মার খেয়ে ভূত মোস্তাফিজ
ইয়র্কার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটা ফুলটস হয়ে গেল। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা মোস্তাফিজুর রহমানের বলটি মারার জন্য খুব বেশি জায়গা পাননি দীনেশ কার্তিক। তবু মিড অফ দিয়ে মারলেন ভারতীয় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। চার! মোস্তাফিজ চাইলে স্বস্তি খুঁজে নিতে পারেন, যাক ছক্কার হ্যাটট্রিক তো হয়নি। ওভারের প্রথম তিন বলে চারের হ্যাটট্রিকের পর তো ওই পথেই এগোচ্ছিলেন কার্তিক। নিজের শেষ ওভারে ২৮ রান দিয়েছেন মোস্তাফিজ!
৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি মোস্তাফিজ। এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ উইকেটশূন্য। ম্যাচের আগে প্রথম আলোর পোলে পাঠকদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আজ কোহলিকে আউট করতে পারবেন কিনা মোস্তাফিজ। তাতে ২৭ ভাগ পাঠক হ্যাঁ বলেছিলেন। কিন্তু ১২ ভাগ পাঠক বলেছিলেন, কোহলি তো দূর, কোনো উইকেটই পাবেন না মোস্তাফিজ। তাঁরাই আজ সঠিক প্রমাণিত হয়েছেন। মোস্তাফিজের মতো ব্যর্থ তাঁর দলও। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১৬ রানে হেরে পয়েন্ট তালিকার আটেই থাকল দিল্লি ক্যাপিটালস।
দিনের প্রথম ওভারেই চার খেয়েছেন মোস্তাফিজ। একটি ওয়াইডও দিয়েছেন। তবু সে ওভার থেকে শুধু ৫ রানই পেয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল করতে এসে ১০ রান দেওয়ার পর মোস্তাফিজকে আবার বোলিংয়ে আনতে ৯ ওভার অপেক্ষা করেছেন দিল্লি অধিনায়ক ঋষভ পন্ত। ১৬তম ওভারে বল করতে এসে দারুণ করেছেন মোস্তাফিজ। ততক্ষণে প্রায় সেট হয়ে যাওয়া শাহবাজ খান ও দীনেশ কার্তিক সে ওভার থেকে মাত্র ৫ রান নিতে পেরেছেন।
আসল ঝড় নেমেছে ১৮তম ওভারে। আগের ওভারেই খলিল আহমেদের বলে ১২ রান নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কার্তিক ও শাহবাজ। কিন্তু শাহবাজকে এই ওভারে দর্শক বনে যেতে হলো। মোস্তাফিজের প্রথম বল ঠিকমতো ব্যাটে লাগাতে পারেননি, কিন্তু সেটাই উইকেটের পাশ দিয়ে চার এনে দিয়েছে কার্তিককে। পরের বলে বাঁহাতি বনে গিয়ে আপার কাটে আবার চার। পরের বলে আর কোনো উদ্ভাবন নয়, আদি ও অকৃত্রিম কাভার ড্রাইভ।
পরের বলটা লং অফ দিয়ে উড়ল, সীমানা পাড় হওয়ার আগে মাটি ছোঁয়নি। পরেরটা উড়ল লং অফ দিয়ে। ওভারের শেষটা কার্তিক টানলেন চার মেরে। মোস্তাফিজের এমন বেধড়ক পিটুনি খাওয়া শেষে শার্দুল ঠাকুর ও কুলদীপ যাদবও ১২ ও ১৭ রান দিলেন শেষ দুই ওভারে। বেঙ্গালুরু পেল ১৮৯ রানের লড়াকু স্কোর। অথচ ১২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল দলটি। ৯২ রানে জুটি বেঁধেছিলেন কার্তিক ও শাহবাজ। আর এক উইকেট পড়লেই বোলারদের দেখা মিলত। শেষ ৪ ওভারে ৬৯ রান তোলা সে জুটি ৫২ বলে ৯৭ রান এনে দিয়েছেন দলকে।
৩৪ বলে ৬৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন কার্তিক। পাঁচটি চারের সঙ্গে পাঁচটি ছক্কা তাঁর। ওদিকে শাহবাজ অপরাজিত ৩২ রানে। এর আগে টপ অর্ডারের সবার ব্যর্থতা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ফাফ ডু প্লেসি, অনুজ রাওয়াত ও বিরাট কোহলি মিলে মাত্র ২০ রান করেছেন। এর মাঝেই ৩৪ বলে ৫৫ রান করে ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল।
ওয়াংখেড়ের উইকেটে ১৯০ রানের লক্ষ্য কঠিন না। বিশেষ করে যে দলের লাইনআপ পৃথ্বী শ, ডেভিড ওয়ার্নার, ঋষভ পন্ত দিয়ে গড়া। ওয়ার্নারের চার চার ও পাঁচ ছক্কায় ৬৬ রানে ১ উইকেটে ৯৪ রান করে ফেলেছিল দিল্লি। কিন্তু ৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে দিল্লি। ১১৫ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে ভরসা দিতে নামেন শার্দুল ঠাকুর। অন্য দিকে অধিনায়ক পন্ত তো ছিলেনই। ৩০ বলে ৭৫ রান দরকার ছিল দিল্লির।
জুটির প্রথম ওভারেই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ঝাঁজ টের পেলেন দুজনের। নিজের প্রথম বলেই লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা শার্দুলের। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে চার ও ছক্কা পন্তের। পরের ওভারে মোহাম্মদ সিরাজকেও ডিপ মিড উইকেটের সীমানায় আছড়ে ফেলেছেন পন্ত। কিন্তু পরের বলেই হার মানলেন। ভারসাম্য হারানো পন্ত অফ স্টাম্পের বাইরে বলে সর্বশক্তি দিয়ে মেরেছিলেন। মিড অফের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল বল। একদম সঠিক সময়ে লাফ দিয়ে এক হাতে সেটা তালুতে আটকেছেন বিরাট কোহলি। ১৭ বলে ৩৪ রান করে ফিরেছেন পন্ত। জয় তখন ২১ বলে ৪৮ রান দূরে।
শার্দুল চেষ্টা করেছেন, হার্শাল প্যাটেলকে ছক্কা মেরেছেন পরের ওভারেই। তবু শেষ দুই ওভারে দিল্লির দরকার ছিল ৩৪ রান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই বিদায় নিয়েছেন এই বোলিং অলরাউন্ডার। বাকি ১১ বলে প্রয়োজনের অর্ধেক রান তুলতে পেরেছে দিল্লি।