ভুলে যাওয়া স্বাদ ফিরল, দরকার এখন জয়ের স্বাদ
এ সিরিজে বাংলাদেশের বোলাররা খুব বেশি উদ্যাপনের সুযোগ পাননি। তাই বোলিংয়ের অন্যান্য দিকগুলোর চিত্র যে করুণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। আজ ইনিংসের প্রথম ওভারেই যখন মেডেন পেয়ে গেলেন শফিউল ইসলাম, তখন নিশ্চিতভাবে জানা ছিল এমন কিছু এই সিরিজে প্রথম!
এই প্রথমের হিসেবটা হচ্ছে বাংলাদেশি পেসারদের মেডেন ওভার নেওয়ার খতিয়ান। গত ম্যাচে তাইজুল ইসলাম তাই দুই ওভার মেডেন দিলেও সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের কোনো পেসার এক ওভারে টানা ছয় বলে কোনো ব্যাটসম্যানকে রান করতে না দেওয়ার অপেক্ষাটা যে ১৫৫ ওভারের সেটা জেনে একটু ধাক্কা লাগাই স্বাভাবিক।
ওয়ানডেতে বলুন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই বলুন, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠিত পেস বোলারের সর্বশেষ কোনো মেডেন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত ২ জুলাই। সেদিন ভারতের ৩৯তম ওভারে কোহলি ও পান্ডিয়াকে তুলে নেওয়ার সময় কোনো রান দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। এর পর তিন ম্যাচ পার হয়ে গেলেও সেটা করতে পারেননি কোনো পেসার।
আজ প্রথম ওভারে মেডেন নিয়েই ক্ষান্ত হননি শফিউল, নিজের তৃতীয় ওভারেও দিয়েছেন মেডেন। সে সঙ্গে তুলে নিয়েছেন আভিস্কা ফার্নান্দোর উইকেট। শুধু ওই দুই ওভারই নয়, প্রথম স্পেলেই ভালো বল করেছেন। ৫ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়েছেন। অন্য প্রান্তে কখনো রুবেল, কখনো তাইজুল কখনো বা মিরাজ বল করলেও শফিউলের তৈরি করা চাপে খুব একটা রান তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
নিজের পঞ্চম ওভারে এসে প্রথম চার খেয়েছেন শফিউল। বহুদিন পর বাংলাদেশের কোনো পেসারকে প্রথম স্পেলে এতটা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বল করতে দেখা গেল। শুরুতেই চাপ সৃষ্টি করেছেন, এবং সে চাপের পুরস্কার হিসেবে উইকেট পেয়ে গেলেন। তবে এরপরের চাপটা ধরেই রেখেছিলেন এই পেসার। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বোলারদের কাছে এমন কিছুই চাইছিলেন তামিম, ‘যে ফরম্যাটেই খেলেন না কেন, নতুন বলে উইকেট পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটাই ম্যাচের গতি প্রকৃতি ঠিক করে দেয়। তাই চিন্তিত তো অবশ্যই। এটা হলে তো ভালোই হতো, মোস্তাফিজ হোক, হোক মিরাজ কিংবা শফিউল। কেউ একজন যদি আমাদের হয়ে নিয়মিত শুরুতে উইকেট নিতে পারত, দলের জন্য খুব ভালো হতো।’
আজ ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। সিরিজের প্রথম ম্যাচের তুলনায় ‘মাত্র’ই। গত ম্যাচে বিনা উইকেটে ৬৯ তুলেছিল স্বাগতিকেরা। আর প্রথম ম্যাচে ওই শফিউলই শুরুতে উইকেট তুলে নেওয়ার পরও ৭৭ রান করেছিল। আজ অন্তত বোলাররা শুরুতে ওভাবে লাগাম ছেড়ে দেননি।
শুরুতে উইকেট তুলে নেওয়ার দৃশ্য অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের কাছ থেকে ইদানীং আশা করাই যায় না। ২০১৯ সালে এ নিয়ে ১৮টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মাঝে ২০ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষের প্রথম উইকেট তোলার ঘটনা মাত্র তিনটি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজের প্রথম ওয়ানডের (১০/১) আগে শুধু বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচেই (৬/১) এমন কিছু করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। পাওয়ার প্লেতে আজকের চেয়ে কম রান দেওয়ার ঘটনাও ওই ম্যাচেই সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। সেদিন শুরুর চাপ সয়ে প্রথম দশ ওভারে ৩২ রান তুলেছিল উইন্ডিজ। প্রতিপক্ষকে এত কম রান করতে দেখার স্বাদও যে ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ!
যদি বলের হিসেবে যাওয়া হয়, প্রথম ৫ ওভারের মধ্যে পাঁচ ম্যাচেই শুধু উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকি ১৩ ম্যাচেই প্রথম উইকেটের দেখা পেতে অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ ছিল। এবং অধিকাংশ ম্যাচেই এক উইকেট প্রাপ্তিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গত ১০ ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট প্রাপ্তির ঘটনা মাত্র একবার, সেটি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। গত ২০ ম্যাচেও ওই নিউজিল্যান্ড ম্যাচই ভরসা! আর তিন উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়ার স্মৃতি এক বছর পুরোনো, গত সেপ্টেম্বরে আবুধাবিতে এশিয়া কাপে ১৮ রানে পাকিস্তানের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
লেখাটা শুরু হয়েছিল মেডেনের প্রসঙ্গ দিয়ে। বাংলাদেশের বোলারদের লাইন লেংথ মেনে বল করা কিংবা চাপ সৃষ্টিতে কতটা ঘাটতি সেটা বোঝা যায় ওই মেডেন দিয়েও। আজ ৩৮তম ওভার পর্যন্ত ৪টি মেডেন দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের আগের ১৭ ম্যাচে মাত্র ১৫টি মেডেন দিতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা! বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচে ৬টি। উইকেট পাওয়ার মতো যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি হবে কীভাবে?
আজ শফিউল ও তাইজুলের সুবাদে অনেক দিন পর প্রতিপক্ষকে বেশ কিছুক্ষণ রানের জন্য হাহুতাশ করতে দেখা গেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ঠিকই চাপ সয়ে নিয়ে বড় ইনিংস গড়ার ভিত্তি গড়েছে। এর কারণ শুরুর চাপটা বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায়নি। মাঝখানে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা আধিপত্য গড়েছেন। শেষ দিকে বোলিংটা হয়েছে যাচ্ছেতাই। আজ হয়তো তামিমকে শুরু নয়, মাঝের আর ডেথ ওভারের বোলিং নিয়ে আবার কথা বলতে হবে!