নিরাশার এক সফরে একটু হলেও আশা জাগিয়েছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। আগের দিন ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার লিড ৮২ রানের বেশি হতে দেননি। বাকি কাজটা করার কথা ছিল রুট-স্টোকসদের। পুরো সিরিজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই ইনিংসেও ব্যাট হাতে বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।
অন্যান্য ইনিংসে আশার বাতিঘর হয়ে থাকা অধিনায়ক জো রুটও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে কিছু করতে পারেননি। করতে পারেনই–বা কী করে; যদি অভিষিক্ত একজন টেস্টটাকে একদম নিজের নামে করে নেওয়ার পণ করে ফেলেন!
সেটাই করেছেন স্কট বোল্যান্ড। মাত্র ৪ ওভার বল করে ৭ রানে ছয়-ছয়টা উইকেট তুলে নিয়েছেন মেলবোর্নের ঘরের ছেলে বোল্যান্ড। তৃতীয় দিন সকালে মাত্র ৮১ বল টিকতে পেরেছে ইংল্যান্ড। ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে সকাল শুরু করা ইংলিশরা অলআউট হয়েছে ৬৮ রানে। মেলবোর্ন টেস্টে ইনিংস ও ১৪ রানে জিতে অ্যাশেজ জয় নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ শুরু হওয়ার মাত্র ১২ দিনের মাথায় অ্যাশেজের ছাইদানিটা নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ইংল্যান্ড এর চেয়ে বেশি দিন তো কোয়ারেন্টিনেই থেকেছে!
ফুললেংথে বোল্যান্ডের মাপা বোলিং একদম নাজেহাল করে ছেড়েছে ইংলিশদের। এমনিতেই এই সিরিজে ইংলিশ ব্যাটিংয়ের অবস্থা ভালো না, তার ওপর বোল্যান্ডের তোপে পড়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েছিলেন যেন রুটরা।
পুরো টেস্টে সব মিলিয়ে ১০৮৪ বল খেলা হয়েছে, গত ৭০ বছরে অস্ট্রেলিয়া এত ছোট টেস্ট ম্যাচ কখনো আয়োজন করেনি। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ২৬৭ রান সংগ্রহ করেছিল। এত কম রানের পরও ইনিংসে হার, ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এই হারের কারণে একটা তেতো রেকর্ডে বাংলাদেশের ভাগীদার হলো ইংলিশরা। এই পঞ্জিকাবর্ষে ৯টি টেস্টে হারল ইংল্যান্ড। ইতিহাসে এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশ ছাড়া এত টেস্ট আর কোনো দল হারেনি।
দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দুই ইনিংস হার দিয়ে শুরু ২০০৩ সালে ৯টি টেস্টে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে পথে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও দুই টেস্টে জুটেছে ইনিংস ব্যবধানের হার। এরপর পাকিস্তানের মাটিতে তিন হার, এবার অবশ্য আর ইনিংস ব্যবধানে নয়। এর মধ্যে মুলতানে তো প্রায় জিতেই গিয়েছিল বাংলাদেশ! শেষ পর্যন্ত ইনজামাম-উল-হকের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ম্যাচটা ১ উইকেটে জেতে পাকিস্তান। বছরের শেষটাও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরে দুই হার দিয়ে করেছিল বাংলাদেশ। তাতেই রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ।
১৪৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ১ বছরে ৮ টেস্ট হেরেছে অনেক দলই। কিন্তু ৯ টেস্টে হারের ব্যথা ২০০৩ সালের বাংলাদেশের আগে-পরে আর কোনো দলকে সইতে হয়নি। এবার রুট-স্টোকস-অ্যান্ডারসনদের ইংল্যান্ড হলো সেই ব্যথার ভাগীদার। সে সময়কার বাংলাদেশ অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ আজ সকাল-সকাল জো রুটকে ফোন করে সান্ত্বনা দিতে পারেন চাইলে।
ম্যাচ হারা অধিনায়ক রুট ব্যক্তিগত অর্জনের দিক দিয়েও খালি হাতে ফিরেছেন। এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটা ধাওয়া করছিলেন রুট, চেষ্টা করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম শতক পাওয়ার। মেলবোর্নের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসটাই জোড়া অর্জনের শেষ সুযোগ ছিল রুটের জন্য। পারেননি। অধিনায়ক হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি রান করা হয়ে গেলেও সব মিলিয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে বছর শেষ করলেন রুট। ১৭৮৮ রান নিয়ে শীর্ষে আছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইউসুফ। ১৭১০ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ক্যারিবীয় কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডস। আজ ২৮ রান করা রুট বছর শেষ করলেন ভিভ রিচার্ডসের চেয়ে ২ রান কম নিয়ে।
দিনের শুরুতে ৪ ওভার মোটামুটি নিরুপদ্রবে কাটাতে পারলেও স্টার্কের ছোবলে দিশেহারা হয়ে যায় ইংল্যান্ড। মাত্র ১১ রানে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান স্টোকস। এরপরই শুরু হয় বোল্যান্ডের ঝড়। মাত্র ৫ রান করে বোল্যান্ডের বলে এলবিডব্লুর শিকার হয়ে ফিরে যান জনি বেয়ারস্টো। জো রুটও আর ধৈর্য ধরতে পারেননি। ২৮ রান করে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। মার্ক উড আর রবিনসনকে আউট করে ৬ উইকেট নিয়ে নেন বোল্যান্ড। জেমস অ্যান্ডারসনকে আউট করে ইংল্যান্ডের পরাজয় নিশ্চিত করেন ক্যামেরন গ্রিন।
সঙ্গে নিশ্চিত করেন—ছাইদানিটা থাকছে অস্ট্রেলিয়াতেই।