৩৬৫—টেস্টের প্রথম ইনিংসে আহামরি দলীয় স্কোর নয় এটা। তবে খুব খারাপও এটাকে বলা যাবে না। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজেদের লড়াইয়ে রাখার মতো স্কোরবোর্ডে জমা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই রান করার আগে ইনিংসের শুরুতে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে মুমিনুল হকের দল। ২৪ রানে ৫ উইকেট হাওয়া হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের।
শেষ পর্যন্ত এটাই কাল হয়েছে মিরপুর টেস্টে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের এমন নড়বড়ে অবস্থা দেখে ম্যাচের পরবর্তী অংশের পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনাই তাদের ম্যাচ জিতিয়েছে ১০ উইকেটে।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কা দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিকিভেলা। সেখানে তিনি এমন খটখটে পাটা উইকেটেও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে নাকানিচুবানি খাইয়ে শ্রীলঙ্কার ১০ উইকেটের জয়ের রহস্যের কথা জানান, ‘প্রথম ইনিংসে তাদের টপ অর্ডারকে ধুঁকতে দেখেছি। আমরা শুরুতে লাইন এবং লেংথ ঠিক রেখে বল করার চেষ্টা করেছি। আসিতার গতি আর শর্ট বলের দক্ষতা যে তাদের ভোগাবে, সেটা আমরা জানতাম।’
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং নিয়ে এ পরিকল্পনার সঙ্গে ফিল্ডিং নিয়েও বিশেষ ভাবনা ছিল শ্রীলঙ্কার। ম্যাচ শেষে ডিকভেলা বলেছেন, ‘আমরা মাঠটা বড় করতে চেয়েছি। সহজ কোনো রান দিতে চাইনি। এরপর যখন সুযোগ এসেছে, আক্রমণ করার কথা ভেবেছি।’
লঙ্কানদের পরিকল্পনা কতটা সফল হয়েছে, স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ধসে পড়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। প্রথম ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা ২৩ রানে। ৫ উইকেট গেছে ৫৩ রানে। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব আল হাসান ও লিটর দাসের ১০৩ রানের জুটির পরও ১৬৯ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। আসিতা ৫১ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
এরপর ২৯ রানের লক্ষ্যে তারা কোনো উইকেট না হারিয়ে পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে।
তবে পরিকল্পনা সফল করাটা শ্রীলঙ্কার বোলারদের জন্য অতটা সহজ কাজ ছিল না। উইকেট যে ছিল ব্যাটিংবান্ধব। ডিকভেলা বলেছেন, ‘আগেরবার আমরা যে উইকেটে খেলেছিলাম, এবারের উইকেট সে রকম ছিল না। আগেরবার বল স্পিন করেছে, টার্ন করেছে। এবারের উইকেট মরা, পাটা উইকেট। ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো ছিল। তবে আমাদের ফাস্ট বোলাররা পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পেরেছে।’
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৫০৬ রানে অলআউট হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ১৪১ রানে এগিয়ে ছিল তারা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (১৪৫*) ও দিনেশ চান্ডিমাল (১২৪) শতক করেছেন। জয়ের কৃতিত্ব তাই ব্যাটসম্যানদেরও দিলেন ডিকভেলা, ‘দুই টেস্টের একটিতেও স্পিনারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু ফাস্ট বোলাররা ভালো করেছে। বোলারদের কাজটা অবশ্য ব্যাটসম্যানরা সহজ করে দিয়েছে।’
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মানুষের জন্য এই জয় স্বস্তির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ডিকভেলা, ‘আমরা কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই জয় মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি আমি।’