পাকিস্তান কেন বারবার এভাবে রান আউট হয়?
ক্রিকেটে রান আউটের মুহূর্তটা চরম উত্তেজনাপূর্ণ। একদিকে ব্যাটসম্যানরা দৌড়াচ্ছেন, ওদিকে ফিল্ডার ছুটছেন বলের পেছনে। বল ধরেও নানা চিন্তা, নিতে হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত; কোথায় ছুড়বেন বল? বোলিং প্রান্তে পাঠাবেন নাকি তুলনামূলক সহজ লক্ষ্য উইকেটকিপারের কাছে? কোন প্রান্তের ব্যাটসম্যানের গতি একটু ধীর সেটাও মনে করে নিতে হয় মুহূর্তের মধ্যে। তারপর বল ছোড়া হয়, সে বল ধরে আবার স্টাম্প ভাঙার দায়িত্ব। সব মিলিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে একেবারে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ।
সিকান্দার রাজাকে দেখে সেটা বোঝার কোনো উপায় ছিল না আজ। প্রতিপক্ষের দুই ব্যাটসম্যান ইমাম-উল-হক ও হারিস সোহেল দারুণ খেলছেন। তাঁদের একজন আউট হলেই ম্যাচে ফিরবে জিম্বাবুয়ে। এমন উত্তেজনাকর মুহূর্তেও নির্বিঘ্ন চিত্তে আউট করেছেন ইমামকে। অবশ্য তাঁর দুশ্চিন্তার কারণও ছিল না। দুই ব্যাটসম্যান যে তখন অন্য প্রান্তে। নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে হারিস ও ইমাম—দুজনই উইকেটকিপারের দিকে চলে গিয়েছিলেন। ফলে রাজা রাজ্যের সব সময় নিয়েই রান আউট করতে পেরেছেন।
আজ ম্যাচে টস করতে নেমেই একটা জয় পেয়েছে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডির এ ম্যাচ দিয়েই যে করোনাবিরতি কাটল তাদের। মাঝে ইংল্যান্ড সফর করে এসেছে তারা। কিন্তু দেশের মাটিতে এই করোনাভাইরাস মহামারির মাঝেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে একটা বার্তা দিয়ে রাখল পিসিবি। এমন এক ম্যাচেই ঘটল হাস্যকর সে ঘটনা। পাকিস্তান ইনিংসের ২৬তম ওভারের ঘটনা। ২ উইকেটে ১১৯ রান তখন স্বাগতিকদের। একটু আগেই ফিফটি পেয়েছেন ইমাম। ৩০ রানের জুটিতে হারিসও স্বচ্ছন্দ। ইমামকে একটু খাটো লেংথে বল করেছিলেন সিকান্দার রাজা। পয়েন্টে ঠেলে দিয়েছিলেন ইমাম। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক চামু চিবাবা ডাইভ দিয়ে বল থামানোর পর তাঁর মাথায় রানের চিন্তা ছিল না।
ওদিকে হারিস তো দ্রুত রান তোলার জন্য ছুট লাগিয়েছেন আগেই। মানা করারা আগেই ইমাম দেখলেন তাঁর পাশে সতীর্থ। চিবাবা দ্রুত থ্রো করেছিলেন উইকেটকিপারের দিকে। কিন্তু ব্রেন্ডন টেলর সে বল ধরার মুহূর্তে দেখেন তাঁর দিকে ছুটে আসছেন দুই ব্যাটসম্যানই। বল ততক্ষণে তাঁকে পেরিয়ে ফিল্ডার মাধভেরের কাছে। এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি ফিল্ডার। ঠান্ডা মাথায় বল দিয়েছেন সিকান্দার রাজাকে। আর সেখান থেকে স্টাম্প ভাঙার আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন রাজা। ৫৮ রানে ফিরে গেছেন ইমাম।
এমন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চুপ থাকবে, তা কি হয়! টুইটারে এক মুহূর্তে ছবি দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পাকিস্তানের সমর্থকেরাই বুঝে নিয়েছেন! সবার মুখেই একই কথা। ‘আবারও হলো’, ‘আবারও করে দেখাল পাকিস্তান’, ‘পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা কখনো হতাশ করে না’, ‘কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না।’ একজন তো অতীতের ঘটনাগুলো টেনে মজা করে লিখেছেন, ‘কে বলেছে ২০২০ সালে সব বদলে গেছে!’
পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের এভাবে একপ্রান্তে আউট হওয়া নতুন কিছু নয়। প্রায় নিয়মিতই এভাবে ভুল বোঝাবুঝির দৃশ্য সৃষ্টি করেন তারা। এমনকি দেশটির তরুণ ক্রিকেটাররাও এমন কিছু দেখিয়েছেন এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে কাশিম আকরাম ও রোহাইল নাজির বোলিং প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন। তাতে উইকেটকিপার থেকে সতীর্থের চেয়ে বেশি কাছে থাকায় আউট হয়েছেন কাশিম আকরাম। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয়রা পাকিস্তানিদের নিয়ে অনেক মজা করেছিল।
নিয়তি অবশ্য এর পাল্টা দিয়েছিল ভারতকে। ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন এক রান আউট হয়েছে ভারতের এক ব্যাটসম্যান। মজার ব্যাপার পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করার সঙ্গে জড়িত থাকা দুজন-অথর্ভ অঙ্কলেকার ও ধ্রুব জুরেল এমন দৃশ্যের জন্ম দিয়েছিলেন। সেদিন আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পাকিস্তানিদের অট্টহাসি দেখেছে। আজ বড়দের ক্রিকেটে একই কাণ্ড করে অবশ্য পাকিস্তান বুঝিয়ে দিয়েছে হাস্যকর আউটের রাজত্বটা তাদেরই।
আজ এমন রান আউটের ধাক্কা অবশ্য পাকিস্তান সামলে নিয়েছে হারিস সোহেলের সুবাদেই। তাঁর ৭১ রানের সঙ্গে লেট অর্ডারের ছোট ছোট সব ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৮১ রান তুলেছে পাকিস্তান। তাড়া করতে নেমে ব্রেন্ডন টেলরের দারুণ এক সেঞ্চুরিও (১১২) জয় এনে দিতে পারেনি জিম্বাবুয়েকে। ২৬ রানে হেরে গেছে জিম্বাবুয়ে।