বোলার সৌম্যকেও চায় বাংলাদেশ
এক ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট। ম্যাচটা বিশ্বকাপের, প্রতিপক্ষের নাম অস্ট্রেলিয়া, তিন ব্যাটসম্যান ডেডিভ ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ ও উসমান খাজা। বোলারের নামটা মনে পড়েছে তো? হ্যাঁ, সৌম্য সরকার।
তিনি বাংলাদেশ দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে তামিম ইকবালের সঙ্গে মিলে ঝোড়ো শুরু এনে দেবেন দলকে কিংবা পরিস্থিতি বুঝে করবেন দেখেশুনে ব্যাটিং। এটাই তো সৌম্যর কাছে চাওয়া। কিন্তু ইদানীং যে সৌম্যের দেখা মিলছে, তাঁর কাছে শুধু ব্যাট হাতে নয়, বল হাতেও যেন কিছু প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেটি তৈরি করেছেন সৌম্য নিজেই। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচটার কথাই ধরুন না। এমন বোলিংয়ের পর কোনো অধিনায়ক না চাইবেন সৌম্যর হাতে বল তুলে দিতে! শ্রীলঙ্কা বোর্ড সভাপতি একাদশের বিপক্ষে পরশু অনুশীলন ম্যাচের পর তো মনে হচ্ছে, এই সিরিজেও ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলার সৌম্যকে সমানভাবে চাইবে বাংলাদেশ।
সৌম্যর বোলার পরিচয়টা অবশ্য নতুন নয়। বয়সভিত্তিক দল থেকেই তাঁর বোলিং ঠেকা কাজ চালানোর চেয়েও বেশি কিছু হিসেবে পরিচিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঝেমধ্যেই বল হাতে চমক দেখিয়েছেন। এই তো বিশ্বকাপের ঠিক আগেই প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৩৪ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। লিস্ট এ ক্রিকেটে যেটি এখন পর্যন্ত সৌম্যর ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংও। তবে জাতীয় দলে ওই অর্থে বোলার সৌম্যকে এর আগে ব্যবহার করা হয়নি খুব একটা। গত বছর শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতেই মূলত টানা কয়েক ম্যাচে বল হাতে দেখা গেছে তাঁকে। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে তো শেষ ওভারটা করার জন্য সৌম্যর হাতেই বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ম্যাচটা সৌম্য জেতাতে পারেননি যদিও, দীনেশ কার্তিক অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ১৩ রান নিয়ে নেন শেষ ওভার থেকে।
বোলার সৌম্যর ওপর থেকে তারপরও দলের আস্থা চলে যায়নি। নইলে কি আর বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি ভাঙতে তাঁর হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি! ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংটা (৩/৫৩) সেদিনই করে ফেলেন সৌম্য। আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও। ৬ ওভার বল করে ৩৩ রানে নিয়েছেন সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার উইকেট।
পরশুর অনুশীলন ম্যাচেও এমন এক সময়ে উইকেট পেয়েছেন সৌম্য, যখন জুটি ভাঙার মরিয়া চেষ্টা করছিল বাংলাদেশ দল। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর শ্রীলঙ্কা যখন দুর্দান্ত এক জুটিতে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, ভানুকা রাজাপাকসাকে ফিরিয়ে ৮২ রানের সেই জুটি ভাঙেন সৌম্য। এরপর ফেরান দারুণ ব্যাট করতে থাকা শিহান জয়াসুরিয়াকেও। অনিয়মিত বোলাররা যদি এমন ব্রেক থ্রু এনে দেন, তাহলে অধিনায়কের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায় বৈকি!
বোলার সৌম্যকে তাই এই সিরিজে নিয়মিতই বল হাতে দেখতে চান বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কোচ খালেদ মাহমুদ, ‘আমি তো চাই সে নিয়মিত বল করুক। ওর সে সামর্থ্য আছে। মাঝের ওভারে হোক বা শেষের দিকে, ও কিন্তু ভালো বল করে। এটা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী যাতে ওকে কাজে লাগানো যায়, আমরা সেভাবেই ওকে তৈরি করছি।’
ব্যাট হাতে তো ঝড় তুলতে পারেনই, এখন যদি বল হাতেও নিয়মিত আস্থার প্রতীক হতে পারেন, সৌম্যর মাঝে দারুণ এক অলরাউন্ডারকেই খুঁজে পাবে বাংলাদেশ।