বাজে ফর্মের কারণে যে ৫ রেকর্ড ভাঙা কঠিন হবে কোহলির
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়ই বোধ হয় অতিক্রম করছেন বিরাট কোহলি। ব্যাটে রান নেই। সেটা হতেই পারে। কিন্তু কোহলির বাজে ফর্মের যে দিকটা সবাইকে ভাবাচ্ছে, সেটি হচ্ছে এর দীর্ঘসূত্রতা। যেকোনো সংস্করণে সবশেষ ৭৩ ইনিংসে কোহলি কোনো শতরান পাননি। এবারের আইপিএলে তাঁর গড় মাত্র ১৭। ফিফটি করেছেন মাত্র একটি, সেটিও দলে কোনো কাজে আসেনি। অথচ কোহলিই ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন ফর্মে ছিলেন, যখন বলা হতো, ক্রিকেটের প্রায় সব ব্যাটিং রেকর্ডই হয়তো একদিন নিজের করে নেবেন।
কোহলির ফর্মের অবস্থা এখন এমন যে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই তাঁকে বিশ্রামে যেতে বলছেন। এ মুহূর্তে তাঁর বাজে ফর্ম তাঁকে পিছিয়ে দেবে কমপক্ষে পাঁচটি রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার দৌড়ে...
টেস্টের সর্বোচ্চ রান ( ১৫,৯২১—শচীন টেন্ডুলকার)
এ মুহূর্তে টেস্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড শচীন টেন্ডুলকারের—১৫ হাজার ৯২১। ২০০ টেস্টে কিংবদন্তির এ সংগ্রহ। কোহলি এখনো পর্যন্ত টেস্টে রান করেছেন ১০১ ম্যাচে ৮ হাজার ৪৩। স্বাভাবিকভাবেই টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে যেতে হলে নিজের রান দ্বিগুণ করতে হবে কোহলিকে। তবে ২০১৯ সালের পর টেস্টে তিনি কোনো শতরান পাননি। রান হয়তো পেয়েছেন, কিন্তু ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারেননি।
কোহলি এখন যে ফর্মে আছেন বা যে গতিতে রান করছেন, তাতে টেন্ডুলকারের রান ছাড়িয়ে যেতে তাঁকে ৪০ বছরের বয়সের বেশি সময় খেলতে হবে। ক্যারিয়ারও টানতে হবে কমপক্ষে আরও এক যুগ। কোহলি আরও ৬-৭ বছর খেলবেন, এমন প্রত্যাশা আছেই। এটি যদি আরও বছর দুয়েকও বেড়ে যায়, তারপরও শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে যেতে যে ধরনের ফর্ম তাঁর দরকার, সেখানে তিনি কবে ফিরবেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
টেস্টে সবচেয়ে বেশি শতরান ( ৫১, শচীন টেন্ডুলকার)
টেস্টের সর্বোচ্চ ৫১টি শতরান শচীন টেন্ডুলকারের—এ এক অনন্য রেকর্ড। একসময় মনে করা হতো, টেন্ডুলকারের এই রেকর্ড কারও পক্ষেই ভাঙা সম্ভব নয়। কিন্তু বিরাট কোহলি যেভাবে খেলছিলেন, যেভাবে শতরান পাচ্ছিলেন, তাতে টেন্ডুলকারের রেকর্ডটি কিছুটা হুমকির মধ্যেই পড়ে গিয়েছিল। ১০১ টেস্টে কোহলির শতরান এখনো পর্যন্ত ২৭। মন্দ কিছু নয়। কিন্তু ২০১৯ সালের পর টেস্টে তাঁর শতরান না পাওয়াটা উৎকণ্ঠায় ফেলেছে সবাইকে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কেবল তিনজন তারকারই ৪০-এর বেশি শতরান আছে—শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং ও জ্যাক ক্যালিস। কোহলির জন্য এখন এই রেকর্ড ভাঙাটা পর্বতারোহণের মতোই। টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙতে হলে কোহলিকে আগামী ৬-৭ বছরে প্রতিবছর অন্তত ৪টি করে শতরান করতে হবে। ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কোহলি অন্তত তিনটি করে শতরান করেছেন। এর মধ্যে দ্বিশতকও ছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান (৩৪,৩৫৭—শচীন টেন্ডুলকার)
