শহীদুল ইসলামের বলটা লেগ সাইডে খেলে নিলেন সিঙ্গেল, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক পাওয়ার পর আন্দ্রে ফ্লেচার মাতলেন বুনো উল্লাসে। লাফ দিলেন, হেলমেট খোলার পর বসে পড়েও চলল উদ্যাপন। ফ্লেচার যে ইনিংস খেলেছেন, তাতে এমন উল্লাস তাঁকেই মানায়! খুলনা টাইগার্সের ডাগ-আউট তখন হয়ে উঠেছে আরও খ্যাপাটে, কেউ তো চেয়ারও তুলে নিয়েছেন মাথার ওপর।
মেহেদী হাসান অবশ্য ফ্লেচারের মতো উল্লাসের সুযোগ পাননি, ৪৮ বলে ৭৪ রান করে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তবে এ দুজনের ১৮২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত করেছে খুলনা। তাতেই ম্লান হয়ে গেছে ফাফ ডু প্লেসির শতক, হেরে গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। কুমিল্লার ১৮২ রান খুলনা টপকে গেছে ৯ বল বাকি থাকতেই! কুমিল্লা হারায় টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে তামিম-মাহমুদউল্লাহর ঢাকা। এলিমিনেটরে এখন খুলনা খেলবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে।
আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করা কুমিল্লা এদিন এনেছিল তিনটি পরিবর্তন। খেলেননি অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, লিটন দাস ও মোস্তাফিজুর রহমান। ইমরুল-লিটনের অভাব সেভাবে টের পেতে দেননি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ডু প্লেসি, তবে বোলিংয়ে মোস্তাফিজের অভাবটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে কুমিল্লা। ফ্লেচার-মেহেদীকে যে থামাতেই পারেনি তারা সময়মতো!
জিতলে প্লে-অফ নিশ্চিত, হারলে বিদায়—এমন সমীকরণে বড় রান তাড়ায় খুলনা ইনিংস উদ্বোধন করতে ফ্লেচারের সঙ্গে পাঠায় মেহেদীকে। প্রথম ওভারে নাহিদুল ইসলাম দেন মাত্র ৩ রান। দ্বিতীয় ওভারে আবু হায়দারকে মিডউইকেট দিয়ে চারের পর পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছয় মারেন ফ্লেচার, ঝড়টাও শুরু হয় সেখান থেকেই। নাহিদুল, সুনীল নারাইন, তানভীর ইসলাম বা পরে শহীদুল ইসলাম ও মঈন আলী—কেউই শান্ত করতে পারেননি ফ্লেচার-মেহেদীকে।
মেহেদী অবশ্য আক্রমণে যোগ দিয়েছেন ফ্লেচারের তুলনায় একটু পর থেকে। ফ্লেচার ৪টি ছয় মারার পর নিজের প্রথমটি মারেন তিনি, ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে। পাওয়ারপ্লেতেই খুলনা তুলে ফেলে ৬৯ রান, এ মৌসুমে যা কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
পাওয়ারপ্লে শেষ হলেও অবশ্য দুজনের ঝড় থামেনি। সপ্তম ওভারে ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক পান ফ্লেচার, মাত্র ২৫ বলেই। ১২তম ওভারে এসে দুই ডানহাতির সামনে অফ স্পিনার মঈন আলীকে আনেন ডু প্লেসি, ফ্লেচারকে এলবিডব্লুও করেন। ৭১ রান করে হতাশ হয়ে প্রায় উঠেই যাচ্ছিলেন ফ্লেচার, শেষ মুহূর্তে মেহেদীর পরামর্শেই নেন রিভিউ। এডিআরএসে রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন, ইমপ্যাক্ট ছিল বাইরে। ফ্লেচারকে এরপর আর থামাতে পারেনি কুমিল্লা।
১৪তম ওভারে গিয়ে অর্ধশতক পান মেহেদীও, তাঁর লাগে ৩১ বল। আর ফ্লেচার শতক পান ১৮তম ওভারে গিয়ে। ১৯তম ওভারে স্কোর সমান হওয়ার পর মঈনের বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন মেহেদী, ইনিংসে ৬টি চারের সঙ্গে ৪টি ছয়। তবে এর আগেই রান তাড়ায় বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটির অংশ হন তিনি। আর ৬২ বলে ১০১ রানের ইনিংসে ফ্লেচার মারেন ৬টি করে চার ও ছয়।
এর আগে কুমিল্লাকে প্রায় একা হাতে টেনেছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। মেহেদী হাসানের বলে পারভেজ হোসেন বোল্ড ও এরপর মুমিনুল হক রানআউট হলে কুমিল্লা ২ উইকেট হারায় ৪ ওভারের মধ্যে, ৩১ রান তুলতেই। মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে এরপর ভিত গড়ার কাজটা করেন ডু প্লেসি। ২৭ বলে ৩১ রান করে কুমিল্লার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আজ রানআউট হন মাহমুদুল হাসান, এর আগে এ দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওঠে ৪৯ রান।
ফরহাদ রেজাকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে ৯ বলে ৮ রান করেন মঈন। তবে ডু প্লেসি ততক্ষণে ছোটা শুরু করেছেন। ৩০ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করে ফেলেন এ ডানহাতি, এক প্রান্তে উইকেট পড়ার চাপ জেঁকে বসতেই দেননি প্রায়। ইনফ্রন্ট অব স্কয়ারে খেলেছেন দারুণ সব শট। খুলনা তাঁকে আউট করতে খরচ করেছে দুটি এডিআরএসই। প্রথমবার ডু প্লেসির রান ছিল ৪১, পরেরবার ৯১।
প্লে–অফ সূচি
ডু প্লেসি ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক পান ১৮তম ওভারে, খালেদ আহমেদকে পরপর দুই চারের পর সিঙ্গেল নিয়ে, ৫২ বলে। অবশ্য এরপর আর ১ রান যোগ করার পরই নভীন-উল-হকের বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন। ইনিংসে এদিন ডু প্লেসি মারেন ১২টি চারের সঙ্গে ৩টি ছয়।
ডু প্লেসির উইকেটের ওভারেই টানা দুটি ছয়ে কুমিল্লার শেষ মুহূর্তের গতিটা বাড়িয়েছিলেন মাহিদুল ইসলাম। কিন্তু মেহেদী হাসানের করা শেষ ওভারে রীতিমতো ‘অসহায়’ হয়ে পড়েন সুনীল নারাইন। অফ স্টাম্পের বাইরে ওয়াইডঘেঁষা লাইনে বোলিং করছিলেন মেহেদী, তবে নারাইন ছেড়ে দিচ্ছিলেন। ফল—শেষ ৪ বলে কুমিল্লা তুলতে পেরেছে মাত্র ১ রান।
তবে শেষ পর্যন্ত ফ্লেচার ও মেহেদীর ঝড়ের কাছে আসলে তাৎপর্যহীন হয়ে পড়েছে ওই কয়েকটা বলও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ২০ ওভারে ১৮২/৫ (ডু প্লেসি ১০১, মাহমুদুল ৩১, মাহিদুল ২০*; মেহেদী ১/২৯, ফরহাদ ১/৩০, নাভিন ১/৪৮)
খুলনা টাইগার্স: ১৮.৪ ওভারে ১৮৩/১ (ফ্লেচার ১০১*, মেহেদী ৭৪; মঈন ১/১৩)
ফল: খুলনা ৯ উইকেটে জয়ী