মিচেল স্টার্ক-অ্যালিসা হিলির জুটি তো সেই ৯ বছর বয়স থেকে
পরের দিনই ভারতের বিমান ধরার কথা ছিল মিচেল স্টার্কের। টেস্ট সিরিজ খেলতে ক্যারিয়ারের প্রথম ভারত সফর। আগের রাতে অনেকক্ষণ একটা রেস্তোরাঁয় বসে গল্প করছিলেন দুজন। স্টার্ক ও তাঁর বান্ধবী। বলি বলি করেও যে কথাটা এত দিন বলতে পারেননি, স্টার্কের মনে হলো, এটাই কথাটা বলে দেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
বান্ধবী মোটেও বিস্মিত হননি। এত বছরের পরিচয়, এমন বন্ধুত্ব, সম্পর্কটা যে ওদিকেই যাচ্ছে, সেটা তো তিনিও অনুভব করছিলেন। স্টার্কের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটা কখন আসে, সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন আসলে। ২০১৩ ফেব্রুয়ারির এক রাতে মেলবোর্নের এক রেস্তোরাঁয় বসে যখন শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাবটা পেলেন, অ্যালিসা হিলির ‘না’ বলার কোনো কারণই ছিল না।
স্টার্ক তখন দেড় শ কিলোমিটার গতির বোলিং দিয়ে বিশ্বজয়ের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছেন। শুরুতে অ্যালিসার পরিচয় ছিল শুধু অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ইয়ান হিলির ভাতিজি, চাচার মতোই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। তবে সেই পরিচয় ছাপিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে খুব বেশি সময় নেননি অ্যালিসা। জুটি হিসেবে স্টার্ক-হিলিকে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে দেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে তাঁদের প্রেমের শুরুটা হয়তো অনেকেরই অজানা।
সিডনির নর্দান ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বয়সভিত্তিক যৌথ দলে একসঙ্গে খেলতেন দুজন। স্টার্ক-হিলি দুজনেরই তখন ৯ বছর। মজার ব্যাপার, দুজনই তখন উইকেটকিপার। অনূর্ধ্ব-১০ দলে জায়গা পেতে একজনের সঙ্গে অন্যজনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই দলে খেলে গেছেন দুজন। কখনো স্টার্ক, কখনো হিলি। পরে স্টার্ক কিপিং ছেড়ে ফাস্ট বোলিংয়ে মনোযোগী হয়েছেন। হিলি চলে গেছেন মেয়েদের দলে, কিপার–ব্যাটসম্যান হিসেবে। হিলিই পরে একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একজনের প্রতি অন্যজনের ভালো লাগার শুরুটা হয়তো সেই কিশোরবেলাতেই। দুজনেই সেটা টের পেয়েছেন পরে। পথ আলাদা হয়ে যাওয়ার পরও তাই দুজনের যোগাযোগ ছিল, হতো দেখা-সাক্ষাৎও।
২০১৫ বিশ্বকাপে স্টার্ক সেরা খেলোয়াড় হওয়ার কিছুদিন পর যখন স্টার্ক-হিলির বাগ্দানের কথা জানা গেল, সেই খবরটা খুব একটা চমক হয়ে আসেনি। কারণ, এর আগেই তাঁদের প্রেম নিয়ে নানা গুঞ্জন এসেছে সংবাদমাধ্যমে। পরের বছর এপ্রিলে তো দুজন শপথ নিয়েই একে অন্যের হয়ে গেলেন। তাতে একটা নতুন কীর্তিও হয়ে গেল।
ক্রিকেট মাঠে দুজন তো আলাদা আলাদাভাবে কত রেকর্ডই গড়েছেন। তবে ওই কীর্তিটা বিবাহিত জুটি হিসেবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন, ইতিহাসে এমন জুটি এর আগে ছিল দুটি। যাটের দশকে ইংল্যান্ডের রজার ও রুথ প্রিডক্স আর আশি-নব্বইয়ের দশকে শ্রীলঙ্কার গাই ও রসাঞ্জলি ডি আলভিস। স্টার্ক-হিলি সেই তালিকায় নাম লেখালেন তৃতীয় জুটি হিসেবে।
তবে অন্য দুই জুটির কারও ক্যারিয়ারই স্টার্ক-হিলির মতো বর্ণাঢ্য নয়। স্টার্ক নিজের সময়ের সেরা ও দ্রুতগতির বোলারদের একজন। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তাঁরই। আর অ্যালিসাকে তো এখন মেয়েদের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বলা যায়। পাঁচটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন, এর মধ্যে ২০১৮ সালে হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট–সেরা, ২০২০ সালে ফাইনালের সেরা। ২০১৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলে থাকলেও কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। তবে সেই আক্ষেপ পুরোপুরি ঘুচিয়েছেন আজ আরও একটা বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ বলে ১৭০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়ে। ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি। অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে, মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ৫০৯ রান করে এবার টুর্নামেন্টে–সেরার নামও অ্যালিসা হিলি।
আইপিএলে খেলতে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে এবং তাঁর খেলা দেখতে মিচেল স্টার্ক ছুটে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রাইস্টচার্চে। আজ হিলির রেকর্ড গড়া শতকের পর হ্যাগলি ওভালে সবচেয়ে আনন্দিত মানুষটির নাম বলতে পারার জন্য কোনো পুরস্কার নেই।