‘ভবিষ্যতের’ আশায় যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন উমর আকমল
জীবিকার তাগিদে বিদেশযাত্রা হরহামেশাই করতে দেখা যায়। ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে এত দিন এমন কিছুর মানে ছিল কোনো সফরে যাওয়া কিংবা বিদেশি কোনো লিগে খেলতে যাওয়া। কিন্তু ২০২৮ অলিম্পিককে সামনে রেখে জেগে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট। আর সে সুবাদে জীবিকার তাগিদে ক্রিকেটারদের যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
নতুন ‘বিরাট কোহলি’ হতে চাওয়া ভারতের উন্মুক্ত চাঁদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় দেশে ছেড়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটারই এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পথে পাড়ি জমাচ্ছেন। সে তালিকায় বড় এক নামই যোগ হলো গত কয়েকদিনে। পাকিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের লিগ খেলতে চলে গেছেন ক্রিকেটের বর্ণিল চরিত্র উমর আকমল। মাত্র কিছুদিন আগেই নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা আকমল পাকিস্তানের ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হওয়ার চিন্তা করছেন বলেই জানা গেছে।
৩১ বছর বয়সী মাঝে এক বছর বসেই ছিলেন। ২০২০ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) চলার সময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) দুর্নীতিবিরোধী নিয়ম ভাঙায় বড় শাস্তিই পেয়েছিলেন। দুবার আপিল করে সেটা কমিয়ে এনেছিলেন উমর। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেও ক্যারিয়ার পুনর্জীবিত করতে পারেননি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাঁকে সাহায্য করলেও শীর্ষ পর্যায়ে তাঁকে সুযোগ দেয়নি পিসিবি। পাঞ্জাব কেন্দ্রীয় দলের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে পাঁচ ম্যাচে ৬৬ রান করে সে সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে পারেননি উমর আকমল।
এরপর নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন আকমল। ওদিকে ২০২৮ অলিম্পিকে ক্রিকেটকে যুক্ত করার চেষ্টায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালু করেছে এবার। সে লিগের জন্য গত কিছুদিনে অনেক ক্রিকেটারই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ছুটছেন। তবে আকমল শুরুতেই সেদিকে যাচ্ছেন না। প্রাথমিকভাবে নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। সেখানে ক্যালিফোর্নিয়া জালমির হয়ে খেলছেন।
শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে প্রথম বলেই আউট হয়ে গেছেন। প্রাথমিক ভাগ্য বদলাতে পারলে অর্থাৎ ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে সবার মন জয় করে নিতে পারলে সেখানেই থিতু হওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা নাকি শুরু করে দিয়েছেন আকমল।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর কাছে আকমলের পরিবারের সদস্যরা তাঁর যাত্রার ব্যাপার নিশ্চিত করেছেন। পরিবারের এক সদস্য অবশ্য এর পেছনে বোর্ডের দায় দেখেছেন, ‘অনেকেই এর চেয়ে বড় অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছে এবং অভূতপূর্ব সাহায্য পেয়েছে। উমরের সঙ্গে কখনো ন্যায্য আচরণ করেনি তারা। ফিট না—এমন খেলোয়াড়দের দলে নেওয়ার জন্য অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু উমরকে বাদ দেওয়ার জন্য নিয়ম কড়া করা হয়েছে।’
জাতীয় দলে ডাকার জন্য আজম খান, শোহাইব মাকসুদ ও শারজিল খানের ব্যাপারে ছাড় দিয়েছে পিসিবি। তাঁদের সবারই ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন আছে। এর মধ্যে শারজিল খানকে তো ম্যাচ পাতানোর দায়ে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধও করেছিল পিসিবি। পরে সে শাস্তি আবার কমিয়ে এনেছে বোর্ড। তবে এটাও ঠিক, গত এক যুগে উমর আকমল খেলার বাইরে যত বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তাতে তাঁর প্রতি বোর্ডের নতুন করে সদয় হওয়া কঠিন ছিল।
সেদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রই আকমলের জন্য সমাধান হয়ে উঠতে পারে। দেশটিতে মাইনর ও মেজর ক্রিকেট লিগে সারা বিশ্ব থেকে ক্রিকেটার টেনে আনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিন বছর পর এই ক্রিকেটারদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগও মিলবে।