বিশ্বের ‘সবচেয়ে বাজে ক্রিকেটারে’ মুগ্ধ ডেল স্টেইন–লাবুশেন

অপেশাদার ক্রিকেটার জর্জ ম্যাকমেনেমাইছবি: ইনস্টাগ্রাম

জর্জ ম্যাকমেনেমাই নিজেই ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন টুইটারে। এরপর তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওটি দেখে কেউ হেসেছেন, কেউ আবার ক্রিকেটের প্রতি জর্জের ভালোবাসা দেখে আবেগতাড়িত হয়েছেন।

ক্রিকইনফো তাঁর এই ভিডিও নিজেদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে লিখেছে, ‘রানআপ ও বোলিং অ্যাকশনে এত মজা!’

আরও পড়ুন

সত্যিই তা–ই। ভিডিওটি দেখে থাকলে এমনটাই মনে হবে। জর্জ ম্যাকমেনেমাই ব্রিটিশ অপেশাদার ক্রিকেটার। বলা যায় শখের ক্রিকেটার। খেলেন অপেশাদার ক্লাব উইনচেস্টারে। ইউরোপে ভিলেজ ক্রিকেট এমনিতেই বেশ মজার। আনাড়িপনায় ভরপুর।

তবে এই আনাড়িপনার মধ্যেও একটা বিষয় ফুটে ওঠে—খেলাটির প্রতি ভালোবাসা এবং মজা করে খেলা, সেটা দক্ষতাপূর্ণ হোক বা না হোক। মজা করা এবং পাওয়াও তো খেলার মুখ্য উদ্দেশ্য। ম্যাকমেনেমাই নিজের বোলিংয়ের এমনই এক ভিডিও পোস্ট করে নজর কেড়েছেন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের। ডেল স্টেইন থেকে মারনাস লাবুশেন পর্যন্ত তাতে মুগ্ধ!

ঘটনাটা খুলেই বলা যাক। ম্যাকমেনেমাই টুইটারে নিজের বোলিংয়ের ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, বল লেগ স্পিনের মতো গ্রিপ করে বেঢপ শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে বোলিং ক্রিজে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাকমেনেমাই। বোলিং ক্রিজে গিয়েই অদ্ভুত একটি কাণ্ড করে বসেন। একটি নয় দুটি বলা ভালো।

প্রথমটি হলো, বাঁ হাতটি ব্যাটসম্যানের দিকে ধীরে ধীরে তাক করে তারপর নিজের বোলিং অ্যাকশন শুরু করেন ম্যাকমেনেমাই। সেটি দেখে অনেকেরই স্কুল–কলেজে পিটি–প্যারেডের কথা মনে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বোলিং ক্রিজের ভেতরে পা দুটি রেখে শরীরটা ডিপ মিডউইকেট বরাবর তাক করে কিছুক্ষণ লাফিয়ে নেন ম্যাকমেনেমাই। সেটিকে অবশ্য পুরোপুরি লাফানোও বলা যায় না। সেটি আসলে কি? শট নেওয়ার আগে ফুটবলাররা মাঝেমধ্যে একটু পা ঝেড়ে নেন কিংবা অনেকক্ষণ স্ট্রেচিংয়ের পর ক্রিকেটাররা পায়ের জড়তা কাটাতে যেভাবে কুলডাউন করে, অনেকটাই সেরকম।

ম্যাকমেনেমাই এরপর বলটি ছাড়লেন বাতাসে ভাসিয়ে। আকাশে ভাসিয়ে বলাই ভালো। কারণ, বলটি এত বেশি ফ্লাইটে ছেড়েছেন যে ভিডিওর ফ্রেম তা আটকাতে পারেনি, যেন আকাশ থেকে টুপ করে পড়ল! ডেলিভারির পরই হাঁটু ভেঙে বসে পড়েন ম্যাকমেনেমাই—যেন কিছু একটা করে ফেলেছেন! পুরো ভিডিওটি দেখলে হাসি পাবেই। ম্যাকমেনেমাইয়ের প্রতি ভালোবাসাও বাড়বে। এমন নবিশ ক্রিকেটার হয়েও খেলাটির প্রতি তাঁর ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে ভিডিওটির ক্যাপশনে।

ক্যাপশনে ম্যাকমেনেমাই লিখেছেন, ‘আমি হয়তো বোকা কিংবা বিশ্বের সবচেয়ে বাজে ক্রিকেটার। কিন্তু এই খেলাটি আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমার মানসিক স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ করেছে এবং আবার সুখী হওয়ার ভিত পেয়েছি এই খেলায়, আমার স্বর্গত মা–কেও গর্বিত করতে পেরেছি। ক্রিকেট, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

