মাহমুদউল্লাহ

নাম

মোহাম্মদ মাহমুদউল্লাহ

জন্ম

ফেব্রুয়ারি ০৪, ১৯৮৬

ধরন

অলরাউন্ডার

অভিষেক

বনাম শ্রীলঙ্কা, জুলাই ২৫, ২০০৭

দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। ব্যাটিং লাইনআপে ধস নেমেছে, সামাল দেবেন তিনি। দল সংকটপূর্ণ অবস্থায়, ম্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে হাত থেকে, ফিনিশিংয়ে জাদুর কাঠি বুলিয়ে দেবেন তিনিই। বোলিংয়ে যথাযথ ব্রেকথ্রু আসছে না, হঠাৎ বল হাতে ত্রাণকর্তা হয়ে আসবেন তিনি। ম্যাচের যেকোনো মুহূর্তে তাঁর চেয়ে প্রশস্ত কাঁধ পাওয়া মুশকিল। মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে তাই মাহমুদউল্লাহ এমন একজন, যাঁর ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।

তাঁর ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকালে তাতে হিজিবিজি কিছু লাইন দেখতে পাওয়া যেতে পারে। এত দ্রুত ওঠানামা করেছে তাঁর ক্যারিয়ার গ্রাফ, খ্যাতির সঙ্গে ঠিক সখ্য গড়ে তুলতে পারেননি। যখনই দারুণ কিছু করেছেন, ঝাঁক বেঁধে এসেছে প্রশংসাবাক্য। আবার সামান্য ব্যর্থতাতেই উঠেছে সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন, বারবারই নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে, হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডবদের একজন।

বরাবরই অন্যদের থেকে একদম আলাদা। বাইরে থেকে ইতস্তত মনে হওয়া মানুষটাই পরিচিত বৃত্তে হয়ে ওঠেন দারুণ স্বতঃস্ফূর্ত। আবার সেই তিনিই সংবাদ সম্মেলনে অনেকটাই নিষ্প্রভ, গুটিয়ে থাকা একজন মানুষ। গ্ল্যামারও হয়তো তাই তাকে ছুঁতে পারেনি, নিজের কাজটা খুব ভালোভাবেই করতে জানলেও মাটি থেকে পা সরেনি তাঁর। সরবে কী করে, আকাশ আর মাটির তফাৎটুকু যে তাঁর খুব ভালো করেই জানা!

২০০৫ সালে ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলতে শুরু করেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে খুব দ্রুতই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ‘এ’ দলেও। জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষেও দারুণ পারফরম্যান্সের কল্যাণে নজরে পড়লেন নির্বাচকদের, ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকও হয়ে যায়। প্রথম ম্যাচেই ৩৬ রান ও ২ উইকেট নিয়ে নজর কাড়লেন বটে, তবে ম্যাচ জেতাতে পারেননি। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে পেলেন প্রথম অর্ধশতক, দলে জায়গাটাও মোটামুটি পোক্ত হলো।

আইসিএল কাণ্ডের পর জাতীয় দলে নিজের ভূমিকাটা আরেকটু বাড়ল, এবার দলের হাল ধরতে হবে তাদের মতো তরুণদেরই। অথচ তিনি নিজের ভূমিকাটা নিয়েই ছিলেন না নিশ্চিত, তাঁকে যে খেলানো হচ্ছিল স্লগ ওভার স্পেশালিস্ট হিসেবে! তবে কোনো উচ্চবাচ্য করলেন না। নিজেকে পরিণত করে তোলার কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে নিয়োজিত করলেন।

প্রথমবারের মতো জাত চেনালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে, তবে ঠিক ব্যাট হাতে নয়, বল হাতে। অভিষেক টেস্টেই ইনিংসে পাঁচ উইকেটসহ সাকল্যে আট উইকেট, আগমণধ্বনিটা শোনা গিয়েছিল স্পষ্টভাবেই। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যেন ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না, সাত নম্বরে নেমে কতটাই বা করার সামর্থ্য থাকে!

নিজের ভূমিকা সম্পর্কে ঠিক ওয়াকিবহাল না থাকার প্রভাব পড়ল তাঁর ফর্মে, সেই উইন্ডিজের বিপক্ষেই হোম সিরিজে বাদ পড়লেন। পরের সিরিজেই ফিরলেন আবারও, তবে ঠিক রানটা আসছিল না।

অবশেষে সেই রানের দেখা পেলেন, ২০১২ সালে সেই উইন্ডিজের বিপক্ষেই আরেক হোম সিরিজে। টানা ৫২,৫৬ এবং ৪৮ রানের অনবদ্য তিনটা ইনিংস খেললেন, সেই সাত নম্বরে নেমেই। ফলাফলটাও পান হাতেনাতে, পরের সিরিজে উঠে এলেন সোজা পাঁচ নম্বরে। বদলে গেল ক্যারিয়ারের মোড়।

দলের জন্য বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করেছেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রমাণও করেছেন। তবে বরাবরের মতোই মুদ্রার অন্য পাশটাও দেখে ফেললেন। ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি অবধি তাঁর ব্যাটে রান নেই। এমন পরিস্থিতিতে হারিয়েও যেতে পারতেন।

কিন্তু ফিরে এলেন দোর্দণ্ড প্রতাপেই। আর দলের প্রয়োজনে তিনি যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারেন, সেটা দেখালেন বিশ্বকাপের আসরেই।

গত বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ শুরু করেছিল একবুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই আসরে যে একটিও শতরানের মুখ দেখেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা! সেই অপেক্ষা কেটেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে, সেদিন হেরেছিল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। তাঁর ব্যাটেই এল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম শতরান। তবে সেখানেই থেমে থাকলেন না, পরের ম্যাচেই করলেন আরেকটি শতক। বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশের হয়ে টানা দুই ম্যাচে দুই শতক হাঁকালেন। সেই মাহমুদউল্লাহ, দু বছর আগেও দলে নিজের জায়গা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ করছিলেন!

সময়ের প্রয়োজনে ক্লিন হিটার হয়ে উঠতেদ জানেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে মোহনীয় ব্যাটসম্যানদের একজনও। ইচ্ছে করলেই খেলতে পারেন টপ অর্ডারে, আবার হয়ে উঠতে পারেন মিডল-লোয়ার মিডল অর্ডারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানও। ২০১৫ বিশ্বকাপের স্মৃতির আতশবাজিতে আবার কাঠি ঠুকে দিতে পারবেন তো এবার?

[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত]