পৃথ্বী শ–ঝড়ে উড়ে গেল কলকাতা

৪১ বলে ৮২ রান করে দিল্লির জয়ের নায়ক পৃথ্বী শ।ছবি: বিসিসিআই

লক্ষ্য ১৫৫ রান। টি–টোয়েন্টিতে এটাকে খুব বড় লক্ষ্য বলা যাবে না। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছিল আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের উইকেটে ব্যাটিং করা হয়তো একটু কঠিন। ৬ উইকেটে তোলা ১৫৪ রান নিয়ে কলকাতা হয়তো লড়াই করতে পারবে। কিন্তু কোথায় কী, পৃথ্বী শ নামের এক ঝড়ে রীতিমতো উড়ে গেল এউইন মরগানের কলকাতা। ৪১ বলে ৮২ রান করে ২১ বল হাতে রেখেই দিল্লি ক্যাপিটালসকে ৭ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন ভারতের ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শ।

রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই কলকাতার বোলারদের ওপর চড়াও হন পৃথ্বী শ। ইনিংসের প্রথম বলটি ওয়াইড দেন কলকাতার পেসার শিবম মাভি। এরপর তাঁকে টানা ৬টি চার মারেন পৃথ্বী শ। অন্য প্রান্তে শিখর ধাওয়ান এদিন খেলেছেন ‘ধীর চলো নীতি’ মেনে! পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দিল্লির রান যখন বিনা উইকেটে ৬৭, পৃথ্বী শর রান ১৬ বলে ৪৮, ধাওয়ান তখন ২০ বলে করেছেন ১৭ রান।

দুজনের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ধাওয়ানের আউটে। ৪৭ বলে ৪৬ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১৩২ রান। এর মধ্যে শয়ের রানই ৮২। শেষ ৪১ বলে ওই ৮২ রান করেই আউট হয়েছেন পৃথ্বী শ। তীব্র ঝোড়ো ইনিংসটিতে মেরেছেন ১১টি চার ও ৩টি ছয়।

ওপেনিং জুটিতে কলকাতার বিপক্ষে আজ ১৩২ রান তুলেছেন ধাওয়ান ও পৃথ্বী শ (ডানে)
ছবি: বিসিসিআই

এর আগে ঠিক বিপরীত ব্যাটিং করেছে কলকাতা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৫ রান তুলতে পেরেছে তারা। ১০ ওভার শেষেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, ২ উইকেটে কলকাতার রান ৭৩। ১৫ ওভার শেষে তা আরও করুণ—৫ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান।

ভাগ্যিস খেলোয়াড়দের পোশাকটা রঙিন ছিল আর খেলা হচ্ছিল সাদা বলে। আর তা না হলে কলকাতার ইনিংসটাকে মাঝেমধ্যে কারও কারও কাছে ম্যাচটাকে টি–টোয়েন্টির বদলে ‘টেস্ট’ও মনে হতে পারত! এমন অবস্থার পরও নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে কলকাতা যে ৬ উইকেটে ১৫৪ রান তুলতে পেরেছে, এতে অবদান আন্দ্রে রাসেলের। ইনিংসের শেষ দিকে একটা ঝড় তুলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার। তাঁর সেই ঝড়েই দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে লড়াই করার মতো পুঁজি পেয়েছে কলকাতা।

কলকাতার বোলাররা পৃথ্বী শয়ের ব্যাটের সামনে হয়ে পড়েছিলেন অসহায়।
ছবি: বিসিসিআই

২৭ বলে অপরাজিত ৪৫ রান করেছেন রাসেল। ইনিংসটি খেলার পথে ২টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। আজ কলকাতার ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এটাই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রান (৩৮ বলে) করেছেন শুভমান গিল। কলকাতা মূলত ভালো শুরু পায় নীতিশ রানার ব্যাটে। আজ তিনি রান না পাওয়াতেই সমস্যা হয়ে গেছে দলটির জন্য। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তিনি অক্ষর প্যাটেলের বলে উইকেটের পেছনে ঋষভ পন্তের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১৫ রান করে। কলকাতার রান তখন ২৫।

এরপর রাহুল ত্রিপাঠীকে নিয়ে ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন গিল। দুজনে মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৪ রান তোলেনও। তবে জুটিটি ছিল খুবই শ্লথ। ৪৪ রান তুলতে তাঁরা খেলেছেন ৩৫ বল। কলকাতার ইনিংসে বড় ধাক্কাটা অবশ্য আসে দশম ও একাদশ ওভারে। ৮ বলের মধ্যে ৬ রানের মধ্যে তারা হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। ১৯ রান করে প্রথমে ফেরেন রাহুল।

কলকাতার পক্ষে অপরাজিত ৪৫ রান করেছেন আন্দ্রে রাসেল।
ছবি বিসিসিআই

এরপর আউট হয়ে ফেরেন অধিনায়ক এউইন মরগান। এক ম্যাচ ভালো খেলার পর আবার তাঁর ব্যাটে রানের খরা। আগের ম্যাচে অপরাজিত ৪৭ রান করে এই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে কলকাতাকে জিতিয়েছেন মরগান। তবে আজ তিনি আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। কোনো রান না করে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসানের জায়গায় খেলে যাওয়া সুনিল নারাইন।

১৩তম ওভারে আউট হয়ে ফেরেন গিলও। এরপর কলকাতাকে একাই টানেন রাসেল। অপরাজিত ৪৫ রান করার পথে ষষ্ঠ উইকেটে দিনেশ কার্তিককে নিয়ে ২০ বলে ২৭ আর সপ্তম উইকেটে প্যাট কামিন্সকে নিয়ে গড়েছেন ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৫ রানের জুটি। শেষ ৫ ওভারে কলকাতা তুলতে পেরেছে ৫৯ রান।