>ক্রিকেটাররা আগে নায়িকাদের প্রেমে পড়েন, না কি নায়িকারা আগে ক্রিকেটারদের, এটা গবেষনার বিষয় হতে পারে। গবেষনার ফল যা-ই হোক, এই দুইয়ের মধ্যে যে একটা অমোঘ আকর্ষণ কাজ করে, তাতে সন্দেহ নেই। যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটার আর নায়িকাদের সফল-ব্যর্থ অজস্র প্রেম এর সাক্ষী। ২২ গজের সঙ্গে রুপালি পর্দার এই প্রেমের গল্প নিয়ে ধারাবাহিকের আজ দ্বিতীয়পর্ব-
জিনাত আমান, রেখা, মুনমুন সেন, এমা সার্জেন্ট, সুসান কনস্টানটাইন, সিতা হোয়াইট… ইমরান খানের প্রেমিকার সংখ্যা হাতেনয়, আসলে ক্যালকুলেটরে গুনতে হবে। এমনি এমনি তো আর সুনীল গাভাস্কার এক সাক্ষাৎকারে মজা করে জানতে চাননি, 'প্রেমিকা না টেস্টের উইকেট, কোনটা বেশি তোমার?'
পাঠকদের জন্য সম্পুরক তথ্য, ইমরান খানের টেস্ট উইকেট সংখ্যা ৩৬২টি।
ক্রিকেটের আরেক প্রেমিক পুরুষ নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি নাকি বলেছিলেন, 'ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছি, আমার ফেয়ারওয়েল ম্যাচ লাগবে না, ইমরানকে মেয়েদের মধ্যে নিলাম করে ওই টাকাটা আমাকে দিলেই হবে।' প্রতিপক্ষ ক্রিকেটাররাও এক বাক্যে মেনে নিতেন, পাকিস্তানি অধিনায়ককে মেয়েদের কবল থেকে উদ্ধার করার চেয়ে তাঁর ইনসুইং খেলা অনেক বেশি সহজ ছিল। নারী মহলে এতটাই কাঙ্খিত ছিলেন ইমরান!
জিনাত আমানের সঙ্গে প্রেমটাই বেশি চর্চিত। জিনাত তখন 'সত্যম শিবম সুন্দরম' করে ভারতীয় পুরুষদের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন।শোনা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের সিরিজ থাকলে জিনাত আগেই হোটেল বুক করে রাখতেন। ম্যাচের দিন সকালেও জিনাতের হোটেল থেকে বেরিয়ে টিম হোটেলে ইমরানকে আসতে দেখেছেন কেউ কেউ!
সেই ইমরান বিবাহিত জীবনেও খুব একটা থিতু হতে পারেননি। ১৯৯৫ সালে জেমিমা গোল্ডস্মিথ নামে এক ব্রিটিশ ধনকুবেরকে বিয়ে করার পর ৯ বছরের সংসার, তারপর বিচ্ছেদ। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক রেহাম খানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়েটা টেকেনি এক বছরও। ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তৃতীয় বিয়ে করেছেন বুশরা বিবি নামে একজনকে। এটাই শেষ বিয়ে কি না, ইমরান নিজেও জানেন না হয়তো।
সোবার্সের মাহেন্দ্রক্ষন
১৯৬৬-৬৭ সালের ভারত সফর অনেক কারণেই স্মরনীয় হয়ে থাকবে স্যার গ্যারি সোবার্সের কাছে। তিন টেস্টের সিরিজ। মুম্বাই, কলকাতা ও চেন্নাইয়ে তিনটি টেস্টেই সোবর্স ব্যাট হাতে নামার আগ পর্যন্ত ভারত প্রায় সমানতালে লড়ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে।কিন্তু সোবার্সই হিসেব বদলে দিয়েছেন সব ম্যাচে। মুম্বাই ও কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে। ভারত প্রায় জিতে যাওয়া চেন্নাই টেস্টও ড্র হয়েছে সোবার্সের কারণেই। তিন টেস্টে কোনো সেঞ্চুরি নেই, তারপরেও ১১৪ গড়ে ৩৪২ রান , বল হাতে ১৪ উইকেট।
কিন্তু এসব কিছুই সোবার্সের জন্য নতুন কিছু ছিল না। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার ততদিনে বেশ নিয়মিতই এমন সব কীর্তি গড়ে যাচ্ছেন। নতুন ছিল ওই সফরে ভারতীয় এক নারীর কাছে তাঁর মন হারানোর গল্পটা।
আঞ্জু মাহেন্দ্র তখন উঠতি মডেল, বয়স মাত্র ১৭। ফিল্ম আর ক্রিকেট পাড়ার পার্টিতে নিয়মিত যাতায়ত। সোবার্সের সঙ্গে পরিচয়টাও ওই রকম এক পার্টিতে। নিজের আত্মজীবনীতে সোবার্স পরে লিখেছেন, প্রথম দিন দুজন দুজনেই নাঁচের প্রশংসা করেছিলেন। সোবার্সের চোখে আঞ্জু ছিলেন, দারুণ সুন্দরী এক অভিনেত্রী। আর আঞ্জু মাহেন্দ্র অনেক বছর পর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সোবার্সের পৌরুষ, রসবোধ ভালো লেগেছিল তাঁর। একজন নারী যেমন পুরুষ খোঁজে প্রেমে পড়ার জন্য, সোবার্স নাকি তেমনই ছিলেন। ব্যস, শুরু হলো মন দেওয়া-নেওয়া।
কিন্তু প্রেমটা টেকেনি বেশিদিন। নটিংহ্যাম্পশায়ারে খেলার জন্য সোবার্সকে ইংল্যান্ডে থিতু হতে হলো । আঞ্জুকে নিয়ে যেতেচেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে সোবার্সের সঙ্গে যেতে পারেননি আঞ্জু। বেঁকে বসেছিল তাঁর রক্ষণশীলপরিবারও। আঞ্জুর অভিনয় ক্যারিয়ারটা অবশ্য পরে খুব একটা ঝলমলে হয়নি। কে জানে তখন প্রেমটাই বেছে নেননি বলেআফসোস ছিল কি না আঞ্জুর!
