বিশ্বকাপে গর্বের ৫ 'সেঞ্চুরি জুটি'
>বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত ছয়টি সেঞ্চুরি জুটির দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পাঁচটি জুটিই জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সেই পাঁচ বিখ্যাত জুটির গল্প থাকছে এই প্রতিবেদনে।
১৯৯৯ থেকে ২০১১— প্রথম চারটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের সেঞ্চুরি ছিল না। এমনকি কোনো সেঞ্চুরি-জুটিও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপে এসে ঘোচে দুটি আক্ষেপই। চার বছর আগের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সবশেষ বিশ্বকাপ বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি যেমন দেখেছে, জুটি বেঁধে সেঞ্চুরিও দেখেছে তেমনি। ২০১৫ ও ২০১৯ দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ছয়টি সেঞ্চুরি জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পাঁচটি জুটিই জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের মুখে হাসি ফোটানো এই পাঁচ সেঞ্চুরি জুটির গল্প হাসি এনে দেওয়া ওই পাঁচ সেঞ্চুরি জুটির গল্পই শুনে নেওয়া যাক আরেকবার।
সাকিব আল হাসান-লিটন দাস ১৮৯*; প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ পেয়েই ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে করেছিলেন ৭৩ রান। কিন্তু তাও বিশ্বকাপের দলে সুযোগ মিলছিল না লিটন দাসের। অবশেষে কাল পঞ্চম ম্যাচে এসে সুযোগ পেয়ে কী ইনিংসটাই না খেললেন লিটন! বিশ্বকাপের নিজের অভিষেক ম্যাচেই ৬৯ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস খেলে আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন তাঁকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে।
তবে নিজের রানের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাঁর জুটিটি। ২০তম ওভারে লিটন যখন উইকেটে এলেন, পরপর দুটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে। যদিও উইকেটে ছিলেন নিজের সেরা ফর্মে থাকা সাকিব, তবুও অনিশ্চয়তার দোলাচল কিছুটা হলেও ছিল। পাঁচে নেমে কতটা কী করতে পারবেন লিটন, এমন বড় ম্যাচের চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, প্রশ্ন ছিল এগুলো নিয়েই। সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর নির্ভুলভাবেই মিলিয়েছেন লিটন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে যোগ করেছেন অপরাজিত ১৮৯ রান। বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি।
মাত্র ১৩৫ বলে ১৮৯ রানের এই জুটিতে লিটনই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। লিটনের ৬৯ বলে ৯৪ এর পাশে সাকিবের অবদান ৬৬ বলে ৮০ রান। কে জানে, লক্ষ্যটা আরেকটু বড় হলে হয়তো ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম দ্বিশতক জুটির দেখাও কালই পেয়ে যেত বাংলাদেশ!
সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম ১৪২; প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিতেও জড়িয়ে আছে সাকিবের নাম। এই জুটিটিও এসেছে চলতি বিশ্বকাপেই। ওভালে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুভ সূচনা করার ম্যাচে ৩য় উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ১৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব। ভালো শুরু এনে দেওয়ার পর দ্রুত দুই ওপেনারই ফিরে যাওয়ায় সেদিনও কিছুটা চাপে ছিল বাংলাদেশ। তবে দলের অন্যতম অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মিলে সেই চাপ উড়িয়ে দিয়েছেন। ১৪১ বলে ১৪২ রানের এই জুটিতে সমানে সমানে রান তুলেছেন দুজনেই। ৬৮ বলে ৭১ করেছিলেন মুশফিক, আর সাকিব ৭৩ বলে ৬৯। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছে ২১ রানে।
মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিম ১৪১, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড
গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ বললে বোধ হয় ভুল হবে না একদমই। বিশ্বকাপে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের স্বাদ যে অ্যাডিলেডের সে ম্যাচ জিতেই পেয়েছিল বাংলাদেশ! স্মরণীয় সেই ম্যাচটা রাঙিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার পথে মুশফিককে নিয়ে ৫ম উইকেট জুটিতে ১৪৪ বলে ১৪১ রান যোগ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। জুটিতে অবশ্য বেশি আগ্রাসী ছিলেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহর ৭৪ বলে ৫৫ রানের বিপরীতে মুশফিক করেছিলেন ৭০ বলে ৮০। পরে রুবেল হোসেনের চার উইকেটের সুবাদে ১৫ রানে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।
তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ ১৩৯, প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড
নেলসনে গত বিশ্বকাপের এ ম্যাচে নতুন ইতিহাসই গড়েছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার নিজেদের রেকর্ডটা সেদিন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিল বাংলাদেশ। আর এতে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহর। ২য় উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে ১৩১ বলে যোগ করেছিলেন ১৩৯ রান। জুটিতে মাহমুদউল্লাহর অবদান ছিল ৬২ বলে ৬২, আর তামিম করেছিলেন ৬৯ বলে ৭২। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৬ উইকেটে।
সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম ১১৪, প্রতিপক্ষ: আফগানিস্তান
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি জুটি ছিল এটিই। গত বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জুটিটি গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। ক্যানবেরায় আগে ব্যাট করতে নেমে ১১৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ৫ম উইকেট জুটিতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে মাত্র ৯৩ বলে ১১৪ রান যোগ করেছিলেন সাকিব ও মুশফিক। জুটিতে মুশফিকের অবদান ছিল ৪৯ বলে ৬২, আর সাকিব করেছিলেন ৪৪ বলে ৫০। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে।