গতকাল শুরু হয়ে আজ শেষ। মুলতানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম ওয়ানডেটিকে অমন বললে ভুল হয় না। গরমের কারণে ম্যাচ শুরু হয় স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় । যতক্ষণে ম্যাচটা শেষ হলো, ঘড়িতে তখন ১২-৪০ মি.। দ্বিতীয় ইনিংসে তো উঠে গেলেন অন ফিল্ড আম্পায়ার আলিম দারও।
এমন কঠিন কন্ডিশনের দিনে লড়াইটাও হলো কঠিনই। শাই হোপের শতকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৮ উইকেটে ৩০৫ রান। জবাবে বাবর আজমের শতকে বেশ ভালো ভিত পেলেও চাপে পড়া পাকিস্তানকে উদ্ধার করেন খুশদিল শাহ। তাঁর ২৩ বলে ৪১ রানের ঝোড়ো ইনিংসে প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তান জিতল ৫ উইকেটে, ৪ বল হাতে রেখে।
বড় রান তাড়ায় পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি, সপ্তম ওভারে দলীয় ২৬ রানে জেইডেন সিলসের বলে কাভারে ধরা পড়েন ২০ বলে ১১ রান করা ফখর জামান। ইমাম-উল-হক অবশ্য টেনে আনেন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ফর্মটাই—১০৩, ১০৬, অপরাজিত ৮৯ রানের পর এবার করেন ৭১ বলে ৬৫ রান।
ইমামের পর মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গেও শতরানের জুটি গড়েন বাবর। ইমামের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ১০৩ রান ওঠে ১১১ বলে, রিজওয়ানের সঙ্গে ১০০ বলে ১০৮ রান। ৫৯ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করা বাবর তিন অঙ্কে যান ১০৩ বলে, হেইডেন ওয়ালশকে লেট কাটে চার মেরে। ক্যারিয়ারে এটি ১৭তম শতক পাকিস্তান অধিনায়কের।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতে শতক পেয়েছিলেন। বাবর শতক পেলেন এরপর খেলা প্রথম ম্যাচেও। এর আগে ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তিনটি শতক পেয়েছিলেন তিনি। ওয়ানডেতে টানা তিন শতকের এমন ‘ডাবল’ কীর্তি নেই আর কারও। এ ইনিংসের পথে অধিনায়ক হিসেবে ১৩ ইনিংসেই ১ হাজার রান হয়ে গেল তাঁর, যেটি দ্রুততম। এর আগে বিরাট কোহলির লেগেছিল ১৭ ইনিংস।
তবে বাবর শতকের পর বেশিক্ষণ টেকেননি, ১০৭ বলে ১০৩ রান করে আলজারি জোসেফকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন। পাকিস্তানের তখনো প্রয়োজন ছিল ৪৫ বলে ৬৫ রান। অবশ্য মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন, ৫৫ বলে অর্ধশতকও পান। তবে অসময়ে ফেরেন তিনিও। সে সময় ৩২ বলে প্রয়োজন ছিল ৫০ রান।
এ ম্যাচে পাকিস্তান অভিষেক করায় মোহাম্মদ হারিসকে, তাঁকে খেলানো হয় বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেই। তবে তাঁকে আড়াল করেই রাখে পাকিস্তান, ৫ উইকেট পড়ার পরও নামানো হয়নি তাঁকে। রিজওয়ানের উইকেটের পর রান-বলের ব্যবধান বাড়ে আরও, তবে রঙ বদলানোর শুরুটা হয় ৪৭তম ওভারে। রোমারিও শেফার্ডকে টানা তিন ছক্কা মারেন খুশদিল, রান ও বলের ব্যবধান নেমে আসে ছয়ে।
এরপর শাদাব খান ফিরলেও সমস্যা হয়নি তাদের। শেফার্ডের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারে খুশদিল মারেন একটি করে চার ও ছয়। শেষ ৬ বলে প্রয়োজন ছিল ৬ রান, সিলসের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে কাজ শেষ করেন মোহাম্মদ নওয়াজ।
এর আগে প্রচণ্ড গরম ও পাকিস্তানের দারুণ বোলিংয়ের দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আগে ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটি আরও কঠিন হয়ে যায় তৃতীয় ওভারে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্স আউট হয়ে গেলে। সেখান থেকেই হোপের ব্যাটে উইন্ডিজের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। দ্বিতীয় উইকেটে শামার ব্রুকসকে নিয়ে হোপের ১৫৪ রানের জুটি উইন্ডিজের ইনিংসে স্থিতি এনে দেয়। তখন গতি কিছুটা কম মনে হলেও শেষ ১০ ওভারে ৮৭ রানে সেটি পুষিয়ে নেয় ক্যারিবীয়রা। ১০ ওভারে ৭৭ রান খরচ করে ৪ উইকেট নেন হারিস রউফ।
তার আগে পুরোটুকুই শাই হোপের দারুণ ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। ব্রুকস ৮৩ বলে ৭০ রানের ইনিংসে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন, তবে ১৫ চার ও ১ ছক্কায় হোপের ইনিংসটি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। ৩৯তম ওভারের প্রথম বলে হাসান আলীকে চোখধাঁধানো কাভার ড্রাইভে তাঁর শতক (১১৮ বলে) আর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪ হাজারের মাইলফলক একসঙ্গেই হলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে এর আগে ওয়ানডেতে এ মাইলফলক পেরিয়েছেন আর ১০ জন।
তবে ৪ হাজার রানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ইনিংসের হিসেবে যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম ব্যক্তি হয়ে গেলেন হোপ। ৮৮ ইনিংস লাগলো তাঁর, সমানসংখ্যক ইনিংস লেগেছিল ভিভ রিচার্ডসেরও। এ তালিকায় শীর্ষে হাশিম আমলা, তাঁর লেগেছিল ৮১ ইনিংস। দুইয়ে থাকা বাবর মাইলফলকে গিয়েছিলেন ৮২ ইনিংসে।
হোপ-ব্রুকসের বাইরে অধিনায়ক নিকোলাস পুরান তিন বিশাল ছক্কায় ১৬ বলে ২১ রান করেছেন। ৪৪তম ওভারে হোপ আউট হলেও রোভম্যান পাওয়েল (২৩ বলে ৩২) আর রোমারিও শেফার্ডের (১৮ বলে ২৫) ছোট্ট ঝোড়ো ইনিংসগুলো ৩০০ পার করিয়ে দেয় উইন্ডিজকে। তবে দিনশেষে তো যথেষ্ট হলো না সেটিও।