এ রেকর্ডও শচীন টেন্ডুলকারের দখলে। একসময় কোহলি এ রেকর্ড ভাঙবেন, বলা হতো। কিন্তু এ মুহূর্তে রেকর্ডটি ভাঙাই সবচেয়ে কঠিন কোহলির জন্য। এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর রান ২৩,৬৫০। আছেন সপ্তম স্থানে। ২০২০ ও ২০২১ সালে কোহলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যেতে পারেননি। ইদানীং শোনা যাচ্ছে, কোহলি নিজের ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়ে দিতে পারেন। এতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ভাঙা তাঁর জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ শতক (১০০, শচীন টেন্ডুলকার)
২০১২ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকার যখন নিজের শততম আন্তর্জাতিক শতকটি করলেন, তখন রেকর্ডটিকে অমর কিছুই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বিরাট কোহলি একসময় নিজের ফর্ম দিয়ে ধারণাটিকে ভুল প্রমাণ করবেন বলে মনে করা হতো। কোহলি টেন্ডুলকারের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে আছেন, সেটি বলা যাবে না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর শতরানের সংখ্যা ৭০। আর দুটি শতরান পেলেই তিনি ছাড়িয়ে যাবেন রিকি পন্টিংকে। কিন্তু টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙা এখনো তাঁর জন্য অনেক দূরের পথ।
কোহলি যদি আরও ৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন, তাহলে তাঁকে প্রতিবছর ৬টি করে শতরান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাঁর ক্যারিয়ার থেকে তিনটি বছর চলে গেছে, যেটি পুরোপুরি শতকহীন। ২০১৯ সালে কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি টেস্টে সর্বশেষ শতকটি পেয়েছিলেন। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের বাকি যে সময়টুকু আছে, সেটিতে তিনি বছরে ৬টি করে শতরান করবেন, এমনটা আশা করা একটু বাড়াবাড়িই।
টেন্ডুলকারের কথাই ধরুন। ২০১০ মৌসুমে তিনি ৮টি শতরান করেছিলেন। কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপের পর ২০১৩ পর্যন্ত তিনি শতরান পাননি বললেই চলে। তাঁর শততম আন্তর্জাতিক শতরানটি কত অপেক্ষার পর এসেছিল, সেটি সবাই জানে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ শতরান (৪, রোহিত শর্মা)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোহলির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে রোহিত শর্মা আর মার্টিন গাপটিলের। এই তিনজন একে অন্যকে টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ সংগ্রহে ছাড়িয়ে যান প্রায়ই। এ মুহূর্তে রোহিত শর্মাই টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শতরানেও তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে (৪টি)। রানে রোহিতকে কোহলি হয়তো আবারও ছাড়িয়ে যাবেন। কিন্তু শতরানের সংখ্যায়? তাঁর ফর্মের কারণে সেটি একটু দূরের ব্যাপারই মনে হচ্ছে।
কোহলি ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে (আন্তর্জাতিক) ইনিংসের উদ্বোধন করেন না। এ জায়গায় রোহিত শর্মার চেয়ে তিনি পিছিয়ে থাকবেন। তিন নম্বরে ব্যাটিং করেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে শতরান করা যায়। কিন্তু এখানেও বাধা দিচ্ছে তাঁর ফর্ম। কোহলি যদি ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়েও দেন, তাহলে তো সম্ভাবনার দরজা বন্ধই হয়ে যাবে।
টি-টোয়েন্টিতে কোহলির শতরান করার ব্যাপারে দুর্বলতাও আছে। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ফর্মে থাকার সময়ই তিনি শতরান পাননি। এখন পড়তি ফর্মের কোহলি ৫-৬টি শতরান করে ফেলবেন, এমনটা ভাবা একটু কঠিনই।