ভারতের বিরোধিতার পর সুর পাল্টাল আইসিসি
>২০২৩-৩১ সম্প্রচার বর্ষচক্রে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে ‘চ্যাম্পিয়নস কাপ’ নামে একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় আইসিসি। তা নিয়ে আপত্তি ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের।
টাকার খনি আগলে রাখায় কার জোর বেশি—আইসিসি না তিন মোড়লের? আরও নির্দিষ্ট করে বললে আইসিসি না ভারতের? এই উত্তরের ওপরই হয়তো নির্ভর করছে আইসিসির প্রস্তাবিত নতুন টুর্নামেন্টের ভাগ্য।
২০২৩-৩১ সম্প্রচার বর্ষচক্রে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে ‘চ্যাম্পিয়নস কাপ’ নামে একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় আইসিসি। শুধু ছেলেদের জন্য নয়, মেয়েদের জন্যও। ২০২৪ ও ২০২৮ সালে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস কাপ। ওয়ানডে চ্যাম্পিয়নস কাপ হবে ২০২৫ ও ২০২৯ সালে। এর পাশাপাশি থাকছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০২৬ ও ২০৩০) এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ (২০২৩, ২০২৭ ও ২০৩১)। মানে, প্রতি বছরই আইসিসির একটা টুর্নামেন্ট থাকবে। অন্যভাবে দেখলে, আইসিসি ‘টাকার খনি’ তৈরি করতে চাইছে আর কি!
কিন্তু সেটিতে বাদ সেধেছে ভারত। তাতে আবার তারা পাশে পাচ্ছে ক্রিকেটের ‘তিন মোড়লে’র বাকি দুটি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকেও। এই তিনের বিরোধিতার মুখে এখন একটু সুর নরম হয়ে এসেছে আইসিসির। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এখন আগামী মাসে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সভাতে সব সদস্য দেশের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে। আইসিসির একটি সূত্র সেটি জানিয়েছে রয়টার্সকে।
যত ঝামেলার মূলে অর্থকড়ির হিসাবই। সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি হওয়ার পরই তিন মোড়ল, অর্থাৎ ভারত-অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের পাশাপাশি ক্রিকেটের আরও বড় একটি দেশ নিয়ে চার জাতি টুর্নামেন্টের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। আরেকটি টুর্নামেন্ট, মানে ওই দেশগুলোর আরও অর্থ আয়ের সুযোগ। কিন্তু আইসিসির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সেই সিরিজ আয়োজনের সময় খুঁজে পেতে ঝামেলা তৈরি হবে। আবার আইসিসির টুর্নামেন্ট মানে সেখান থেকে আসা টাকা-পয়সাও সব দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার আয় কমবে। সে কারণেই আইসিসির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল তিন মোড়ল। তবে আইসিসিতে টাকা-পয়সার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দাপট তো ভারতেরই, তাদের কাছ থেকেই সবচেয়ে বড় বাধার মুখে পড়েছে আইসিসি।
আগামী মাসে দুবাইয়ে আইসিসির বোর্ড সভায় দুই বিরোধী মত এক জায়গায় আসবে। আইসিসি বনাম তিন মোড়ল। তাতে আরও ঝামেলা তৈরি হবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন অনেকে। তবে আইসিসির সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা একটা ফলপ্রসূ সভার আশা করছি। প্রত্যেক বোর্ড সভাই সদস্য দেশগুলোকে আলোচনা, বিতর্ক শেষে সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ করে দেয়। আইসিসির সদস্যরা বোর্ডের নেওয়া সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করবে। সদস্য দেশগুলো এরপরও বিতর্ক করতে পারে, এরপরও সিদ্ধান্তে বদল আসতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটা সবার সহযোগিতার ভিত্তিতেই শেষ হবে।’
কিছুটা নরম সুরই বটে আইসিসির। তবে রয়টার্স জানাচ্ছে,আইসিসির অন্য সদস্য দেশগুলো আইসিসির নতুন টুর্নামেন্টের পক্ষেই ভোট দিতে পারে। আইসিসির টুর্নামেন্ট মানে যে সদস্যদেশগুলোর আয়! আইসিসির প্রধান নির্বাহী মানু সাহনি ও মহাব্যবস্থাপক ক্যাম্পবেল জেমিসন কদিন ধরেই সদস্য দেশগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আইসিসির প্রস্তাবিত টুর্নামেন্ট নিয়ে সদস্য দেশগুলোর আগ্রহের মাত্রা কতটুকু বুঝে নিচ্ছেন। তবে প্রায় সব মূল সদস্য দেশ ভ্রমণ করলেও এখনো ভারতে যাননি তাঁরা। গত সপ্তাহে সাহনি সব সদস্য দেশের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন, যাতে নির্দেশনা ছিল ২০২৩-৩১ সম্প্রচার বর্ষচক্রের টুর্নামেন্টগুলোতে আয়োজক হতে আগ্রহী দেশগুলো যাতে ১৫ মার্চের মধ্যে তাদের আগ্রহের কথা জানায়। এই বছরের মধ্যেই আয়োজক চূড়ান্ত করতে চায় আইসিসি।
যদি টুর্নামেন্টগুলো শেষ পর্যন্ত হয় আর কী! টাকার খেলাই যে টুর্নামেন্টগুলোর ভাগ্য লিখে দেবে।