পাকিস্তানের নিরাপত্তা যেন বাস্তব জীবনের ‘কল অব ডিউটি’
দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে পাকিস্তানের দিকে রওনা হওয়ার আগে মার্ক বাউচার বলেছিলেন, পাকিস্তান যে ক্রিকেট খেলার জন্য নিরাপদ, তা নিয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ নিজেও হয়তো নিরাপত্তাব্যবস্থায় এত কড়াকড়ি থাকবে, সেটা আশা করেননি!
কেমন নিরাপত্তাব্যবস্থা? সেটা কিছুটা বোঝা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার তাবরেজ শামসির কাছ থেকে। আজ পাকিস্তানে নামার পর থেকে যে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখেছেন, সেটি দেখে শামসির শুটিং গেম ‘কল অব ডিউটি’র কথা মনে পড়ছে। তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি বাস্তব জীবনের ‘কল অব ডিউটি’তে আছেন।
দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে পাকিস্তানে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪ বছর পর তাদের পাকিস্তান সফর এটি। ২৬ জানুয়ারি করাচিতে প্রথম টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু। তার আগে আজ অধিনায়ক কুইন্টন ডি ককের নেতৃত্বে পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর তাঁদের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তাই দিয়েছে পাকিস্তান।
সেটি দেখেই টুইটারে তাবরেজ শামসি তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দুজন সদস্য অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে—এমন ছবি দিয়ে শামসি লিখেছেন, ‘বাস্তব জীবনের কল অব ডিউটি। এঁদের বন্দুক কিন্তু ছোট নয় এবং এঁরা কাজে কোনো ছাড় দেবেন না।’
তার কিছুক্ষণ আগেই আরেকটি টুইট করেন শামসি। বিমানবন্দর থেকে তাঁদের হোটেলে নিয়ে যাওয়ার সময়ের একটি ভিডিও দিয়েছেন সেখানে। ভিডিওতে দেখা যায়, লাহোরের রাস্তা ফাঁকা করে প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁদের গাড়ির সামনে সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি, উড়ছে হেলিকপ্টার। ভিডিওর ক্যাপশনে শামসি লিখেছেন, ‘নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ কড়া।’
দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের নিরাপত্তায় কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পাকিস্তান, সেটির কিছুটা জানা গেছে গতকালই। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ লিখেছে, গত পরশু বৃহস্পতিবার করাচি পুলিশ অফিসে সভা হয়েছে এ নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের হোটেল, মাঠ আর হোটেল থেকে মাঠে যাওয়ার রাস্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের সংখ্যাটা কেমন হতে পারে, সেটির ধারণা দিয়েছে দ্য নিউজ। ২৪ জন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, ৫৯ জন ডিএসপি, ৩ হাজার ৬১২ জন কনস্টেবল, ৩১ জন নারী পুলিশ, র্যাপিড রেসপন্স ফোর্সের ৩০০ ও বিশেষ নিরাপত্তা ইউনিটের ১ হাজার ৮০ জন কমান্ডার থাকবেন পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে! যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত দলও থাকবে প্রস্তুত। ক্রিকেট তো নয়, যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি!
তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের শারীরিক পরীক্ষাও হয়ে যাবে। জোহানেসবার্গ থেকে রওনা দেওয়ার আগে ২১ সদস্যের দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোয়াডের দুবার কোভিড-১৯ টেস্ট হয়েছে। সেখানে সবাই নেগেটিভ এসেছেন বলেই জানাচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকেট পাকিস্তান।
আজ করাচি নামার পর তাঁদের আবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। তবে সেটির ফল আসার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সবাই আলাদা করে আইসোলেশনে থাকবেন। প্রথম রাউন্ড টেস্টের ফল আসার পরই হোটেলের কাছের মাঠে অনুশীলনে নামতে পারবেন প্রোটিয়ারা।