সনাৎ জয়াসুরিয়া নামটি কত বোলারকেই না নির্ঘুম রাত উপহার দিয়েছে। এবার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা না আরেক জয়াসুরিয়াকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করে দেন!
এই জয়াসুরিয়ার পুরো নাম প্রবাত জয়াসুরিয়া। শ্রীলঙ্কার অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনারই যে আজ ধ্বংস করলেন অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া প্রবাত দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছেন ৬ উইকেট। তাঁর স্পিন বিষে নীল হয়েই দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫১ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানের লিড নেওয়া শ্রীলঙ্কা গলে দ্বিতীয় টেস্টটা জিতে গেছে ইনিংস ও ৩৯ রানে। দুই ম্যাচের সিরিজটা ড্র হলো তাতে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লাসিত এম্বুলদেনিয়া ছিটকে না পড়লে প্রবাত জয়াসুরিয়া ডাকই পেতেন না দলে। ৩০ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে নায়ক হয়ে গেলেন ঠেকা কাজ চালাতে দলে ঢোকা সেই জয়াসুরিয়া। প্রথম ইনিংসে ১১৮ রানে ৬ উইকেট নেওয়া জয়াসুরিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিতে খরচ করলেন প্রথম ইনিংসের ঠিক অর্ধেক ৫৯ রান।
গলের বিকেলে মিচেল সোয়েপসনকে বোল্ড করে ম্যাচের ইতি টেনেছেন জয়াসুরিয়া। তাতে একটু হলেও আনন্দের উপলক্ষ পেয়েছেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভোগা শ্রীলঙ্কার মানুষ।
জয়াসুরিয়ার আগে শ্রীলঙ্কার একমাত্র ইনিংসে কী অবিশ্বাস্য ব্যাটিংই না করেছেন দিনেশ চান্ডিমাল। ১১৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা চান্ডিমাল টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে অপরাজিত ছিলেন ২০৬ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কানদের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও এটি। ৬ উইকেটে ৪৩১ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা অলআউট ৫৫৪ রানে।
দিনের দ্বিতীয় সেশনে অস্ট্রেলিয়া যখন দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে কে জানত আজই শেষ হবে খেলা। সফরকারীদের শুরুটাও খারাপ ছিল না। ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা উদ্বোধনী জুটিতে তুলে ফেলেন ৪৯ রান। অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিস ওয়ার্নারকে এলবিডব্লু করে ভাঙেন সেই জুটি।
প্রবাত জয়াসুরিয়া প্রথম উইকেট পান ১০ রান পরে খাজাকে ফিরিয়ে। আগে বেড়ে রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান। কিন্তু বনবন করে ঘোরা বলটি ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় শর্ট লেগ ফিল্ডারের হাতে। ওই ওভারে চার বল পরেই স্টিভ স্মিথকেও ফিরিয়ে দেন জয়াসুরিয়া। প্লাম্ব এলবিডব্লু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক। কী মনে করে যেন রিভিউ নিয়ে তা শুধু নষ্টই করেছেন স্মিথ।
এরপর রমেশ ট্রাভিস হেডকে ফেরানোর পর পাঁচ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মিডলঅর্ডার ধসিয়ে দেন জয়াসুরিয়া। ৩১তম ওভারের শেষ বলে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার মারনাস লাবুশেনকে (৩২) এলবিডব্লু করার পর ৩৩তম ওভারে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে ক্যামেরন গ্রিন ও মিচেল স্টার্ককে ফিরিয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট পেয়ে যান জয়াসুরিয়া।
আরেক টেস্ট অভিষিক্ত মহীশ তিকশানাও এরপর যোগ দেন স্পিন উৎসবে, তুলে নেন প্যাট কামিন্স ও নাথান লায়নের উইকেট। এরপর সেই মুহূর্ত, জয়াসুরিয়ার বলে সোয়েপসন বোল্ড। এক দিন হাতে রেখেই শ্রীলঙ্কার জয়, সিরিজে সমতা ও রেকর্ড বইয়ে প্রবাত জয়াসুরিয়া।
টেস্ট অভিষেকে শ্রীলঙ্কানদের ম্যাচসেরা বোলিং যে এখন তাঁরই। শ্রীলঙ্কার হয়ে এর আগে টেস্ট অভিষেকে ১০ উইকেটে নিয়েছিলেন শুধু প্রবীণ জয়াবিক্রমা। গত বছর পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৮ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার জয়াবিক্রমা। টেস্ট অভিষেকে প্রবাত জয়াসুরিয়ার চেয়ে ম্যাচে বেশি উইকেট নিয়েছেন শুধু ভারতের নরেন্দ্র হিরওয়ানি ও অস্ট্রেলিয়ার বব ম্যাসি। দুজনই পেয়েছেন ১৬টি করে উইকেট। তবে জয়াসুরিয়ার মতো ১২ উইকেট আছে আরও দুজনের—অস্ট্রেলিয়ার জেসন ক্রেইজা ও ইংল্যান্ডের ফ্রেড মার্টিন।
টেস্ট অভিষেকে ম্যাচসেরা বোলিং
টেস্ট অভিষেকে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস–সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা প্রথম ইনিংসেই করেছিলেন প্রবাত জয়াসুরিয়া। আজ দ্বিতীয় ইনিংসে সেই রেকর্ডটাকেই নতুন করে লিখলেন ৫৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৩৬৪ ও ৪১ ওভারে ১৫১ (লাবুশেন ৩২; জয়াসুরিয়া ৬/৫৯)। শ্রীলঙ্কা: ১৮১ ওভারে ৫৫৪ (চান্ডিমাল ২০৬*, করুনারত্নে ৮৬, কুশল ৮৫, কামিন্দু ৬১, ম্যাথুস ৫২; স্টার্ক ৪/৮৯)। ফল: শ্রীলঙ্কা ইনিংস ও ৩৯ রানে জয়ী।