সাক্ষাৎকারে শন টেইট
বাংলাদেশ চাইলে ভারতকে অনুকরণ করতে পারে
এর আগে বিপিএলে এসেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে। এবার শন টেইট এলেন বিপিএলের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বোলিং কোচ হিসেবে। নিজের সময়ে টেইট ছিলেন সবচেয়ে গতিময় ফাস্ট বোলারদের একজন, ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করার রেকর্ডও আছে তাঁর।
প্রথম আলোর সঙ্গে সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের সাক্ষাৎকারে খুব স্বাভাবিকভাবেই বেশি কথা হয়েছে ফাস্ট বোলিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। এসেছে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিংয়ের প্রসঙ্গও।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: গত চার-পাঁচ বছরে ফাস্ট বোলিংয়ে কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?
শন টেইট: ফাস্ট বোলারদের স্থায়িত্ব অনেক বেড়েছে। বেশির ভাগ ফাস্ট বোলার এখন খুবই ফিট। তাঁরা একই গতিতে সারা দিন বল করে যেতে পারেন, সঙ্গে নিয়ন্ত্রণও থাকে অবিশ্বাস্য। জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্কের কথাই ধরুন। আর শুধু যে অস্ট্রেলিয়া, তা কিন্তু নয়। অন্যান্য দেশেও ফাস্ট বোলিংয়ের ছবিটা এ রকমই।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: পেসাররা সব সময় ফাস্ট ও নিখুঁত বোলিং করবেন—এটাই কি ফাস্ট বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ?
টেইট: এটাই তো আদর্শ, তা–ই না? আমাদের সময়ের চেয়ে এখনকার সময়ে এই জায়গায় অনেক উন্নতি এসেছে। আমি তো স্টাম্পের ১০ হাত বাইরে দিয়েও বল করেছি (হাসি)।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: আগে দুই-তিনটি দলে ফাস্ট বোলিংয়ের গভীরতা দেখা যেত। এখন প্রায় সব দেশেই চার-পাঁচজন বিশ্বমানের ফাস্ট বোলার আছেন...
টেইট: একসময় আমরা ভাবতেই পারতাম না যে উপমহাদেশ থেকে ভালো ফাস্ট বোলার বের হবেন। এখন তো তাসকিনরাও ভালো করছেন। শ্রীলঙ্কায়ও তিন-চারজনের নাম শুনছি, যাঁরা ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ৯০ মাইলে বল করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নরকিয়ার মতো ফাস্ট বোলারের জায়গাই হয় না! অথচ তিনি নিয়মিত ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারে বল করেন। অ্যান্ডারসন ও ব্রডের পর ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলিং কোন দিকে যায়, সেটা দেখতে হবে। কিন্তু আপনি যদি দেখেন—ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে ফাস্ট বোলারদের লম্বা লাইন লেগেছে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: আপনারা যখন খেলেছেন, তখন সারা বিশ্বে হাতেগোনা তিন-চারজন ছিলেন, যাঁরা খুব জোরে বল করতেন...
টেইট: হ্যাঁ, ব্রেট লি, শোয়েবরা খুব জোরে বল করতেন। এখন সেটা কম দেখি। কিন্তু এখন যাঁরা আছেন, তাঁরা খুবই ধারাবাহিক গতির বোলার। ১৫০-এ না হলেও প্রায় সবাই এখন নিয়মিত ১৪০-এ বল করে অভ্যস্ত। একজন সাবেক ফাস্ট বোলার হিসেবে এটা দেখতে ভালোই লাগে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: ফাস্ট বোলিংয়ের এই পরিবর্তন বিশ্বের বড় বড় ব্যাটসম্যানদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে?
টেইট: আগে যেকোনো দলে দুই-একজন দারুণ ফাস্ট বোলার থাকতেন, তাঁদের সামলে নিলেই বাকিদের বিপক্ষে রান করা যেত। এখন সে সুযোগ নেই। ইংল্যান্ডের কী হলো এবারের অ্যাশেজে দেখেছেন তো, আমাদের পঞ্চম বোলার ক্যামেরন গ্রিনও ফাস্ট ও নিখুঁত। আশা করি খেলাটা এমনই থাকবে। এটা ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ, যেটা অস্ট্রেলিয়া ও ভারত করতে পারছে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের কেমন দেখছেন?
টেইট: বাংলাদেশ চাইলে ভারতকে অনুকরণ করতে পারে। আগে ভারতে ফাস্ট বোলার বলতে ছিলেন শুধু জহির খান। ফাস্ট বোলিংয়ের কোনো গভীরতা ছিল না। গত পাঁচ-ছয় বছরে চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বুমরা, শামি, সিরাজ, যাদব, সাইনির মতো ফাস্ট বোলাররা উঠে এসেছেন। আইপিএল এতে সাহায্য করেছে। বিপিএলও যদি সেটা করতে পারে, তাহলে তাসকিনদের পেছনেও দেখবেন লম্বা লাইন লাগবে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তান ক্রিকেটে কাজ করেছেন। সেখানেও স্পিনের দাপট বেশি। কীভাবে একটি স্পিনকেন্দ্রিক ক্রিকেট সংস্কৃতিতে পেস বোলিংয়ের বিপ্লব ঘটানো যায়?
টেইট: আমার কাছে সব উত্তর নেই। তবে এক জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। সে জন্য কিছু আগ্রহী, নিবেদিতপ্রাণ কোচ দরকার, যাঁরা নিরলসভাবে পেসারদের নিয়ে কাজ করে যাবেন। একটি প্রজন্ম যদি দাঁড়িয়ে যায়, তারাই যদি তারকা হয়, তাহলে দেখবেন, তাদের দেখাদেখি আরও অনেকেই বল ঘোরানো বাদ দিয়ে জোরে বল করবেন।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: তাসকিন আহমেদের সঙ্গে শুনেছি আপনার ভালো যোগাযোগ। ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁর লাইন-লেংথ অনেকটাই এলোমেলো ছিল। এখন নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেছেন। তাঁর পরিবর্তনটা নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়েছে!
টেইট: তাসকিনের সঙ্গে বিপিএল খেলতে এসেই পরিচয়। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। দেখে মনে হচ্ছে তিনি ফিটনেসে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। এখন বেশ শক্তিশালী মনে হয় তাঁকে। গতিও বেড়েছে। ভালো জায়গায় বল করেন। নিয়ন্ত্রণ রেখে যদি কয়েক মাইল গতি বাড়ানো যায়, তাহলে খেলাটাই বদলে যায়। তাসকিন তার প্রমাণ।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: কদিন আগেই নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলীয় হিসেবে নিশ্চয়ই কিউইদের হার উপভোগ করেছেন!
টেইট: হ্যাঁ, বেশ উপভোগ করেছি (হাসি)। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই এই অর্জনে বেশ খুশি। আমরা সবাই জানি, নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জেতা সহজ নয়। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো লক্ষণ।