একসময় দুজন একসঙ্গে পথ চলেছেন। ২২ গজে নেমেছেন একই সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার জয়ে হেসেছেন, হারে কেঁদেছেন? না, স্টিভ ওয়াহ-রিকি পন্টিংদের সেই অস্ট্রেলিয়া কান্না কী জিনিস, জানত না।
আগ্রাসী ক্রিকেট ছিল সেই সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের ‘ট্রেডমার্ক’। তাতে ম্যাথু হেইডেন ও জাস্টিন ল্যাঙ্গার ছিলেন ‘একই বৃন্তে দুটি কুসুম’—যেহেতু দুজনে ওপেনিং জুটি ছিলেন।
বোঝাপড়াটা তাই আপনাই হয়েছে। ল্যাঙ্গার-হেইডেন বহুবার সেরা সতীর্থ হিসেবে বেছে নিয়েছেন একে অপরকে। এই তো কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়া দলে ল্যাঙ্গারের কোচিং-স্টাইল নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে, হেইডেন তাঁর বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ল্যাঙ্গার ‘একজন কিংবদন্তি। এক শর বেশি টেস্ট খেলা’ বন্ধুর অসম্মান হেইডেনের গায়ে বিঁধেছিল। কিন্তু আজ কি হবে?
দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি পাকিস্তান। ল্যাঙ্গার অস্ট্রেলিয়া দলের প্রধান কোচ। এদিকে হেইডেন পাকিস্তান দলের ব্যাটিং পরামর্শক। এত দিনের বন্ধুত্বের সাইনবোর্ড সরিয়ে দুজনকে দিতে হবে পেশাদারির পরীক্ষা। সে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নাম হতে পারে—আপাতত শত্রু তুমি...।
বন্ধুত্বের মোড়কটা ঘণ্টা তিনেকের জন্য দুজনকেই সরিয়ে রাখতে হবে। বের করে আনতে হবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের চিরায়ত সেই আগ্রাসী রূপ—তা প্রোথিত করতে হবে শিষ্যদের অন্তরে। ম্যাথু হেইডেন যেমন বাবর আজমদের কাছে ল্যাঙ্গারের কৌশল-রহস্য উন্মোচন করবেন, তেমনি ল্যাঙ্গারও হয়তো অ্যারন ফিঞ্চদের বোঝাবেন, হেইডেনের মতো বাবর-রিজওয়ানরা ক্রিজ ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে বোলারদের মারতে এলে কী করতে হবে।
একে অপরকে খোলনলচে জেনে প্রতিপক্ষ হওয়ার সুবিধা তো এটাই!
ল্যাঙ্গার-হেইডেনকে আজ সে সুবিধারই পূর্ণ প্রয়োগ ঘটানোর পরীক্ষা দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়া কোচ সে প্রস্তুতিটা আগেই নিয়ে রেখেছেন। ল্যাঙ্গার আগেই বলে রেখেছেন, ‘টুর্নামেন্টজুড়েই আমরা খুদে বার্তা চালাচালি করেছি। ভেতরের কথা ফাঁস করিনি অবশ্য। তাকে দেখে ভালো লাগবে, অনেক দিন দেখা হয়নি। তবে ক্রিকেটে তো এমন সম্পর্ক অনেক আছে। বৃহস্পতিবার আমরা তা তিন ঘণ্টার জন্য সরিয়ে রাখব। নিজেদের কাজটা করব, আশা করি মজা হবে।’
মজাটা হেইডেনও টের পাচ্ছেন। তবে একটু অন্য রকম দৃষ্টিকোণ থেকে। এখন হেইডেনকে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। ১১৩ ইনিংসে যার সঙ্গে ওপেনিংয়ে জুটি বেঁধেছেন, সেই ল্যাঙ্গারের মুখোমুখি হওয়াটা হেইডেনের কাছে এমনই এক যুদ্ধ, ‘আমার জায়গা থেকে দেখলে চ্যালেঞ্জটা হৃদয়ের। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যা যা ঘটবে, সেটাই মনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ।’
কাল সংবাদ সম্মেলনে হেইডেন এ কথা বলার সময় বাস্তবতাও মনে করিয়ে দেন, ‘জাতীয় দলের কোচ কিংবা ব্যাটিং কোচ হিসেবে জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও আমার অবস্থান ঠিক একই জায়গায়—কেউ ম্যাচ জেতাতে পারে না। মাঠে নামা ১১ জনই দলকে জেতায়। আমরা শুধু পেছন থেকে সাহায্য করতে পারি।’
টেস্ট ওপেনিং জুটিতে রান তোলায় এখনো দ্বিতীয় সেরা (৫৬৫৫ রান) জুটি হেইডেন-ল্যাঙ্গার। এই অভিজ্ঞতার প্রতিটি কণা আজ দুই বন্ধুর একে অপরের বিপক্ষে কাজে লাগানোর পালা।