সোবার্স পরে বিয়ে করেছেন নিজের অস্ট্রেলিয়ান বান্ধবী পুরি কিরবিকে। ২১ বছর টিকে ছিল সেই সংসার, ভেঙ্গেছে ১৯৯০ সালে।
আঞ্জু পরে সম্পর্কে জড়ান আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার ইমতিয়াজ আলীর সঙ্গে, সেটাও টেকেনি। এরপর ভারতীয় এইঅভিনেত্রীর জীবনে এসেছেন বলিউডের হার্টথ্রব রাজেশ খান্না। এই সম্পর্কও গড়িয়েছে বিচ্ছেদে।
তবে রাজেশ খান্নাকে ছাড়তে পারেননি আঞ্জু মাহেন্দ্র। শেষ জীবনে রাজেশ খান্না যখন একা হয়ে পড়েছিলেন, তখন আবার বন্ধুহয়ে ফিরেছেন তার জীবনে। সঙ্গী হয়ে পাশে ছিলেন একেবারে ২০১২ সালে রাজেশের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
শাস্ত্রীয় অভিসারে অমৃতা
'বেতাব', 'সাহেব', 'মর্দ', 'চামেলী কি শাদি' করে ততদিনে বলিউডে নিজের আগমনী বার্তা জানান দিয়েছেন অমৃতা সিং।ওদিকে ভারতীয় ড্রেসিং রুমে 'শ্যাজ' নামে পরিচিত রবিশঙ্কর শাস্ত্রী অস্ট্রেলিয়া মাতিয়ে এসেছেন ভারতকে বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ জিতিয়ে। তারপর আবার ওই বছরই বোম্বের (এখন মুম্বাই) হয়ে রঞ্জিতে এক ওভারে ছয় ছক্কা।দীর্ঘদেহী রবির প্রেমে পড়তে সময় নিলেন না অমৃতা সিং।
বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপের ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়ে পাওয়া নীল গাড়িতে দুজন ছুটে চলেন মুম্বাই বিচের পাশঘেষা সড়কে, নৈশ ক্লাব আর পাঁচতারা হোটেলে চলে দুজনের অভিসার। এ নিয়ে যখন সংবাদমাধ্যমে কানাঘুষা, সেই সময়ই ১৯৮৬ সালেরনভেম্বরে 'সিনে ব্লিটজ' সাময়িকীর প্রচ্ছদে দেখা গেল দুজনকে-শাস্ত্রীর বাহুডোরে বাধা পড়েছেন অমৃতা।
দুজনের বিয়েটা সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধল ১৯৮৮ সালের দিকে শাস্ত্রীর একটা সাক্ষাৎকার।যেখানে তিনি বলেছিলেন, 'আমি আসলে অভিনেত্রী স্ত্রী চাই না। আমি গৃহপাগল মানুষ। এমন একজনকে চাই, ঘরই যার কাছে অগ্রাধিকার পাবে।' সেই সাক্ষাৎকারের জবাব পাওয়া গেল কয়েকদিন পরে একটি পত্রিকার অমৃতার এক সাক্ষাৎকারে, 'এই মুহুর্তে আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত, এটা ছাড়ার কথা ভাবতেও পারি না। তবে হয়তো বছর দুয়েক পরে পুরোদস্তুর গৃহিনী হয়েসংসারে মনযোগ দিতে পারব।'
এর কয়েকদিন পরই শোনা গেল, সম্পর্ক ভেঙে গেছে শাস্ত্রী-অমৃতার। বিচ্ছেদের পর শাস্ত্রী ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন রিতু সিং নামে একজনকে, এর পরের বছর অমৃতা বিয়ে করেন তাঁর চেয়ে ১২ বছরের ছোট অভিনেতা সাইফ আলী খানকে। সাইফকে বিয়ে করে সত্যি সত্যিই অভিনয় ছেড়ে দিলেন অমৃতা। পুরোদস্তুর সংসারী হয়ে ১৩ বছর কাটানোর পর দুজনের বিচ্ছেদ হয় ২০১৩সালে।