ছে, তখন এ বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছে। প্রথম দিনের খেলা শেষে আজ সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গোকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়—‘মুমিনুল বলেছেন তিনি নিজের ফর্ম নিয়ে ভাবছেন না। তিনি কেন চিন্তিত নন?’
ডমিঙ্গোর ব্যাখ্যা, ‘কারণ, তার রেকর্ড অসাধারণ। বাংলাদেশ ক্রিকেটে টেস্টে তার শতকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেটাও ৫১ টেস্টে। মুশফিক নবম শতক পেয়েছে সম্ভবত ৮২তম টেস্টে। অর্থাৎ মুমিনুল জানে কীভাবে রান করতে হয়। সব খেলোয়াড়েরই বাজে সময় যায়। কোচ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো, এ সময়টা যেন তারা কাটিয়ে উঠতে পারে, আত্মবিশ্বাসটা যেন থাকে।’ ডমিঙ্গোকে এরপর সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি মনে করেন সে (মুমিনুল) ফর্ম হারিয়েছেন?
বাংলাদেশ দলের এই কোচের উত্তর, ‘আমি মনে করি না সে ফর্ম হারিয়েছে। সে রান–খরায় ভুগছে। আজ সকালেও নেটে তাকে দারুণ লেগেছে। সে স্রেফ রান পাচ্ছে না, ফর্ম হারায়নি। চার টেস্ট আগেই সে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮০-র আশপাশে অবিশ্বাস্য একটা ইনিংস খেলেছে। ওই ইনিংসটাই জয়ের ভিত ছিল। সেটা কিন্তু বেশি দিন আগের কথা নয়। সব খেলোয়াড় কিন্তু প্রতিটি ম্যাচেই রান পাবে না। আমার মনে হয় সে দ্রুতই বড় একটা ইনিংস খেলবে।’
সত্যি কথা। মুমিনুলের কাছে বড় একটা ইনিংস পাওনা হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তিনি নিজেকে নিয়ে যেহেতু ভাবছেন না, তাই ইনিংসটির দেখা পেতে আর হয়তো তেমন দেরি হবে না। কে জানে, এই টেস্টেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে হয়তো!