বাংলাদেশ কোথায় পিছিয়ে দেখিয়ে দিল আফগানিস্তান
শুরুটা এমন হবে আশা করেনি বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়েই শুরু হবে পথচলা। কিন্তু বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী দল টুর্নামেন্টের শুরুটা করেছে হার দিয়ে। গতকাল উস্টারশায়ারের কিডারমিনস্টার লোকালয়ের এক মাঠে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান।
ইংল্যান্ডে সপ্তাহে শুরুর দিন। কিন্তু কিডারমিনস্টারের মাঠে আজ ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড সিরিজের শুরুর দিনে দর্শকের অভাব ছিল না। পরিবার-পরিজন নিয়ে রীতিমতো উৎসবের আবহে খেলা দেখেছেন দর্শকেরা। কখনো রোদ কখনো মেঘের লুকোচুরি থাকলেও দিনটা ছিল চমৎকার। আর এমন দিন স্বাগতিক দর্শকদের জন্য আরও আনন্দময় হয়েছে দিনের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের জয়ে। একেবারে খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকেরা।
ইংল্যান্ডের ম্যাচের পরপরই ছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ। এ ম্যাচেও উৎসব-আবহের কমতি ছিল না। এ ম্যাচ জিততে পারলে উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হয়নি। ব্যাটে-বলে বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী দল আজ যেন নিজেদের মধ্যে ছিল না। টস জিতে অধিনায়ক দ্রুপম পত্রনবিশ ব্যাটিং নিলেও রান তোলার লড়াইটা ঠিকঠাক করতে পারেনি বাংলাদেশ। টপ অর্ডার ভেঙে পড়ার পর ১৩৩ যথেষ্ট ভালো সংগ্রহই ছিল। রানটা আরও বড় হতে পারত। কিন্তু কেউই ইনিংসগুলোকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে না পারায় আফগানদের খুব বড় চ্যালেঞ্জ জানানো যায়নি। বাংলাদেশের পক্ষে রান পেয়েছেন কেবল দুজন—শাহরিয়া শামীম ও অধিনায়ক দ্রুপম। শামীমের ২৮ আর দ্রুপমের ২৯ রানের সঙ্গে আরও একজন-দুজন রান পেলেই সংগ্রহটা বাড়তে পারত। কিন্তু তা হয়নি।
১৩৪ রানের লক্ষ্যটা খুব সহজও ছিল না, কঠিনও ছিল না। কিন্তু লক্ষ্যটাকে সহজ বানিয়ে ছাড়েন আফগান ব্যাটসম্যান আশরাফ খান করিমি। মূলত তাঁর কাছেই হেরে যায় বাংলাদেশ। আশরাফ ৪৯ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলেছেন ৮টি চার ও ৬টি ছয়ের মারে। শারীরিক প্রতিবন্ধী একজন ব্যাটসম্যান যে ক্রিকেট বলে যে এত নিখুঁতভাবে স্ট্রোক খেলতে পারেন, সেটি না দেখলে বোঝা যাবে না। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন জামিল শাহ মানদোজাই। তিনি ৩১ বলে করেন ৩৯ রান।
আন্তর্জাতিক রেডক্রসের (আইসিআরসি) সহযোগিতায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী দলটির যে আরও পরিচর্যা প্রয়োজন, সেটি আজ বোঝা গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টেকনিক্যাল সহযোগিতা চালিয়ে গেলেও এটি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। আফগানিস্তান দলটিকে দেখে মনে হয়েছে এই টুর্নামেন্টে খেলতে তাদের প্রস্তুতিটা হয়েছে নিখুঁত। তাদের টেম্পারামেন্টও ছিল দুর্দান্ত। কোন বল মারতে হবে, কোন বল ছাড়তে হবে সে সম্পর্কে দারুণ ধারণা তাদের। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট উইংয়ের প্রধান আল্লাদাদ নূরি জানালেন দলকে গড়ে তুলতে তাদের উদ্যোগের কথা, ‘আমাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নিজেদের তৈরি করছে।’
এই জায়গাতেই পিছিয়ে বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা। নিয়মিত ম্যাচ খেলারই সুযোগ হয় না তাদের। এ ব্যাপারে বিসিবির অনেক কিছুই করার আছে। ভবিষ্যতে হয়তো এ ব্যাপারে উদ্যোগ দেখা যাবে। কারণ বিসিবির শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট উইং কাজ শুরু করেছে খুব বেশি দিন হয়নি।
প্রথম ম্যাচে হারলেও বাংলাদেশের আশা শেষ হয়ে যায়নি। অধিনায়ক দ্রুপম আজকের দিনটিকে ‘বাজে দিন’ই মনে করতে চান, ‘দিনটা আমাদের পক্ষে ছিল না। দুর্ভাগ্য আমাদের। আমরা আজকের বাজে পারফরম্যান্স ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাই। ব্যাটিংটা খুব বাজে হয়েছে। আমরা পরের ম্যাচগুলোতে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করব।’
‘ঘুরে দাঁড়ানো’র জন্য আরও তিনটি ম্যাচ হাতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট পরপর তিনটি ম্যাচ ভারত, পাকিস্তান ও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ম্যাচ তিনটি হবে যথাক্রমে ওল্ড এলিজাবেথানস সিসি, বার্ন গ্রিন সিসি ও ব্রমসগ্রভ মাঠে।