২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ক্রিকেট আর বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে পরিবার নিয়ে ঢাকায় অনেকটা থিতু হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান কোচ চেয়েছিলেন আরও থাকতে। কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপের পর তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মনে করেছে, এ দেশের ক্রিকেটকে আর দেওয়ার কিছু নেই তাঁর। প্রায় ১১ বছর পর ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব দিয়ে সেই সিডন্সকেই আবার ফেরাচ্ছে বিসিবি। ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার কথা তাঁর। তার আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন নতুন দায়িত্বে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে
নিজের পরিকল্পনার কথা—
প্রশ্ন :
শুরুতেই অভিনন্দন। আবারও বাংলাদেশে আসছেন। পুরোনো জায়গায় নতুন দায়িত্ব, কেমন লাগছে?
জেমি সিডন্স: আবারও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হব, আমি খুব রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশ দলের খেলার ওপর সব সময়ই আমার চোখ ছিল, বিশেষ করে আমি কোচ থাকার সময় যারা দলে ছিল, তাদের ওপর। আবারও তাদের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি এখন।
প্রশ্ন :
আগেরবার দায়িত্বে থাকার সময় বাংলাদেশের মানুষ আপনার ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় বের হলে সবাই পিছু নিত। মনে আছে সেসব দিনের কথা?
সিডন্স: কেন মনে থাকবে না! বাংলাদেশে অসাধারণ সময় কেটেছে আমার। সেখানে আমি এমন কিছু মানুষ পেয়েছি, যারা সারা জীবনের জন্যই আমার বন্ধু হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে। বাংলাদেশে সেই সময়টা খুব উপভোগ করেছি। আশা করি এবারও সে রকমই হবে। দেশটার মানুষগুলো অসাধারণ!
প্রশ্ন :
তখন তো বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন। এবার আসছেন ব্যাটিং পরামর্শকের ভূমিকায়...
সিডন্স: হ্যাঁ, সে সময় প্রধান কোচই ছিলাম। তবে আমার বন্ধু সালাউদ্দিনের সঙ্গে আমি কিন্তু তখন ব্যাটিং কোচের কাজও করেছি। ব্যাটিং আর ফিল্ডিংয়ের প্রতিই আমার টানটা বেশি।
প্রশ্ন :
নতুন দায়িত্বে আপনার কাজের ক্ষেত্র কী হবে?
সিডন্স: বাংলাদেশে গিয়ে কাজ শুরু করার পর আমি প্রথমে সব ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং মূল্যায়ন করব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য আমার নিজস্ব ব্যাটিং দর্শন আছে। সেটি অনুসরণ করেই ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ দেব। আমি খেলোয়াড়দের কথাও শুনব, কোথায় কোথায় তাদের সমস্যা হয় জানব। দেশের বাইরে ভালো দলের বিপক্ষে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা অর্জন করতে তাদের হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে ওদেরকে সে জায়গায় নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য থাকবে।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিশ্চয়ই চোখ রাখবেন। আগে তো সুযোগ পেলেই যেকোনো খেলা দেখতে মাঠে চলে যেতেন…
সিডন্স: ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচদের সঙ্গে তো আমি কথা বলবই, যদি কেউ শুনতে চান ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আমি আমার মতামতও তাঁদের জানাব। আমি আশাবাদী, ওপরের স্তরের ব্যাটিং নিয়ে আমার চিন্তাটা তাঁরা শুনতে চাইবেন।
প্রশ্ন :
গত ১১ বছরে কতটা অনুসরণ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট?
সিডন্স: বর্তমান দলটার খেলার ফুটেজ মাঝে মাঝে দেখেছি। কিন্তু আমি বরাবরই বেশি আগ্রহী ছিলাম তামিম, সাকিব, রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) আর মুশির (মুশফিক) খেলার প্রতি। কারণ, আমি তাদের কোচ ছিলাম এবং আমার সময়েই তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে।
প্রশ্ন :
টি–টোয়েন্টি ও টেস্ট ক্রিকেটেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বেশি সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে টি–টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটারের সংকটে ভোগে দলটা। এদিকে নিশ্চয়ই আপনার দৃষ্টি থাকবে…
সিডন্স: টি–টোয়েন্টি শক্তির খেলা। দেশের বাইরে যদি আমরা ভালো দলগুলোকে চোখ রাঙাতে চাই, আমাদের তাহলে কিছু শক্তিশালী ব্যাটসম্যান প্রয়োজন হবে। আমরা দেখছি, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কম স্কোর রেখে ম্যাচ জিততে পারছে, কিন্তু দেশের বাইরে গিয়ে কাজটা কঠিন হবে। আমার ইচ্ছা প্রধান কোচের সঙ্গে পরামর্শ করে ফিটনেস ট্রেনারের সহায়তায় পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করার। বাংলাদেশেও পাওয়ার হিটার তৈরি করা সম্ভব। এখন তো বাউন্ডারিই টি–টোয়েন্টি ম্যাচ জেতায়, জোরে মারতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের উইকেট সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে। এ ধরনের উইকেটে খেলে খেলায় উন্নতি আনা কতটা সম্ভব?
সিডন্স: ঘরের মাঠে এখন যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়, এখানে খেলে আসলে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা জানি দেশের বাইরে গিয়ে খেলার জন্য প্রতিদিন কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রশ্ন :
অনুশীলনে নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করেন আপনি। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকা অবস্থায় সেটা যেমন দেখিয়েছেন, নিজের একাডেমিতেও ব্যবহার করেছেন নিত্য নতুন কৌশল আর প্রযুক্তি। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবেও নিশ্চয়ই সে রকম চিন্তা থাকবে…
সিডন্স: দেখুন ব্যাটসম্যানরা যাতে সুইং, বাউন্স আর গতিময় বলের বিপক্ষে খেলে অনুশীলন করতে পারে, সে জন্য অনুশীলনে আমাদের আরও সৃষ্টিশীল কিছু করতে হবে। আমাকে আগে দেখতে হবে সেখানে কী কী সুযোগ–সুবিধা আছে। প্রধান কোচ এবং মাঠে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে হবে, কোন কোন জায়গায় আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশ দলে আপনার পুরোনো ছাত্র যাঁরা আছেন, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে তাঁদের কাছ থেকে দলে কী ধরনের ভূমিকা আশা করেন?
সিডন্স: সাকিব, তামিম, মুশি, রিয়াদ—ওরা সবাই বিশ্বমানের খেলোয়াড় এবং আমার আশা পরবর্তী ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ পর্যন্ত তারা দলে থাকবে। ছোটবেলায় ভালো কোচের অধীনে থাকায় শুরু থেকেই ওরা ভালো খেলেছে। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করব দলের আবহটা কেমন, ভবিষ্যতে তারা কী আশা করে।
প্রশ্ন :
কিন্তু ভবিষ্যতে তাঁদের জায়গা নিতে পারে, এমন সম্ভাবনা এখনো তরুণদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। তরুণদের নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা কি থাকবে আপনার?
সিডন্স: আমার বিশ্বাস, ওখানে অনেক প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড় আছে, যাদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় হিসেবে প্রস্তুত করা সম্ভব। পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটসম্যানরা যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে পারে, সে জন্যও আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।