বাঁহাতিদের যম যখন মেহেদী
সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান—বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণের মূল স্তম্ভ এ দুজন। প্রতিপক্ষ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ দলের মূল বোলারের ভূমিকাটা আর এ দুজনের থাকে না। সেটা এখন চলে যায় মেহেদী হাসানের কাছে। ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান—বাঁহাতি মারমুখী ব্যাটসম্যানে ভরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ। এখানে তো মেহেদীর অফ স্পিনই যে বেশি কার্যকরী হওয়ার কথা। আজ শারজায় হয়েছেও তাই।
নিজের প্রথম স্পেলে তিন ওভার বল করে মাত্র ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে মেহেদী সেটাই প্রমাণ করেছেন। শারজার মন্থর উইকেটে নিখুঁত লাইন-লেংথে গতি কমিয়ে বাড়িয়ে ক্যারিবীয় টপ অর্ডারের রান থামিয়ে দেন মেহেদী। ফল হিসেবে পেয়েও যান দুটি উইকেট।
ক্রিস গেইলকে আউট করা মেহেদীর জন্য নতুন কিছু ছিল না। এর আগে তিনবার মেহেদীর অফ স্পিনে আউট হয়েছেন ‘ইউনিভার্স বস’। সব কটিই অবশ্য বিপিএলে। আজ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের সামনে এ কারণেই হয়তো মেহেদীকে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসের ফলও পেয়েছেন, মেহেদীকে তুলে মারতে গিয়ে ফ্লাইটে পরাস্ত হয়ে সরাসরি বোল্ড হন গেইল। চতুর্থবারের মতো গেইলকে আউট করতে মেহেদীর লেগেছে মাত্র পাঁচ বল, রান নিয়েছেন মাত্র ২।
ততক্ষণে মেহেদীর ২ ওভার শেষ। সাধারণত প্রথম স্পেলে কাউকে ২ ওভারের বেশি বোলিং করতে দেখা যায় না। কিন্তু উইকেটে যে তখনো ছিলেন বাাঁহাতি ব্যাটসম্যান হেটমায়ার। এ কারণেই পাওয়ারপ্লের ঠিক পরের ওভারেই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আরেক ওভারের জন্য মেহেদীকে বল তুলে দেন।
সেই ওভারেই রোস্টন চেজ মেহেদীর বলে ফিরতি ক্যাচ তোলেন। কিন্তু নিজের বোলিংয়ে সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি মেহেদী। অবশ্য সেই ওভারেই ক্ষতি পুষিয়ে দেন ২৬ বছর বয়সী স্পিনার। হেটমায়ারকে ফ্লাইটে পরাজিত করে লং অফ বাউন্ডারিতে থাকা সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন মেহেদী। আউট হওয়ার আগে মেহেদীর তিনটি বল খেলে তিন রান করেছেন তিনি।
বাঁহাতিদের বিপক্ষে মেহেদীর রেকর্ড আগে থেকেই ভালো। টি–টোয়েন্টিতে ২৪ ইনিংসে মেহেদীর ২২ উইকেটের ১৪টিই বাঁহাতিদের বিপক্ষে। বাঁহাতিদের বিপক্ষে মেহেদী উইকেট নেন অবিশ্বাস্য ৮ গড়ে। আজ আরেকবার সেটির প্রমাণ পাওয়া গেল।
আজ টপ অর্ডারের আরেক বাঁহাতি এভিন লুইসকে আগেই আউট করেন মোস্তাফিজুর রহমান। পাওয়ারপ্লেতে এক ওভারের পর মোস্তাফিজকে আবার ১১তম ওভারে বোলিংয়ে আনেন মাহমুদউল্লাহ। দলের মূল বোলার সাকিবকেও ততক্ষণে দরকার হয়নি বাংলাদেশ দলের। ১২তম ওভারে বোলিং করতে আসেন তিনি। এর আগে শরীফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদকে ব্যবহার করেন মাহমুদউল্লাহ।
বাংলাদেশি বোলারদের দাপটের দিনে ইনিংসের ১৬ ও ১৮তম ওভারে যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ রান করে নিয়ে ক্যারিবীয় ইনিংসে গতি ফেরান পুরান। শেষ ওভারে আরও একটি বড় ওভার পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মোস্তাফিজের ওভারে জেসন হোল্ডার ও কাইরন পোলার্ড মিলে ১৯ রান যোগ করেন। তাতে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৩ রান। শুরুর বোলিং পারফরম্যান্সটা শেষের এলোমেলো বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে কিছুটা রং হারায়। তবে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বল হাতে দারুণ শুরুর কৃতিত্বটা মেহেদীদের দিতেই হবে।