পাতিদারের এই ইনিংসের মতো আর কিছু আগে দেখেননি কোহলি
এবারের আইপিএলের নিলামে তিনি ছিলেন অবিক্রীত। সেই রজত পাতিদারই কাল বেঙ্গালুরুকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে নিয়ে গেছেন দুরন্ত এক শতকে। চোটের বদলি হিসেবে অবিক্রীত পাতিদারকে দলে নিয়েছিল বেঙ্গালুরু। কাল বেঙ্গালুরু ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই পাতিদারকে দলে ভেড়ানোর সিদ্ধান্তটার জন্য নিজেদেরই পিঠ চাপড়ে দিয়েছে।
৫৪ বলে ১১২ রান। এর মধ্যে ১২টি চার ও ৭টি ছক্কা। তাঁর এই ইনিংসেই লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে ২০৭ রান তুলে দ্বিতীয় প্লে-অফে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলে বেঙ্গালুরু। শেষ পর্যন্ত তারা ম্যাচ জিতেছে ১৪ রানে। যে মঞ্চ প্রস্তুত ছিল বিরাট কোহলি কিংবা ফাফ ডু প্লেসিদের জন্য, সেই মঞ্চেই রাজা বনে গেলেন পাতিদার। কোহলি তো ম্যাচ শেষে বলেই দিয়েছেন, তিনি চাপের মুখে অনেক ইনিংস খেলেছেন, কিন্তু পাতিদার যে ইনিংস খেলেছেন, সেটি তিনি আগে কখনো দেখেননি। আইপিএলের প্লে-অফে কোনো জাতীয় দলে না খেলা প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই শতক পেলেন পাতিদার।
প্লে-অফ সব সময়ই চাপের। এখানে ব্যর্থ হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কোহলি নিজেও এমন পরিস্থিতি থেকে বেঙ্গালুরুকে অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই জেতাতে পারেননি। অনেক বড় বড় ক্রিকেটারও যে চাপ সামলাতে হিমশিম খান, সেটিই জয় করে দেখিয়েছেন পাতিদার। তাঁর ইনিংসটি কতটা গুরুত্ব বহন করে, সেটি কোহলি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ম্যাচ শেষে, ‘আমি নিজেই খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কারণ, এর আগে অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতিতে জিতে মাঠ ছাড়তে পারিনি। সে কারণেই পাতিদারের ইনিংসটি গুরুত্বপূর্ণ।’
পাতিদার অন্যদের জন্য উদাহরণ বলেও মনে করেন কোহলি, ‘নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে কী না হয়, সেটিই পাতিদার সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে। পরিশ্রম করেই পাতিদার এ ইনিংস খেলেছে। এই ইনিংস অনেক পরিশ্রমের ফসল।’
প্রথম ওভারেই চাপে পড়ে গিয়েছিল বেঙ্গালুরু। ডু প্লেসি কোনো রান না করেই ফিরেছেন। বিরাট কোহলির সঙ্গী হন পাতিদার। কোহলি ব্যাটিং করছিলেন সতর্কতার সঙ্গে। কিন্তু অন্যদিকে পাতিদার ছিলেন ধুন্ধুমার। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে উপস্থিত হাজার পঞ্চাশেক দর্শককে দারুণ আনন্দে মাতিয়েছেন পাতিদার। চার-ছক্কার ঝড় বয়ে যায় ইডেনের ওপর দিয়ে। লক্ষ্ণৌয়ের কোনো বোলারকেই ছাড় দেননি এই তরুণ ব্যাটসম্যান। নিজের এই দুরন্ত ইনিংস নিয়ে কী ভাবছেন পাতিদার? ম্যাচ শেষে সেটিই খোলাসা করেছেন, ‘আমি আসলে চাপ নিই না। এমনকি ডট বল খেলার পরও। কারণ, আমি জানি, আমি কী করতে পারি।’
নিলামে ওঠেননি। পরে বদলি হিসেবে আইপিএলে সুযোগ পেয়েছেন। ব্যাপারটি মাথায় ছিল কি না, এমন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে পাতিদারকে। তাঁর কথা, ‘নিলামে বিক্রি হইনি। কিন্তু তাই বলে আমি হতোদ্যম হইনি। আমি অনুশীলন চালিয়ে গেছি। সেটিই আমার কাজে এসেছে সবচেয়ে বেশি।’
পাতিদারের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রীও। তিনি বিস্মিত তাঁর মারতে পারার ক্ষমতায়, ‘আমার একবারের জন্যও মনে হয়নি পাতিদার কোনো বদলি ক্রিকেটার। মনে হয়েছে, এই পাতিদারই ১০ বছর ধরে আইপিএলে খেলছে।’