‘বর্ণবাদে’র অভিযোগেই কি ধারাভাষ্যে ইতি টানলেন ডেভিড লয়েড
ইয়র্কশায়ারের সাবেক ক্রিকেটার আজিম রফিক সম্প্রতি তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে। তাঁর বর্ণবাদের অভিযোগের তির বিঁধেছে ইংলিশ ক্রিকেটের অনেক রথী-মহারথীর বুকেই। শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার ও কর্তাব্যক্তিদের বর্ণবাদী আচরণে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অভিযোগ ছিল আজিম রফিকের।
আজিম রফিকের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় আছেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভন, গ্যারি ব্যালান্সরা। এমনকি তিনি অভিযোগ তুলেছেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার, ইংল্যান্ডের সাবেক কোচ ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ডেভিড লয়েডের বিরুদ্ধেও। সেই লয়েডই গতকাল এক টুইটে ধারাভাষ্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। হঠাৎ করেই লয়েডের এই অবসর ঘোষণার পেছনের কারণ কি তবে আজিম রফিক!
আজিম রফিকের এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে ব্রিটিশ সাংসদদের নিয়ে গড়া একটি সংসদীয় কমিটি। ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের চেয়ারম্যান রজার হাটন থেকে শুরু করে ইংলিশ ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসনকেও হাজিরা দিতে হয়েছে সে কমিটির সামনে। ভন তো এরই মধ্যে হারিয়েছেন বিবিসির ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের চাকরি। লয়েড অবশ্য ক্ষমা চেয়েছিলেন আজিমের কাছে। আজিমের অভিযোগ ছিল লয়েড তাঁর সহধারাভাষ্যকারদের কাছে মুঠোফোনে এশিয়ান ক্রিকেটারদের নিয়ে মন্তব্য করে খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘ক্লাব হাউস একটা ক্রিকেট ক্লাবের প্রাণ। কিন্তু এশিয়ান ক্রিকেটাররা সেখানে যান না।’
লয়েডের ধারাভাষ্য থেকে সরে যাওয়ার সঙ্গে অনেকেই এই অভিযোগের যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন। তিনি নিজে অবশ্য টুইটারে আজিমের অভিযোগ নিয়ে কিছু বলেননি। কারণ হিসেবে বলেছেন ধারাভাষ্যকক্ষে নিজেকে ‘একা’ লাগার বিষয়টি। স্কাই স্পোর্টসে তাঁর সহধারাভাষ্যকারদের অনেকেই কাজটা ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ডেভিড গাওয়ার, মাইকেল হোল্ডিং ও ইয়ান বোথাম। লয়েডের আরেক বিখ্যাত সহধারাভাষ্যকার বব উইলিস তো দুনিয়া ছেড়েই চলে গেছেন, দুই বছর হয়ে গেল। ধারাভাষ্যকক্ষে নিজেকে বড্ড একা লাগছিল বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জানিয়েছেন লয়েড।
লয়েড লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, মাইক্রোফোন ছেড়ে দেওয়ার এখনই সঠিক সময়। যে খেলাকে আমি ভালোবাসি, সেটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে গেছি, সেটি বিশাল একটি ব্যাপার।’
ধারাভাষ্যের স্মৃতিচারণা করে লয়েড কিছুটা নস্টালজিকও হয়েছেন তাঁর টুইটে, ‘অনেক অনেক দারুণ স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছি। দুর্দান্ত সব খেলা দেখেছি, দারুণ সব পারফরম্যান্সের সাক্ষী আমি। আমি খুবই ভাগ্যবান যে ধারাভাষ্যের কারণে দুনিয়া ঘুরতে পেরেছি। আমি ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে অ্যাশেজ সিরিজের বীরত্বগাথা, হারের লজ্জা—দুটোই ভাগ নিয়েছি। বিশ্বকাপের বড় বড় পারফরম্যান্স আর হৃদয় ভেঙে যাওয়া দুঃখগাথারও সাক্ষী আমি। ২০১৩ সালে আমার গুরু বিল লরির সঙ্গে ধারাভাষ্যকক্ষ ভাগাভাগি করে নিতে পারা আমার জীবনের দারুণ এক স্মৃতি।’
ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র ৯ টেস্ট ও ৮ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন লয়েড। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তাঁর ক্যারিয়ার ছিল দুর্দান্ত। ইংল্যান্ড দলের কোচও হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ধারাভাষ্যকার হিসেবে স্কাই স্পোর্টসে যুক্ত হন।
৭৪ বছর বয়সী লয়েড স্কাই স্পোর্টসের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারদের একজন। ইয়র্কশায়ার উচ্চারণে ক্রিকেট বিশ্লেষণ আলাদা একটা মাত্রা দিয়েছিল তাঁর ধারাভাষ্যে। খেলার বর্ণনার পাশাপাশি মাঠে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনা চমৎকার রসবোধে তুলে ধরতেন দর্শকদের কাছে।