বুম বুম বুমরা: ব্যাটে ঝড় তোলার পর ভারতের ফাস্ট বোলারের নতুন নাম
রবীন্দ্র জাদেজা যখন আউট হয়ে ফেরেন, ভারতের রান ৯ উইকেটে ৩৭৫। সেই সময় আলোচনাটা ছিল এ রকম—ভারতের হয়তো আর ৪০০ রান করা হলো না! কিন্তু স্কোরবোর্ডে ভারতের রানটা ৪০০–এর ওপরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন এ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া যশপ্রীত বুমরা।
ভারতের অধিনায়ক লক্ষ্য বানালেন ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডকে। ব্রডের করা ভারতের ইনিংসের ৮৪তম ওভারে একটি ওয়াইড ও একটি নো বলসহ ৩৫ রান তুললেন বুমরা। ব্রডের এই ওভারে রান এল যথাক্রমে—৪, ৫ (ওয়াইড), ৭ (৬+নো বল), ৪, ৪, ৪, ৬ ও ১!
টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড হয়ে গেল এতে। এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান দেওয়ার রেকর্ড ছিল তিন বোলারের—দক্ষিণ আফ্রিকার রবিন পিটারসেন, ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন ও জো রুটের। ২৮ রান করে দিয়েছেন তাঁরা।
৩৫ রানের মধ্যে বুমরা নিজে নিয়েছেন ২৯ রান। এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে সর্বোচ্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা, অস্ট্রেলিয়ার জর্জ বেইলি ও কেশব মহারাজের যৌথ রেকর্ডটি (২৮ রান) ভেঙে টেস্ট ইতিহাসে নতুন রেকর্ড লেখালেন বুমরা।
২০০৩ সালে জোহানেসবার্গ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার রবিন পিটারসনের এক ওভারে ২৮ রান নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা। ২০১৩ সালে অ্যান্ডারসনের এক ওভারে ২৮ রান নেন বেইলি আর ২০২০ সালে রুটের বলে সমান রান নিয়েছিলেন মহারাজ।
এমন একটি রেকর্ডের পর ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশংসায় ভাসছেন ভারতের ফাস্ট বোলার বুমরা। পাকিস্তানের মারকুটে ব্যাটসম্যান শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে মিলিয়ে কেউ তাঁকে আখ্যা দিচ্ছেন ‘বুম বুম বুমরা’। কেউ আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ব্রডেরই বলে ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের ছয় ছক্কা মারার বিষয়টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার এবং বর্তমানের ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ টুইট করেছেন, ‘বিশ্বাসই হচ্ছে না! ওই ওভারে ৩৫ রান, বেশির ভাগই নিয়েছেন জশপ্রীত বুমরা।’ আইপিএলের দল চেন্নাই সুপার কিংসের টুইট, ‘৪, ৫, ৭, ৪, ৪, ৪, ৬, ১—ব্রডকে যুবিফাইড করলেন বুমরা!’
আইসিসি তাদের টুইটারে বুমরার প্রশংসা করেছে একটু অন্যভাবে, ‘৪, ৫ (ওয়াইড), ৭ (নো), ৪, ৪, ৪, ৬, ১।’ প্রতি বলে নেওয়া রানের দুই পাশে আগুনের ইমোজি দিয়ে আবার তারা লিখেছে, ‘যশপ্রীত বুমরা বনাম স্টুয়ার্ট ব্রড—কী একটা ওভারই না হলো!’ এই লেখার শেষে আবার ক্রিকেট ব্যাট আর বলের ইমোজি দেওয়া হয়েছে।’
বীরেন্দর শেবাগ এ ক্ষেত্রে ধামাল চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য ব্যবহার করেছেন। টুইটের শুরুটা এমন, ‘বুমরার মুখোমুখি হওয়ার পর স্টুয়ার্ট ব্রডের অবস্থা এখন এমন। এক ওভারে ৩৫ রান...হা হা।’ ছবিটা কার সেটা ধামালের ভক্তদের বোঝার কথা। জাভেদ জাফরির ছবির নিচে বিখ্যাত সেই উক্তি, ‘বুঝি না, ভয়ংকর সব পরিস্থিতিতে আমিই কীভাবে যেন সামনে চলে যাই!’
কার্তিক চৌধুরী নামের একটি আইডি থেকে এক ব্যক্তি দুটি ছবি পোস্ট করেছেন। প্রথম ছবিতে থুতনিতে হাত দেওয়া ব্রড, রঙিন পোশাকে। সেটি ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজের কাছে ছয় ছক্কা খাওয়ার পরের ছবি। দ্বিতীয় ছবিটি আজ এক ওভারে ৩৫ রান দেওয়ার পর। কার্তিক চৌধুরী ছবি দুটি দিয়ে লিখেছেন, ‘এ দুটি ছবির বিরতিতে আমরা বড় হয়ে গেলাম।’
আদিয়া শর্মা নামে একজন টুইট করেছেন, ‘কিছু জিনিস বদলায়, কিছু জিনিস বদলায় না।’ এ লেখার নিচে তিনি চারটি ছবি দিয়েছেন—একটিতে যুবরাজ ছয় ছক্কা মারার পর তাঁর সতীর্থের সঙ্গে ফিস্ট বাম করছেন, নিচে রঙিন পোশাকে ব্রডের থুতনিতে হাত দেওয়া ছবি। আরেকটি ছবি এক ওভারে ৩৫ রান নেওয়ার পর সতীর্থের সঙ্গে বুমরার ফিস্ট বাম, নিচে সাদা পোশাকে ব্রডের থুতনিতে হাত দেওয়া ছবি।
সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক তো বুমরাকে শহীদ আফ্রিদিই বানিয়ে দিল! তারা তাদের অফিশিয়াল টুইটার পেজ থেকে টুইট করেছে, ‘বুম বুম বুমরা ব্যাট হাতে আগুন ঝরাচ্ছে!’