বিরাট কোহলি নাকি তারুয়ার কোহলি—কোন পথে যাবেন তাঁরা?
আইপিএলের মেগা নিলাম শেষ, তাই বলে গল্প তো শেষ হয়নি। নিলাম যখন চলছিল, তখনই কোনো খেলোয়াড়ের উচ্চ মূল্য চমকে দিয়েছে। আবার কোনো বড় তারকাকে নিতে দলগুলোর অনাগ্রহ হতাশ করেছে। নিলামের শেষভাগে এসে আবার দল পেয়েছেন অনেকে। এমনই এক ক্রিকেটার নুর আহমেদ। আফগান বাঁহাতি লেগ স্পিনারকে ৩০ লাখ রুপিতে দলে টেনেছে গুজরাট টাইটানস।
কদিন আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলে এসেছেন নুর। এর আগেই পাকিস্তান সুপার লিগ ও বিগ ব্যাশ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার আইপিএলেও নাম লেখালেন ১৭ বছর বয়সী। যুব বিশ্বকাপ খেলা আরেক ক্রিকেটার কিন্তু নুরের ১০ গুণ দামেই বিক্রি হয়েছেন আইপিএলে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভাল্ড ব্রেভিসকে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ৩ কোটি রুপি দিচ্ছে। ভারতের রাজ বাওয়াকে পাঞ্জাব কিংস দিচ্ছে ২ কোটি রুপি।
প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটারদের আগেই ধরে রাখার চেষ্টা তো নতুন কিছু নয়। ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএল থেকেই এমনটা হচ্ছে। এখন কৌতূহল, নুর-ব্রেভিস-বাওয়াদের মধ্যে কে হবেন বিরাট কোহলি, আর কে হবেন তারুয়ার কোহলি!
প্রথম নামটাকে চেনানোর চেষ্টা করাটা এখন স্পর্ধায় রূপ নেবে। ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক, আইপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক—এভাবে পরিচয় দিলেও কোহলির স্তুতির কিয়দংশও পূরণ হয় না। বরং তারুয়ার কোহলিকে নিয়ে কথা বলা যাক। ২০০৮ যুব বিশ্বকাপ জেতা ভারত দলের অধিনায়ক ছিলেন বিরাট। সে দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তারুয়ার। এক শতকে টুর্নামেন্টে ২৩৫ রান করেছিলেন বিরাট, ওদিকে ৩ অর্ধশতকে ২১৮ রান করে দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছিলেন তারুয়ার।
সেবার আইপিএলের নিলামে ওঠার সুযোগ ছিল না যুব বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারদের। বরং তাঁদের জন্য একটি ড্রাফট ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রঞ্জি ট্রফির অভিজ্ঞতা থাকা ক্রিকেটারদের মূল্য ৫০ হাজার ডলার ধরে রাখা হয়েছিল। আর সে অভিজ্ঞতা না থাকায় তারুয়ারের জুটেছিল ৩০ হাজার। নিজের দল দিল্লি সুযোগ পেয়েও নেয়নি বিরাট কোহলিকে। তাঁকে টেনে নিয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ওদিকে পাঞ্জাবের ছেলে তারুয়ার পেয়েছিলেন রাজস্থান রয়্যালসে খেলার সুযোগ।
এরপরই দুজনের পথ গেছে দুদিকে বেঁকে। একদিকে বিরাট। আইপিএলে ২০৭ ম্যাচে ৬ হাজার ২৮৩ রান। জাতীয় দলের হয়ে ৪৪৪ ম্যাচ, তিন সংস্করণেই অধিনায়ক, একটি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও। ওদিকে তারুয়ার। কখনো জাতীয় দলে খেলা হয়নি। জাতীয় দল তো অনেক দূরের পথ। আইপিএলেই যে কখনো আলো ছড়াতে পারেননি। প্রথম আইপিএলে খেলেছেন দুই ম্যাচ। পরেরবার যোগ দিয়েছিলেন নিজ অঞ্চলের দলে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবেও খেলতে পেরেছেন মাত্র ২ ম্যাচ। ব্যস, এখানেই শেষ।
৪ ম্যাচ, ১১ রান, ৩.৬৭ গড় ও ৫৭.৮৯ স্ট্রাইক রেট নিয়ে শেষ হয়েছে তারুয়ারের আইপিএল ক্যারিয়ার।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা ছয়জন ক্রিকেটার এবার আইপিএলে দল পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ব্রেভিস বা বেবি এবি, পেস বোলিং অলরাউন্ডার বাওয়া এবং নুরের নাম তো আগেই বলা হয়েছে। ভারতের বাঁহাতি স্পিনার ভিকি অস্তওয়ালকে দিল্লি ক্যাপিটালস নিয়েছে ২০ লাখ রুপিতে। এ ছাড়া বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক যশ ধুলকেও দিল্লি কিনে নিয়েছে ৫০ লাখ রুপিতে। আর বিশ্বকাপে আলোকাড়া ভারতীয় পেস বোলার রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকারকে চেন্নাই সুপার কিংস নিয়েছে দেড় কোটি রুপিতে।
২০২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে ফিরেও এমন লোভনীয় সব চুক্তি বাগিয়েছিলেন ভারতের ক্রিকেটাররা। যশস্বী জয়সওয়ালকে রাজস্থান রয়্যালস নিয়েছিল ২ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে। তাঁর সতীর্থ লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয় ২ কোটি রুপি পেয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের কাছে। পেসার কার্তিক তিয়াগিকে রাজস্থান দিয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ রুপি।
২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জেতা দল থেকে তিনজন পেয়েছিলেন কোটি ছাড়ানো চুক্তি। পেসার কমলেশ নাগরকোটি পেয়েছিলেন ৩ কোটি ২০ লাখ, গতিতে তাঁর চেয়ে এগিয়ে থাকা শিবম মাভি পেয়েছিলেন ৩ কোটি। আর শুবমান গিল পেয়েছিলেন ১ কোটি ৮০ লাখ রুপি। তিনজনকেই টেনে নিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
যুব দলের কারও কোটি টাকা বাগানোর প্রথম উদাহরণ অবশ্য করেছিলেন ঋষভ পন্ত। ২০১৬ যুব বিশ্বকাপে খেলা এই উইকেটকিপারকে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস নিয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ রুপিতে। তাঁর অধিনায়ক ঈশান কিষান পেয়েছিলেন মাত্র ৩৫ লাখ। সেই কিষানকে এবার কিনতে ১৫ কোটি ২৫ লাখ রুপি খরচ করতে হয়েছে মুম্বাইকে।