পাকিস্তানের স্মৃতি ফেরাতে গিয়েও পারলেন না তিনি
মনে হচ্ছিল, এই বুঝি চার বছর আগের কীর্তিটা ফেরত আনলেন ক্রেইগ ব্রাফেট!
২০১৬ সালে শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করেছিলেন। একটা সম্পূর্ণ ইনিংসে ব্যাট ‘ক্যারি’ করার বিরল কীর্তিটা ক্যারিয়ারেই অনেক ব্যাটসম্যানের নেই, সেখানে পাঁচ বছরে সেটি দ্বিতীয়বার করে ফেলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ব্রাফেট। কিন্তু পারলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক!
দলের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে কেমার রোচ যখন ফিরলেন, ক্রিজে ব্রাফেটের সঙ্গী হয়ে আসেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে (টি-টোয়েন্টিতে কখনো ব্যাটিং করেননি) ৯৫ ইনিংসে ২৪০ রান তাঁর, সর্বোচ্চ ইনিংসটা অপরাজিত ২০ রানের...। সেই গ্যাব্রিয়েলই যে ব্রাফেটকে ক্রিজে রেখে আগে আউট হবেন, তা নিয়ে সংশয় খুব কম মানুষেরই হয়তো ছিল। কিন্তু হলো উল্টো।
৭ বল আর ৩ রানের জুটি শেষ হলো দুষ্মন্ত চামিরার বলে কাট করতে গিয়ে ব্রাফেট বলটাকে নিজের স্ট্যাম্পে টেনে আনায়। ইনিংসের আদ্যন্ত অপরাজিত থাকা হলো না তাঁর। তবে যা হয়েছে, তাতেও ব্রাফেটের তৃপ্তি কম হওয়ার কথা নয়। ৭ উইকেটে ২৮৭ রান নিয়ে কাল দ্বিতীয় দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছে ৩৫৪ রানে, তাতে ১২৬ রানের দারুণ একটা ইনিংস ব্রাফেটের।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কের যেখানে এ অবস্থা, শ্রীলঙ্কা তাদের অধিনায়ককে নিয়ে যেন উল্টো বিপদে পড়েছে। এই অ্যান্টিগাতেই সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫ রান করেছেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। দুই টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টির প্রথম ইনিংসে কাল অ্যান্টিগাতে আবারও ব্যর্থ তিনি, আউট হয়ে গেছেন ১ রান করে। তবে শ্রীলঙ্কা দিনটা শেষ করেছে ৩ উইকেটে ১৩৬ রানে। যে কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেসন হোল্ডারও বলছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে টেস্টে দুই দল সমানে সমান।’
দলের ১৮ রানেই ওপেনার ও অধিনায়ক করুণারত্নেকে হারায় শ্রীলঙ্কা। আলজারি জোসেফের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন করুণারত্নে, দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটা ধরে ফেলেন এনক্রুমা বোনার। শ্রীলঙ্কা যে এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সে কৃতিত্ব প্রথমত আরেক লঙ্কান ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নের। আগের টেস্টে দুই ইনিংসে ৭০ ও ৭৬ রানের দুটি ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। কাল বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট দেখল ৫৫ রানের গোছানো একটা ইনিংস।
তবে ৭৭ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হচ্ছেন থিরিমান্নে, সেখান থেকে শ্রীলঙ্কার ধস ঠেকাতে একটা জুটির দরকার ছিল। এর ৩৫ বল আর ১৩ রান আগেই ওশাদা ফার্নান্দোকে ফেরান কাইল মায়ার্স, এরপর কেমার রোচের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড থিরিমান্নে। লঙ্কান ইনিংস তখন শঙ্কায়।
কিন্তু ইনিংসের প্রয়োজন মেনে ভরসা এনে দেওয়া একটা জুটি এনে দিয়েছেন দীনেশ চান্ডিমাল (৩৪*) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (২৩*)। শেষ সেশনে চতুর্থ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের জুটিকে ঘিরেই আজ তৃতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জবাব দেওয়ার আশা দেখে শ্রীলঙ্কা।
আশা দেখাবে অ্যান্টিগার উইকেটও। অন্তত হোল্ডার তো তা-ই বললেন। ব্রাফেটের হাতে অধিনায়কত্বের ভার সঁপে দেওয়া উইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক কাল দিন শেষে বলছিলেন, ‘উইকেটটা এখনো বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেট আছে। আপনাকে (উইকেট পাওয়ার জন্য) ধৈর্য ধরতে হবে।’ তাঁর আশা, ‘আমরা যদি কাল (আজ) সকালে শুরুতেই নতুন বল নেওয়ার আগে এক-দুটি উইকেট তুলে নিতে পারি, তাহলে ওদের একটু চাপে ফেলতে পারব।’
যে চাপে কাল দিনের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। রাকিম কর্নওয়ালকে নিয়ে তখন লঙ্কানদের ব্যাট হাতে ভুগিয়েছেন ব্রাফেট। সাড়ে আট ঘণ্টা, ৩১১ বল আর ১৩ চারে সাজানো ব্রাফেটের নবম টেস্ট সেঞ্চুরি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের সঞ্চালক হয়ে ছিল। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন কর্নওয়ালও।
আগের টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬১ রানের একটা ঝলমলে ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে, যেটি ছিল গত সপ্তাহ পর্যন্ত টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস। এ টেস্টের প্রথম দিনটাও কর্নওয়াল শেষ করেছিলেন ফিফটির আশা নিয়ে। দিন শুরুর সময়ের ৪৩ রানের সঙ্গে পরে আরও ৩০ রান যোগ করেছেন কর্নওয়াল। ব্রাফেটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাজানো ৯২ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায়।
আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নেওয়া সুরঙ্গা লাকমল মিড অফে ধরা পড়ে থামে কর্নওয়ালের ইনিংস। অষ্টম উইকেটে কর্নওয়ালের সঙ্গে ব্রাফেটের ১০৩ রানের জুটি ভাঙার পর শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে অবশ্য আর বেশিক্ষণ লড়তে পারেননি ব্রাফেট। নবম উইকেটে কেমার রোচের সঙ্গে জুটিটা হলো ২৬ রানের, তারপর তো ব্রাফেটের ‘ক্যারিইং দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংসে’র আশা জাগিয়েও শেষ হয়ে গেল।
তবে ব্রাফেটের ইনিংসের একটাই সমালোচনা হতে পারে। সেটি এই যে কর্নওয়াল ফেরার পর শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়েও কেন আরেকটু আগ্রাসী হলেন না উইন্ডিজ অধিনায়ক! আগের দিন ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছিলেন। নার্ভাস নাইনটি নাইনে আউট হওয়ার শঙ্কার শেষ ব্রাফেট টেনে দিয়েছেন দিনের তৃতীয় বলেই, লাকমলের বলে ফাইন লেগে ঠেলে এক রান নিয়ে। কিন্তু পুরো ইনিংস যেভাবে ‘ফার্স্ট গিয়ারে’ খেলে গেছেন, সেটি থেকে আর বের হতে পারেননি তিনি। ১৩ চারের ১১টিই ব্রাফেট মেরেছিলেন প্রথম দিনে।