পাকিস্তানের নির্বাচকদের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলেন আমির

পাকিস্তানের জার্সি গায়ে মোহাম্মদ আমির।ফাইল ছবি

পাকিস্তান ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা নিয়েও মুখ খুলেছেন মোহাম্মদ আমির। স্থানীয় এক ওয়েবসাইটের সঙ্গে আলাপচারিতায় জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার কারণ হিসেবে ‘প্রাপ্য সম্মান না পাওয়া’র কথা বলেছিলেন বাঁহাতি এ পেসার। আইপিএল খেলতে ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ার আবেদন করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এই আলাপেই পাকিস্তান ক্রিকেটে খেলোয়াড় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধুয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হওয়া এ বোলার।

গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া আমির মনে করেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালোভাবে হাত না পাকিয়েই পাকিস্তান জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন তরুণেরা। র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দলের নির্বাচকেরা যে প্রক্রিয়া মেনে খেলোয়াড় বাছাই করেন, পাকিস্তানের নির্বাচকদেরও সে পথে হাঁটা উচিত—মনে করেন স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে সাজা খাটা আমির, ‘ইংল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেমন খেলোয়াড় নিয়ে আসে, তা দেখতে হবে। তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত থাকে কারণ, জুনিয়র ও ঘরোয়া পর্যায়ে নিজেদের প্রস্তুত করে তবে এখানে (আন্তর্জাতিক) এসেছে। একবার সুযোগ পাওয়ার পর তারা নিজেদের দক্ষতাটা দেখায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে—যা ঘরোয়া ক্রিকেটেই শিখেছে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় আমাদের খেলোয়াড়েরা জাতীয় কোচদের কাছ থেকে শিখবে বলে আশা করা হয়। কিন্তু খেলাটা শিখেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা উচিত
মোহাম্মদ আমির

পাকিস্তান দলে খেলোয়াড় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য কিছু দেখেন আমির। খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর কোচদের কাছ থেকে শিখছে, অথচ এই ‘পাঠদান’ প্রক্রিয়া ঘরোয়াতেই সম্পন্ন হলে ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি, ‘এই মুহূর্তে পাকিস্তান কোথায় দাঁড়িয়ে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় আমাদের খেলোয়াড়েরা জাতীয় কোচদের কাছ থেকে শিখবে বলে আশা করা হয়। কিন্তু খেলাটা শিখেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা উচিত—এটা কেউ ভাবে না।’

আমির যখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

পাকিস্তানের হয়ে ৩৬ টেস্টে ১১৯ এবং ৬১ ওয়ানডেতে ৮১ উইকেট নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে নিয়েছেন ৫০ ম্যাচে ৫৯ উইকেট। ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফের সঙ্গে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জেলও খেটেছিলেন ২৯ বছর বয়সী এ পেসার। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও সেই ক্ষুরধার আমিরকে পাওয়া গেছে খুব কমই। অবসর নেওয়ার পর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়ানো আমির ভারতের কিছু তরুণ ক্রিকেটারের নামও বলেছেন, যাঁরা প্রস্তুত হয়েই এসেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, ‘ঈশান কিষান, ক্রুনাল পান্ডিয়া ও সূর্যকুমার যাদবকে দেখুন, অভিষেকে দক্ষতা দেখাতে তাদের কিন্তু কোচের পরামর্শের দরকার হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার প্রস্তুতি সেরেই তারা এসেছে। ঘরোয়া ও আইপিএলে বেশ কয়েক বছর খেলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের আবির্ভাব মসৃণ হয়েছে।’

আমির এখানেই থামেননি। পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার খেলার কৌশল (টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি) ভালোভাবে না শিখেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে থাকে বলে মনে করেন তিনি। আমির সরাসরিই বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো স্কুল ক্রিকেট নয় যেখানে আপনি খেলাটা শিখবেন। এটা কঠিন জায়গা, যেখানে খেলাটায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়াদেরই শুধু সুযোগ পাওয়া উচিত। ক্রিকেট শিখতে চাইলে একাডেমিতে যান কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আছে। প্রস্তুত হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে দেশের হয়ে খেলার সময় শিখবেন, এই প্রত্যাশা থাকা যাবে না। বেশির ভাগ সময়ই খেলার কলাকৌশল ভালোভাবে শেখার আগেই আমাদের তরুণ ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ময়দানে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এভাবে ফল পাওয়া যায় না—এটা যত দ্রুত বুঝতে পারব, ততই মঙ্গল।’

২০১০ সালে মোহাম্মদ আমির।
ফাইল ছবি

পাকিস্তানি ওয়েবসাইট পাকপ্যাসনের সঙ্গে এই আলাপচারিতায় অবসর নেওয়ার কারণও খুলে বলেন আমির, ‘আমার কাছে সম্মানটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মনে হচ্ছিল, প্রাপ্য সম্মানটা পাচ্ছি না, তাই অবসরের সিদ্ধান্ত নিই।’

আমির মনে করেন, পাকিস্তানের হয়ে খেলায় তিনি যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, তরুণদের যেন তার মুখোমুখি হতে না হয়, ‘আশা করি আমাদের খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে তরুণেরা যেন আমি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম তার সম্মুখীন না হয়। তারা যেন হতাশ হয়ে আমার মতো ক্যারিয়ারকে ছুড়ে না ফেলে।’