এমন ক্যাপশনের পর ম্যাকমেনেমাই ক্রিকেটে কতটা অদক্ষ, তা অনেকের ভুলে যাওয়ার কথা। ম্যাকমেনেমাই যেন ক্রিকেটটা খেলে যান—এমন প্রত্যাশা করা লোকের সংখ্যাই নিশ্চয়ই বেশি। ভিডিওটিতে লাইকসংখ্যা ১২ হাজারের বেশি এবং রি–টুইট হয়েছে ১১২২ বার।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটসম্যান লাবুশেনও ম্যাকমেনেমাইয়ের ভিডিওতে মুগ্ধ। ভিডিওটি রিটুইট করে লাবুশেন লিখেছেন, ‘এটা অসাধারণ জর্জ—তুমি আমাদের সবার প্রেরণা—দুনিয়ার সেরা খেলার প্রতি তোমার ভালোবাসা সবাইকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ।’ লাবুশেন এই মন্তব্য করার পর স্বাভাবিকভাবেই ম্যাকমেনেমাইয়ের আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার কথা। ঘটেছেও ঠিক তাই। তাঁর উত্তর, ‘আমার চোখে আনন্দশ্রু। বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমার নায়কেরা আমার এই ভিডিও দেখেছে।’

লাবুশেনের টুইটেও মন্তব্য করেন ম্যাকমেনেমাই, ‘মারনাস— তুমি আমাকে খুশি করে দিলে! এত সুন্দর সব কথার জন্য ধন্যবাদ। ক্রিকেট আসলেও জনতার খেলা, সবার খেলা। এই খেলাটা খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। প্রতিদিনই তোমাদের মতো নায়কদের অনুসরণ করি আমি। আশা করি আনন্দটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে মাকে গর্বিত করতে পারব আমি।’

ম্যাকমেনেমাইয়ের জীবনটা মোটেও সহজ নয়। ২০১৭ ম্যাকমেনেমাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চার দিন আগে তাঁর মা ঘুমের মধ্যে মারা যান। এরপর তিনি লেখাপড়া থামিয়ে দেন। মাকে হারানোর কষ্ট রোগ হয়ে ধরে দেয় তাঁর জীবনে—পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) রোগে ভোগায় ম্যাকমেনেমাই এক পর্যায়ে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া মস্তিষ্কের রোগ ডিজপ্রাক্সিয়াতেও ভোগান্তি গেছে তাঁর। এ রোগ শরীরের ভারসাম্য ও নড়াচড়ায় প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন

সে যাই হোক, ২০১৭ সালেই অ্যাশেজ সিরিজ চলার সময় তাঁর জীবনে আলোকবর্তিকা হিসেবে ধরা দেয় ক্রিকেট। যোগ দেন স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাব নিউপোর্ট ইনে। ম্যাকমেনেমাই তারপর থেকেই স্থানীয়ভাবে ছোট–খাটো সেলেব্রিটি বনে যান। মাঠে নামলে তাঁর মজার সব কর্মকাণ্ড ভিডিও করে অনেকেই শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত দুই মৌসুমে নিজের ক্লাবে সবচেয়ে উন্নতি করা খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কারও জিতেছেন ম্যাকমেনেমাই। অ্যাশেজ সিরিজ সামনে রেখে মাঝে–মধ্যেই তিনি ইংলিশ নির্বাচকদের ভেবে দেখতে বলেন, তাঁকে জাতীয় দলে নেওয়া যায় কি না! এটি যে মজা তা বলাই বাহুল্য।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি পেসার ডেল স্টেইন ম্যাকমেনেমাইকে নিয়ে মোটেও মজা করছেন না। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ম্যাকমেনেমাইয়ের ভিডিওটি শেয়ার করে ‘স্টেন–গান’ ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কেউ যদি জানতে চায় বেঁচে থাকতে আমি কি করি, তাহলে এই ভিডিওটি তাদের দেখাব।’ ডেল স্টেইন নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে এ নিয়ে আরও একটি টুইট করেন, ‘আগের টুইটটির সূত্র ধরে বলছি, যেন কেউ ভুল না বোঝেন। আমি বোলারটিকে নিয়ে মজা করছি না। তাঁর অনুভূতিটা ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।’