ভারতের ঐতিহাসিক জয় প্রসঙ্গে শাস্ত্রীকে রাহানের খোঁচা
ভারতের ২০২০-২১ অস্ট্রেলিয়া সফর। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বড় এক লজ্জা উপহার দিয়েছিল ভারতকে। অ্যাডিলেডে ৮ উইকেটে হেরে যায় ভারত। তবে হারের ধরনটা ছিল ভয়ংকর। মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয়ে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর দিনের দেখা পেয়েছিল বিরাট কোহলির দল। ওই ম্যাচের পর অধিনায়ক কোহলি প্রথম সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য দেশে ফিরে যান।
সিরিজের বাকি অংশের জন্য নেতৃত্বের ভার ওঠে অজিঙ্কা রাহানের কাঁধে। তাঁর নেতৃত্বে পরের ম্যাচেই ভারত ঘুরে দাঁড়ায় ৮ উইকেটে জিতে। তৃতীয় ম্যাচ ড্র করে রাহানের দল। সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টটি জিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরে ভারত।
ঐতিহাসিক সেই সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া রাহানে বছর দুয়েক ধরেই ব্যাট হাতে ধুঁকছেন। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে ভারতকে ৮ উইকেটে জেতাতে শতক পেয়েছিলেন রাহানে। মেলবোর্নের সেই ম্যাচের পর আর তিন অঙ্কের দেখা পাননি। সেই ম্যাচের পর খেলা ২৭ ইনিংসে ২০.২৫ গড়ে মাত্র ৫৪৭ রান করেছেন রাহানে। ২৭ ইনিংসে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন মাত্র তিনবার। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৬৭ রানের। মেলবোর্ন টেস্টের পর এমন বাজে ফর্মের কারণে রাহানের ক্যারিয়ার গড়ও গেছে কমে। আগে টেস্টে তাঁর গড় ছিল ৪৩-এর ওপরে, এখন সেটা ৩৯-এর নিচে।
ক্যারিয়ারের উতরাইয়ের এই সময়টাতে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন বোরিয়া মজুমদারের। ‘ব্যাকস্টেজ উইথ বোরিয়া’ অনুষ্ঠানে বোরিয়া মজুমদারের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি ক্যারিয়ারের অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেছেন। একটা পর্যায়ে রাহানে তাঁর সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রীকে একটা খোঁচাও যেন দিয়ে রেখেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার এক ফাঁকে চলে আসে ভারতের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ের বিষয়টিও।
রাহানে অবশ্য সরাসরি শাস্ত্রীর নাম বলেননি। তবে ভারতের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ে অনেকেই কৃতিত্ব নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, কিন্তু জয়টা যে রাহানের নেতৃত্বেই এসেছে, তা সেভাবে কেউ বলেন না—রাহানের আক্ষেপ এটাই। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ে তাঁর ভূমিকা মানুষ এত দ্রুত ভুলে গেল কীভাবে—এই প্রসঙ্গে বোরিয়াকে রাহানে বলেছেন, ‘আমি জানি, আমি কেমন খেলেছি এবং কারও কাছে প্রমাণ করার দরকার নেই আমার। নিজের ঢোল পেটানোর অভ্যাস নেই।’
রাহানে এরপর যোগ করেন, ‘মাঠে কিছু সিদ্ধান্ত আমি নিজে থেকেই নিয়েছি। কিন্তু সেই সব সিদ্ধান্তের কৃতিত্ব নিয়েছে অন্য কেউ। আমার কাছে অবশ্য আমরা সিরিজটি জিতেছি—এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা ছিল ঐতিহাসিক একটা সিরিজ। আমার কাছে এটাই বিশেষ কিছু।’ সে সিরিজে কোহলির অনুপস্থিতিতে ড্রেসিংরুমে তরুণদের অনুপ্রাণিত করার নিয়ে বেশ কবারই কথা বলেছেন শাস্ত্রী। কীভাবে ভারত দলের কোচের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর বেশ কিছু সাক্ষাৎকারেও তাঁকে নিজের ঢোল পেটাতে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক বাজে ফর্মের কারণে কেউ কেউ বাতিলের খাতায় ফেলে দিচ্ছেন ৮২ টেস্ট খেলে ১২টি শতক ও ২৫টি অর্ধশতকে ৪৯৩১ রান করা রাহানেকে। এ বিষয়ে তাঁর উত্তর, ‘মানুষ যখন বলে আমার ক্যারিয়ার শেষ, আমি তখন হাসি। যারা খেলা বোঝে, তারা এমন কথা বলতে পারে না। অস্ট্রেলিয়াতে আমি কী করেছি, সবাই তা জানে। এমনকি অস্ট্রেলিয়া সফরের আগেও লাল বলের ক্রিকেটে আমার অবদানের বিষয়ে সবার জানার কথা।’ এরপর সমালোচকদের একটা পরামর্শও দিয়ে রেখেছেন রাহানে, ‘ক্রিকেট খেলাটা যারা ভালোবাসে, তাদের একটু বুঝেশুনে কথা বলা উচিত।’
আবার ছন্দে ফেরার বিষয়ে রাহানে বলেন, ‘নিজের সামর্থ্যে আমি বিশ্বাস করি। সত্যি আমি ভালো ব্যাটিং করছি এবং আমি বিশ্বাস করি, এখনো ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিতে পারি।’