প্রথম ম্যাচেই ‘ড্রাইভার’–এর ভূমিকায় সাকিব
বিতর্ক সাকিবকে তাতিয়ে দেয়। অতীতে অনেকবারই এর প্রমাণ মিলেছে। মিলল আবারও। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া না–যাওয়া নিয়ে কম বিতর্কের জন্ম দেননি সাকিব। যাবেন, যাবেন না করতে করতে শেষ পর্যন্ত গেছেন। আফগানিস্তান সিরিজে নিজেকে ‘প্যাসেঞ্জার’ মনে হওয়ার কথা বলেছিলেন নিজেই, দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে জানিয়ে গিয়েছিলেন ‘ড্রাইভার’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ইচ্ছার কথা। সে জন্য যে মানসিকতা দরকার, সেটায় কিছুটা ঘাটতি অনুভব করার কথাও আবার বলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই তো সাকিব দেখা দিলেন ‘ড্রাইভার’–এর রূপে। ৪২তম ওভারে লুঙ্গি এনগিডিকে স্কুপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ২৩ রানের জন্য তা পাননি। তবে তাঁর ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংসটিই গতি এনেছে বাংলাদেশের ইনিংসে। বাংলাদেশের স্কোর ৩০০ পেরোনোয় ৭ চার ও ৩ ছয়ে সাজানো সাকিবের ইনিংসটিরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা।
ইনিংসের শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাস ফুটে বেরোচ্ছিল তাঁর ব্যাট থেকে। নেমেছেন ২২তম ওভারে তামিম ইকবালের বিদায়ের পর। আন্দিলে ফিকোয়ার করা দ্বিতীয় বলটিতেই দারুণ এক কাভারে ড্রাইভে বাউন্ডারি। সাকিবের ইনিংসের প্রথম স্কোরিং শট।
এরপর শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশেই। ক্ষিপ্র পায়ে নিয়েছেন এক-দুই রান। প্রথমে লিটন দাস, এরপর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মিলে মাঝের ওভারগুলোতে সচল রেখেছেন রানের চাকা। কেশব মহারাজের বলে লিটন ও মুশফিক অসময়ে আউট হলেও সাকিব এগিয়ে গেছেন নিজের ছন্দে। বরং তাঁর ব্যাট ক্রমেই হয়ে উঠেছে আরও বিধ্বংসী। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের চেয়েও সম্ভবত বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল পায়ের পেশিতে টান। জয় করেছেন সেটিও।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে সাকিবের এটি টানা তৃতীয় অর্ধশতক। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিরিজের শেষ ম্যাচে করেছিলেন ৬৩, মাঝখানে ২০১৯ বিশ্বকাপে ৭৫। এরপর কালকের ৭৭। অর্ধশতকটিতে ৫০ এসেছে ঘুরেফিরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পঞ্চাশতম পঞ্চাশ করতে সাকিব বলও খেলেছেন ৫০টি। সেই পঞ্চাশও এসেছে দারুণ স্টাইলে। বোলার ফিকোয়ার মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে। ইনিংসে সাকিবের দ্বিতীয় ছক্কা। পঞ্চাশে চার ছিল ৪টি।
ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে সাকিবের ব্যাটিং মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। সাকিবের দাপুটে ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতে করতে যেন বিশেষণই হারিয়ে ফেলছিলেন সাবেক এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।
চাপের মুখে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সাকিবকে কতটা সাহায্য করছে, সেটাই বলছিলেন ম্যাকেঞ্জি, ‘সাকিব যখন ক্রিজে এসেছিল, তখন কিন্তু পরিস্থিতি সহজ ছিল না। এখন দেখুন, সে যখন অর্ধশত রানে, তখন খেলাটাই পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এখন দাপট দেখাচ্ছে। অভিজ্ঞতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা দেখা যাচ্ছে।’ সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসা নিয়েও তিনি মজা করছিলেন, ‘সাকিবের জন্য বিমানের টিকিট কেটে সবচেয়ে ভালো করেছে বিসিবি।’
সাকিবের জন্য টিকিট তো বিসিবি সব সময়ই কাটতে চায়। সাকিবই না মাঝেমধ্যে বিমানে উঠতে চান না। সাকিবকে দলে পেতে কেন এক ব্যাকুলতা, এই প্রশ্নের উত্তরও প্রথম ওয়ানডের এই ইনিংস।