বিসিসিআইয়ের হয়ে ভারত সরকারকে কর দেবে আইসিসি

সৌরভ গাঙ্গুলী - বিসিসিআই সভাপতিফাইল ছবি: এএফপি

ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়—ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সে রকমই হতে যাচ্ছে। তা না হলে কেন এমন হবে যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আয় করবে বিসিসিআই আর ভারত সরকারকে সেই আয়ের কর দেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)!


যেকোনো বিশ্বকাপ বা বড় কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়া একটি দেশের ক্রিকেট বোর্ডের জন্য সব সময়ই বেশ লাভজনক। আইসিসির এ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোর সঙ্গে আসে অনেক পৃষ্ঠপোষক। এ ছাড়া টুর্নামেন্টগুলোর টিকিটের দাম সাধারণ সিরিজগুলোর থেকে কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। এখান থেকেও আসে বিশাল পরিমাণের অর্থ। পাশাপাশি ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট ব্যবসা–বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে এ সময়।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করা বিসিসিআইকে ভারত সরকারকে কর দিতে হয়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি রুপি
ফাইল ছবি

আইসিসির আগামী আট বছরের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের চক্রে তিনটির আয়োজক হতে যাচ্ছে বিসিসিআই। এ টুর্নামেন্টগুলো থেকে আসন্ন আয়ের কথা ভেবে বিসিসিআইয়ের কর্মকর্তাদের তিনতালে নেচে ওঠারই কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিসিসিআইয়ের বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। কারণ, বিশ্বকাপের মাধ্যমে উপার্জনকৃত অর্থের একটা বড় অংশ চলে যায় ভারত সরকারকে কর দিতে গিয়েই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করা বিসিসিআইকে ভারত সরকারকে কর দিতে হয়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি রুপি!


সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ভারতেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের করোনাভাইরাস মহামারির বাজে অবস্থার কারণে সেটি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। টুর্নামেন্টটি ভারতে হলে বিসিসিআইকে কর হিসেবে গুনতে হতো ৩৪০ কোটি রুপি। আগে ভারত সরকার এ কর মওকুফ করে দিত। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করা বিসিসিআইকে কোনো কর দিতে হয়নি। কিন্তু এখন আর ভারত সরকার কর মওকুফ করতে রাজি নয়।

২০২৪ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত যতগুলো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে, গতকাল সেগুলোর সূচি প্রকাশ করেছে আইসিসি। এই আট বছরে হবে মোট আটটি আইসিসি টুর্নামেন্ট—চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও দুটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এ টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে তিনটির আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। এর মধ্যে এককভাবে তারা আয়োজন করবে ২০২৯ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এ ছাড়া ২০২৬ সালে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে। ২০৩১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনে তাদের সহ-আয়োজক বাংলাদেশ।


এ তিন টুর্নামেন্ট থেকে আয় করা অর্থের কর ভারত সরকারকে দিতে চায় না বিসিসিআই। কিন্তু ভারত সরকারও কোনোভাবেই কর মওকুফ করতে রাজি নয়। বিসিসিআই তাই অন্য পথ বেছে নিয়েছে। তারা প্রস্তাব দিয়েছে, তাদের হয়ে করের অর্থটা যেন আইসিসি ভারত সরকারকে দিয়ে দেয়। বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী আর সচিব জয় শাহ আইসিসির এক সভায় বিষয়টি তুলে ধরেন। এত বিশাল অঙ্কের টাকা কর হিসেবে দেওয়াকে ‘অন্যায্য’ বলে দাবি করেন। তাঁরা আইসিসির কাছে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন, ‘বিশ্বকাপ উপলক্ষে অন্য সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর সে দেশের সরকার মওকুফ করে দেয়। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বকাপের জন্য তাদের নিয়ম কিছুতেই শিথিল করতে রাজি নয়। ফলে আমরা মনে করি, আইসিসির উচিত বিসিসিআইয়ের হয়ে ভারত সরকারকে করের অর্থগুলো পরিশোধ করে দেওয়া।’

টুর্নামেন্টগুলো থেকে কর বাবদ ভারত সরকারকে ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি দেওয়া লাগত বিসিসিআইয়ের
ছবি: এএফপি

আইসিসি এতে রাজিও হয়েছে। আইসিসি মেনে নেওয়ায় ভারতের ক্রিকেট মহলে আনন্দের বন্যাই বয়ে যাওয়ার কথা। এ তিন টুর্নামেন্ট থেকে ভারতের আয় যে অনেক বেড়ে যাবে! টুর্নামেন্টগুলো থেকে কর বাবদ ভারত সরকারকে ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি দেওয়া লাগত বিসিসিআইয়ের। সেটা এখন আর দিতে হবে না বলে পুরোটাই ঢুকে যাবে লাভের খাতায়!


বিসিসিআই এই আটটি থেকে তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। কিন্তু তারা আইসিসিকে শর্ত বেঁধে দিয়েছে, বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ভারত সরকারকে বিসিসিআইয়ের যত টাকা কর দেওয়ার কথা, এর পুরোটাই দিতে হবে আইসিসিকে। বিসিসিআইয়ের এ শর্ত মেনে নিয়েছে আইসিসিও। এতে বিসিসিআইয়ের লাভ হবে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি!