ভেজা চোখে বিদায় জানিয়ে দিলেন গুল
ক্রিকইনফোর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ওসমান সামিউদ্দিনের টুইট মানানসই, ‘উমর গুলের জন্য শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। টি-টোয়েন্টির শুরুর দিকের বড় তারকা (তাঁর ইয়র্কার যে কারও চেয়ে ভালো)। পাশাপাশি লম্বা সংস্করণেও সবার চোখ এড়িয়ে যাওয়া বোলার। একজন সত্যিকারের ভদ্রলোক। তাঁর সমসাময়িকদের মতো বর্ণিল ছিল না কিন্তু দক্ষতা ছিল।’
কাল এই দক্ষতার সামনে দাঁড়ি পড়ল। কয়েক ফোঁট অশ্রু ঝরল। চোখ মুছতে মুছতে উমর গুল জানালেন, বিদায়!
পাকিস্তানে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ চলছে। কাল দক্ষিণ পাঞ্জাবের বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয় বেলুচিস্তান। না, শুধু বেলুচিস্তানই বিদায় নেয়নি, বল হাতে পথচলার যতি টেনেছেন উমর গুল। তার আগে স্মরণ করেছেন পরিবার, কোচ ও অতীত-বর্তমানের সতীর্থদের। বিদায়বেলায় পেয়েছেন দক্ষিণ পাঞ্জাব-বেলুচিস্তানের খেলোয়াড়দের সম্মানসূচক গার্ড অব অনার।
এর মধ্য দিয়ে পর্দা নামল গুলের ৪৭ টেস্ট, ১৩০ ওয়ানডে ৬০ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরও। হ্যাঁ, সব সংস্করণের ক্রিকেট মাঠ থেকেই বেরিয়ে গেলেন ৩৬ বছর বয়সী এ পেসার। ভুল হলো। পেসারের আগে ‘সাবেক’ কথাটা বলা হয়নি।
পাকিস্তান জাতীয় দলে সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৬ সালে। ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, ঘরোয়ায় ১৯ বছর—এরপর আর সেখানে পরিসংখ্যান, তথ্য-উপাত্ত যোগের সুযোগ রাখলেন না গুল। পেশোয়ারের এ পেসার পাকিস্তানের ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ের আধুনিক কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং দুই বছরের পরের বিশ্বকাপেও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শিরোপাজয়ে অসামান্য ভূমিকা ছিল তাঁর। ২০০৭ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ৬ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি মনে থাকবে অনেকের। তখন পর্যন্ত সেটি ছিল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সেরা বোলিং। তবে এই সংস্করণে গুলকে সবাই বেশি মনে রাখবেন তাঁর নিখুঁত ইয়র্কারের জন্য।
অবসর নিলেও ক্রিকেট ছেড়ে যে থাকতে পারবেন না—সে কথা কালই বলে দিয়েছেন গুল, ‘এখন পরিবারকে সময় দিতে চাই, তবে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকাটা কঠিন। যে খেলা এবং দেশ আমাকে এই গ্রহের অন্যতম ভাগ্যবান মানুষ বানিয়েছে, এখন সেটিকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অবসরের কথা জানিয়ে দেন গুল। তাঁর টুইট, ‘অনেক ভাবনা-চিন্তার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি ন্যাশনাল টি২০ কাপের পর সব সংস্করণের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেব। পাকিস্তানের জন্য সব সময় হৃদয় দিয়ে ও শতভাগ পরিশ্রম করে খেলেছি। ক্রিকেট সব সময় আমার ভালোবাসা হয়েই থাকবে।’
গুল এই ভালোবাসার প্রতিদানও পেয়েছেন ভালোই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৮৫) উইকেটশিকারি হিসেবে বিদায় নিলেন তিনি। ওয়ানডেতে ১৭৯ উইকেট নিয়েছেন, টেস্টে ১৬৩টি।
২০০২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা উমর গুলের অভিষেক ২০০৩ সালে শারজায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সে বছর বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের শূন্যতা পূরণে গুলকে নামিয়ে দেয় পাকিস্তান। সামিউদ্দিনের ভাষায়, ‘শোয়েব আখতারের পরে এবং মোহাম্মদ আসিফের আগে ছিলেন শুধু উমর গুল।’
২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আমির-আসিফ শাস্তি পাওয়ার পর পাকিস্তানের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেন গুল। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ বোলারের জায়গাও নিয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে হাঁটুর চোটের আগ পর্যন্ত পাকিস্তান দলে ছিলেন নিয়মিত মুখ। এর ৪ বছর পর পাকিস্তান দলে ফিরলেও গুলের সেই ধার ছিল না। নির্বাচকেরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
এবার গুল নিজেই মুখ ফিরিয়ে নিলেন ক্রিকেট থেকে—সম্ভবত নতুন রুপে ফিরবেন বলে!