বল টেম্পারিং নিয়ে মুখ খুললেন স্মিথ
>বল-টেম্পারিং ঠেকাতে পারেননি—অধিনায়ক হিসেবে এটিকে নিজের ব্যর্থতা হিসেবে স্বীকার করেছেন স্টিভ স্মিথ
নিষেধাজ্ঞা এখনো কাটেনি। গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে বল টেম্পারিং করেছিলেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে সে ঘটনা আগেই জানা ছিল স্টিভ স্মিথের। এতে সায় দেওয়া আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছেন স্মিথ। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও মার্চের আগে অস্ট্রেলিয়া দলে ফেরার সুযোগ নেই। তবে ফেরার প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন স্মিথ। ভোডাফোনের সঙ্গে চুক্তি করে তরুণদের সাবধান করার জন্য একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন। আর আজ প্রথমবারের মতো বল টেম্পারিংয়ের সে ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন স্মিথ। সেখানেই তাঁর দৃষ্টিতে ঘটনাটা কেমন ছিল সেটা বর্ণনা করেছেন, ‘আমার ধারণা, যা হয়েছে সেটা নিয়ে অনেক লেখাই হয়েছে। আমার কাছে যা মনে হয়েছে তা হলো, আমি একটা কিছু ঘটতে দেখেছি,তার পাশ দিয়ে গিয়েছি এবং সেটা বন্ধ করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমি তা থামাইনি। এটা আমার নেতৃত্বের ব্যর্থতা। কোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনা ছিল এবং সেটা মাঠে ঘটেছে। আমার সুযোগ ছিল সেটা ওই সময়েই থামিয়ে দেওয়ার, আমার উচিত হয়নি এটা ভাবা যে, “কী হচ্ছে সেটা আমার না জানাই ভালো!” নেতা হিসেবে আমি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি এবং আমি এর পুরো দায় নিচ্ছি।’
স্মিথের ভাষ্য অনুযায়ী বল বিকৃতির ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না অধিনায়ক। অর্থাৎ বল বিকৃতির মূল দায়টা সহ–অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের। আর ওয়ার্নারের কথা শুনে বল বিকৃত করেন ব্যানক্রফট। স্মিথ শুধু জানতে পেরেছিলেন এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে কিন্তু বাধা দেননি। তাহলে কি এর আগেও এমন কিছু ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়া দলে? বিশ্ব ইতিহাসে ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে ব্র্যাডম্যানের রেকর্ডকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া স্মিথ দাবি করছেন এটাই ছিল বল বিকৃতির প্রথম ঘটনা, অন্তত তাঁর জানামতে, ‘আমি যত দূর জানি এটাই প্রথম ঘটনা। বিশ্বের অন্য দলগুলো ওই পরিস্থিতিতে কী করত, সেটা নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। যেকোনো খেলাতেই আপনি বলকে সুইং করাতে চাইবেন কিন্তু সেটা অবশ্যই সঠিক উপায়ে হতে হবে।’
সেদিন আসলেই কী হয়েছি, এ প্রশ্নের উত্তরে স্মিথ জানিয়েছেন, ‘মূল পরিকল্পনা আগের দিন রাতেই হয়েছে, আমি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবলাম, “কী হচ্ছে আমি জানতে চাই না।” ওটাই আমার সুযোগ ছিল, যেখানে ঘটনাটা ঘটা থামাতে পারতাম এবং গত নয় মাসে আমি এই শিক্ষাই পেয়েছি। জীবনে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই নেতিবাচক হতে পারে যদি দান উল্টে যায়। আর যদি ফলাফল ভালো হয় তখন আরেক রকম দেখায়। শিক্ষা নেওয়ার বিষয়টা এখানেই। নিজের চিন্তার গতি কমিয়ে এনে নিশ্চিত করতে হবে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হচ্ছে।’
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় কাটাচ্ছেন স্মিথ। তবে এ সময়টাকেও মেনে নিতে শিখেছেন। কারণ, অনেক সমর্থকই স্মিথের পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন, ‘আমি ঠিক আছি। বেশ কঠিন কিছুদিন কাটিয়েছি। অনেক উত্থান এসেছে, পতন এসেছে। কিন্তু আমি ভাগ্যবান আমার আশপাশে অনেক কাছের মানুষ ছিল। তারা অনেক সাহায্য করেছে কঠিন সময় পার করতে। এমন দিন গেছে যেদিন বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করেনি। কিন্তু কাছের মানুষেরা আমাকে বুঝিয়েছে, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি একটা ভুল করেছি এবং এটা ভয়ংকর ভুল ছিল। কিন্তু আমি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। একজন মানুষ হিসেবে উন্নতি করার চেষ্টা করছি। অধিকাংশ সমর্থক ইতিবাচক ছিল। অস্ট্রেলিয়ার মানুষ অনেক ভালো এবং ক্ষমাশীল। কিন্তু আমাকে এখনো অনেক কাজ করতে হবে অস্ট্রেলিয়ানদের আস্থা ও শ্রদ্ধা ফিরে পাওয়ার জন্য। আমি সে চেষ্টাই করব।’