‘মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন ইতিহাস’
নিউজিল্যান্ডকে বড় বিপর্যয়ের মুখেই ফেলেছে বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পঞ্চম দিন কিউইদের ব্যাটিংয়ে নামতে হবে মাত্র ১৭ রানে এগিয়ে থেকে। তার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে, হাতে থাকবে মাত্র ৫ উইকেট। তবে কি ঐতিহাসিক এক জয়ের পথে বাংলাদেশ?
নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ‘বিশেষজ্ঞ’ ব্যাটসম্যান হিসেবে টিকে আছেন রস টেলর, ১০১ বলে ৩৭ রান করে। টেলরকেও ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেওয়া যেত, যদি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা একটু সচেতন হতেন। দুবার জীবন পেয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। একবার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তাঁর সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম। এরপর তো অদ্ভুতভাবে রানআউট হওয়া থেকেও বেঁচে গেলেন তিনি।
উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে ৭৩ রান যোগ করেছেন টেলর। সেটিও হতো না। ১৩ রানে ইয়ংয়ের ক্যাচও যে ছেড়েছে বাংলাদেশ। এখন টেলর আর তরুণ রাচিন রবীন্দ্রই বড় ভরসা নিউজিল্যান্ডের। কাল পঞ্চম দিন এ দুজনকে কেবল টিকে থাকলে হবে না, রানটাকেও এগিয়ে নিতে হবে, বাংলাদেশের লক্ষ্যটাকে করে তুলতে হবে কঠিন। সেটি কি পারবে নিউজিল্যান্ড?
ক্রিকেট দুনিয়া অবশ্য বাংলাদেশের জয়ই দেখছে। এমনকি নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমেও তেমনটাই বলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়তে পারবে কি না, সেটি পুরোপুরি নির্ভর করছে পঞ্চম দিন সকালে বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং আর পরে লক্ষ্যের দিকে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ার ওপর। ম্যাচটা জিততে পারলে সেটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই বাংলাদেশের প্রথম জয় হবে। আর বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই জয় যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বিরাট এক ব্যাপার, ইতিহাস তৈরি করা এক মুহূর্ত, সেটি না বললেও চলছে।
পঞ্চম দিনটাকে নিউজিল্যান্ডের জন্যই কঠিন মনে হচ্ছে বেশির ভাগের চোখে। কারণটা পরিষ্কার, তাদের হাতে বেশি উইকেট নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই টেলএন্ডার। রস টেলরের সঙ্গে রাচিন রবীন্দ্র, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কাইল জেমিসন ও নিল ওয়াগনার। সব ভরসা টেলরের ওপরই। কিন্তু তিনিও যে ব্যাটিংটা খুব ভালো করছেন, সেটিও নয়। যতক্ষণ উইকেটে আছেন, খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি তাঁকে। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, টেলর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার, সেরা ব্যাটসম্যান। আর এমন খেলোয়াড়েরা তো এমন পরিস্থিতিতেই নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার মঞ্চ বানান। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ড যে অবস্থানে আছে, টেলর অবশ্যই চাইবেন নিজের সেরাটা দিয়েই দেশের হার বাঁচাতে। তবে কাল নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যা উইকেট টিকিয়ে রাখা আর সেই সঙ্গে রান করে যাওয়ার ব্যাপারটিতে ভারসাম্য রাখা।
বাকি ক্রিকেট দুনিয়ারও চোখ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের দিকে। উপমহাদেশের দল হিসেবে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে অন্য মাত্রারই মনে হচ্ছে সবার। টুইটারে নেটিজেনরা নানাভাবে করছেন বাংলাদেশ দলের প্রশংসা। নিশ্চিতভাবেই তাঁরা চাইছেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এক জয়। টেস্ট ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টা হতে পারে ঝিমিয়ে পড়া টেস্ট ক্রিকেটের দারুণ এক বিজ্ঞাপনই।
বিখ্যাত ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে কাল লিটন দাসকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন তাঁর টুইটে। আজও তিনি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট নিয়ে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। (টেস্টটি জিততে পারলে) তা হবে বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক ব্যাপার। ব্যাটিংটা তারা দৃঢ়তার সঙ্গেই করেছে। এখন তারা পেস বোলিং দিয়ে জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’
সত্যিই কি বাংলাদেশ জয়ের পথে এগোচ্ছে?