২৫ ওভার, ৭৬ রান, ৬ উইকেট। টেস্টের প্রথম সেশনে এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পর ঘুরে দাঁড়ানোটা কঠিন যেকোনো পরিস্থিতিতেই। অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশ সেটি পারেওনি। প্রথম দিন সকালে ব্যাটিংয়ের ওই বিভীষিকা পুরো ম্যাচেই যেন তাড়া করে ফিরেছে, বাংলাদেশকেও পিছু তাড়া করে যেতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসানের শতরানের জুটি, দুই ইনিংসেই বোলারদের ভালো পারফরম্যান্সের পরও প্রথম টেস্টে তাই ৭ উইকেটে পরাজয়। সেটিও চতুর্থ দিন সকালেই।
সাকিব আল হাসানেরও আক্ষেপ তাই টেস্টের প্রথম সেশনটা নিয়েই। এমন ব্যাটিং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানিয়ে দিলেন নিজের মত। টেস্টটা যে বাংলাদেশ সেখানেই হেরে গেছে, মনে করিয়ে দিলেন সেটাও।
বাংলাদেশ টসে হেরে নেমেছিল ব্যাটিংয়ে। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেটে ঘাস ছিল, ছিল অসমান বাউন্সও। কঠিন কন্ডিশনে ব্যাটিং করতে হলেও এটিকে নিজেদের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতে চান না সাকিব। ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে টস নিয়ে সাবেক উইন্ডিজ ক্রিকেটার ড্যারেন গঙ্গার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘অবশ্যই (টসের) ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তবে এটিকে অজুহাত হিসেবে দেখানোর কিছু নেই। টস আমাদের হাতে নেই। আমাদের মেনে নিতে হবে। ব্যাটিং ভালো করতে হবে। উইকেট কঠিন ছিল, তবে আমরা নিজেদের সামর্থ্যের আরও ভালো প্রয়োগ করতে পারতাম।’
প্রথম দিন সকালে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়েছিল ৪১ রানেই। শেষ পর্যন্ত সেটিই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন সাকিব, ‘৬ উইকেট না হারিয়ে (প্রথম দিন) লাঞ্চে না যাওয়াটাই আদর্শ হতো। শেষ তিন দিনে উইকেট বেশ ভালো ছিল। তবে ওই এক সেশনই আসলে আমাদের শেষ করে দিয়েছে, এরপর ম্যাচে সব সময়ই আমরা পিছিয়ে ছিলাম।’
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এমন দুর্দশা অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে মোটেও নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে এ বছরই পাঁচবার ৫০ বা এর কম রানে ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এখানে যে উন্নতির বিকল্প নেই, সাকিব মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘আমরা নিয়মিতই এমন করছি, সর্বশেষ যে চার-পাঁচটা ম্যাচ খেলেছি। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাটসম্যানদের রান করার উপায় বের করতে হবে। উইকেটে থাকতে হবে। এভাবে আপনি টিকে থাকবেন, এরপর বোলাররা আপনাদের ম্যাচ জেতাবে। সমীকরণটা আসলে সরলই। এ সমীকরণ নিয়েই কাজ করতে হবে।’
‘নুরুলের ইনিংস থেকে অনেক শেখার আছে। সে চাপে ছিল, আমিও ছিলাম। তবে যেভাবে খেলেছে, তাতে ওর সামর্থ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, অন্য ব্যাটসম্যানরা ওর মতো চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে।’
সাকিব নিজে অ্যান্টিগায় দুই টেস্টেই অর্ধশতক করেছেন। ম্যাচে বাংলাদেশের অন্য অর্ধশতকটি এসেছে নুরুল হাসানের ব্যাটে, ইয়াসির আলী চোটে না পড়লে যাঁর খেলারই কথা ছিল না। সপ্তম উইকেটে নুরুলের সঙ্গে সাকিবের ১২৩ রানের জুটিতেই ইনিংস পরাজয় এড়িয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব বলছেন, নুরুলের ওই ইনিংস বাকিদের জন্য শিক্ষা হতে পারে পরের টেস্টের আগে, ‘নুরুলের ইনিংস থেকে অনেক শেখার আছে। সে চাপে ছিল, আমিও ছিলাম। তবে যেভাবে খেলেছে, তাতে ওর সামর্থ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, অন্য ব্যাটসম্যানরা ওর মতো চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে। এইভাবে এগিয়ে এসে ভালো খেলতে পারবে।’
আর নিজের ব্যাটিং নিয়ে সাকিবের পর্যালোচনা, ‘আমি ইতিবাচক ছিলাম ব্যাটিংয়ে। বল এটা করবে, ওটা করবে, এসব ভাবিনি। আমার খেলা সরল রেখেছি। হয় মারব, না হলে টিকে থাকার চেষ্টা করব। সব সময়ই আমার পরিকল্পনা এমনই ছিল, এভাবেই সফল হয়েছি। তাই এটি বদলাব না আমি।’
শেষ কথাটা হয়তো কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মন্তব্যের জবাবে। সাকিবের ব্যাটিংয়ে রক্ষণ আর আক্রমণের একটা ভারসাম্য আনার দরকার মনে করে তা বলেওছিলেন বাংলাদেশের কোচ।
ব্যাটিং বাজে হলেও এ টেস্টে বাংলাদেশের বোলিং ছিল বেশ ভালো। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানের সম্বল নিয়ে বোলিং করতে নেমেও বেশ আঁটসাঁট বোলিংই করেছেন বোলাররা। ক্যাচ ও রিভিউর সদ্ব্যবহার করতে পারলে তাঁদের লড়াইটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত আরও। বোলারদের তাই প্রশংসাই করেছেন সাকিব, ‘অনেক জায়গাতেই উন্নতির সুযোগ আছে, তবে বোলাররা যেভাবে পারফর্ম করেছে, তাতে খুশি আমি। বোলাররা সবাই উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করেছে, ওদের নিয়ে কোনো অসন্তুষ্টি নেই আমার। ব্যাটিংই আমাদের ডুবিয়েছে।’
অধিনায়কদের আশার কথা বলে শেষ করতে হয় বলেই বোধ হয় পরের লাইনটা বলা, ‘আশা করি, পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’