পন্তের ঝড় শেষে হাসিটা ‘পাগলের’
খুশিতে পাগল হয়ে যাবেন, আগেই বলে রেখেছিলেন ডম বেস। প্রথমবারের মতো ভারত সফরে এসেছেন। স্পিনবান্ধব তকমার আড়ালে ভারতের উইকেট সফরকারী স্পিনারদের বরাবরই পরীক্ষা নেয়। বিশেষ করে প্রথমবার খেলতে যাওয়া স্পিনারদের। শেন ওয়ার্ন নামের একজন এর পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন। শ্রীলঙ্কায় দারুণ এক সফর করে আসা বেসকে তাই আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন ভারতের সাবেক খেলোয়াড়েরা।
বেস এর জবাবে কিছু বলেননি। শুধু বলেছিলেন, বিরাট কোহলির উইকেটটা পেতে চান। পরম আকাঙ্ক্ষার সে উইকেট পেলে নাকি খুশিতে পাগলও হয়ে যাবেন। তো পাগল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন সিরিজের প্রথম টেস্টেই। চেন্নাইয়ে কোহলিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বেস। শুধু কোহলি কেন, ভারতের পুরো মিডল অর্ডারকেই নিজের সংগ্রহে সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
ঋষভ পন্তের তর্জন-গর্জন, চেতেশ্বর পূজারার ধৈর্য প্রদর্শন—সব উপেক্ষা করে তৃতীয় দিনটার নায়ক ইংলিশ অফ স্পিনার। ৬ উইকেটে ২৫৭ রান করেও তাই স্বস্তিতে নেই ভারত। এখনো যে ৩২১ রানে পিছিয়ে স্বাগতিক দল।
দিনের শুরুতে সংগ্রহ বাড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল বেসদের ওপর। বেস তাতে খুব একটা সফল হননি। ২৮ রান করতেই শেষ দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু ততক্ষণেই ৫৭৮ রানের পাহাড়ে চড়েছে সফরকারীরা। এরপর দুর্দান্ত ফাস্ট বোলিং প্রদর্শনীতে ভারতকে শুরুতেই ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিয়েছেন জফরা আর্চার। প্রায় অবলীলায় সঠিক লাইন-লেংথে বল করেছেন। যখন প্রয়োজন মনে হয়েছে, তখনই শর্ট বল করে পরীক্ষা নিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। ৪৪ রানের মধ্যে দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিলকেও তুলে নেন আর্চার।
আর্চারের প্রথম স্পেল শেষে গুছিয়ে নিতে চাইছিল ভারত। পূজারা ও কোহলি ক্রিজে অপরাজিত থেকে গিয়েছিলেন মধ্যাহ্ন বিরতিতে। প্রথম দুই দিন জো রুট যেভাবে খেলেছেন, কোহলির কাছ থেকে তেমন এক ইনিংস দেখার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বেস সেটা হতে দেননি। বিরতি থেকে ফেরার কিছুক্ষণ পরই স্টক ডেলিভারিতে কোহলিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিয়মিত অধিনায়ক ব্যর্থ হয়েছেন, ওদিকে অস্ট্রেলিয়ায় কোহলির অনুপস্থিতিতে ভারতকে জেতানো অধিনায়ক রজিঙ্কা রাহানে নিজের উইকেট উপহার দিলেন বেসকে। ২ রানের ব্যবধানে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ককে হারিয়েছে ভারত। ৭৩ রানে তখন ৪ উইকেট নেই ভারতের।
এমন অবস্থায় ভারতকে আশা দেখাচ্ছিলেন শুধু পূজারা। অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে এক প্রান্ত ধরে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেটাই আবার বুঝে নিয়েছিলেন। আর গ্যাবা জেতানোর নায়ক পন্ত আক্রমণকেই পন্থা মানলেন। শুরু থেকেই বলের চেয়ে রান বেশি ছিল এই উইকেটরক্ষকের। একদিকে বোলারদের ধৈর্য পরীক্ষা নিচ্ছেন পূজারা, অন্যদিকে বোলারদের আত্মবিশ্বাস চূর্ণ করার কাজটা করছিলেন পন্ত।
বেসের ওপরই বেশি চড়াও হয়েছিলেন পন্ত। চা-বিরতি পর্যন্ত সময়টা এ দুজন পার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও বিরতি থেকে ফেরার আধঘণ্টার মধ্যেই ধাক্কা খেল ভারত। পূজারার আউটটা তো অদ্ভুত! বেসকে তুলে মারতে গিয়েছিলেন, বল প্রথমে লাগল শর্ট লেগে থাকা ফিল্ডারের কাঁধে। সেখান থেকে বল ওপরে উঠে গিয়ে পড়ল শর্ট মিড উইকেটে থাকা বার্নসের হাতে। ৭৩ রানে পূজারার বিদায়ে শেষ হলো পূজারা-পন্তের ১১৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
সঙ্গী হারিয়েও খেলার ধরন বদলাননি পন্ত। ইনিংসের ষষ্ঠ ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটে–বলে হয়নি। কাভারে সীমানার কাছে ধরা পড়লেন জ্যাক লিচের হাতে। বেসের চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে ৮৮ বলে ৯১ করেছিলেন পন্ত। ৯ চার আর ৫ ছক্কাতেই শেষ হলো বিনোদনে ভরা ইনিংসটি। বেস দিন শেষ করেছেন ৪ উইকেট নিয়ে।
ভারতকে বিপর্যয় থেকে রক্ষার দায়িত্ব এখন দুই অফ স্পিনারের। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও ওয়াশিংটন সুন্দর সিডনি ও ব্রিসবেনে নিজেদের ব্যাটিং সত্তার প্রমাণ রেখেছিলেন। আজও প্রায় ১৮ ওভার স্থায়ী অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নিজেদের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছেন দুজন। ৩২ রানের জুটিতে উইকেটে সময় কাটানোই মূল লক্ষ্য ছিল তাঁদের। ৬৮ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত আছেন সুন্দর, ওদিকে ৫৪ বল খেলে ৮ রান করেছেন অশ্বিন। এর মধ্যেই সুন্দরকে আউট করার আশায় দুটি রিভিউ নষ্ট করে ফেলেছে ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া সফরের স্মৃতি কাল ফেরাতে পারবেন সুন্দর-অশ্বিন? নাকি কোহলিকে আউট করে আনন্দের চূড়ায় থাকা বেস কাল সুন্দর সমাপ্তিও টানবেন?
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৭৮ (বেস ৩৪, লিচ ১৪*, অ্যান্ডারসন ১; বুমরা ৩/৮৪, অশ্বিন ৩/১৪৬, ইশান্ত ২/৫২, নাদিম ২/১৬৭)
ভারত ১ম ইনিংস: ২৫৭/৬ (পন্ত ৯১, পূজারা ৭৩, সুন্দর ৩৩*; বেস ৫৫/৪, আর্চার ৫২/২)