‘ওরা নিজেদের কী ভাবে?’
প্রশ্নটা দিল্লি ক্যাপিটালসের খেলোয়াড়দের প্রতি কেভিন পিটারসেনের। আইপিএলে কাল দিল্লির ইনিংসে শেষ ওভারে নো-বল বিতর্কে ক্রিজের দুই ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুমে ফেরার ইঙ্গিত দেন অধিনায়ক ঋষভ পন্ত। সহকারী কোচ প্রভিন আমরেকে মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে পাঠান দিল্লি অধিনায়ক।
আম্পায়ার কিছু একটা বোঝানোর পর দিল্লি শেষ পর্যন্ত ইনিংসের পুরোটা খেললেও বিতর্ক এড়াতে পারেনি। পন্তদের ধুয়ে দেন ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান পিটারসেন।
মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের চেয়ে পন্তের আচরণে বেশি বিরক্ত হয়েছেন পিটারসেন, ‘আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের চেয়ে দিল্লির খেলোয়াড়দের আচরণ আমার চোখে বেঁধেছে বেশি। এসব ঘটত না যদি রিকি পন্টিং থাকত (ড্রেসিংরুমে)। আমার মতে, পন্তকে “তুমি করছটা কী” এমন কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্ণ অধিকার আছে জস বাটলারের। কোচদের একজনকে হুট করে মাঠে পাঠানো এবং সেটাকে ঠিক আচরণ বলে মনে করা কতটুকু যৌক্তিক?’
পরিবারের এক সদস্য কোভিড পজিটিভ হওয়ায় আপাতত আইসোলেশনে আছেন দিল্লির প্রধান কোচ পন্টিং। কাল ম্যাচে তিনি পন্তদের সঙ্গে ছিলেন না।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৩৬ রান দরকার ছিল দিল্লির। ওবেদ ম্যাকয়ের করা শেষ ওভারে প্রথম তিন বলে তিন ছক্কা মারেন দিল্লির রোভম্যান পাওয়েল। তৃতীয় বলে ছক্কার পরই যত নাটক-বিতর্কের শুরু। ফুলটস বলটাকে পাওয়েল ছক্কা তো মেরেছেন, কিন্তু দিল্লির দাবি, বলটা কোমরের চেয়েও বেশি উচ্চতায় ছিল। সেটি নো-বল দেওয়া হলে ফ্রি-হিট পেত দিল্লি, ৩ বলের বদলে তখন ৪ বল হাতে থাকত, রান ১৮-র বদলে করতে হতো ১৭।
অর্থাৎ আগের দিন চেন্নাই সুপার কিংসকে জেতানোর পথে মহেন্দ্র সিং ধোনি যা করেছেন, তা করার সমীকরণ দাঁড়াত পাওয়েলের সামনে। কিন্তু মাঠের আম্পায়ার দিল্লির দাবি কানেই তুললেন না। দিল্লি তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে যেতে বলেছে, কিন্তু মাঠের আম্পায়ার তা মানতে রাজি ছিলেন না।
দুই ব্যাটসম্যান পাওয়েল ও কূলদীপ যাদব দুই আম্পায়ার নিতিন মেনন ও নিখিল পটবর্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ডাগআউট থেকে পন্ত ও দিল্লির কোচিং স্টাফের কয়েকজন দুই ব্যাটসম্যানকে আম্পায়ারদের ওপর চাপ দিয়ে যেতে বলেন। যদিও নিয়ম বলে, উইকেট পড়া-না পড়ার ব্যাপার না থাকলে নো বলের সিদ্ধান্ত তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে নেওয়ার দরকার নেই।
উত্তেজনার সেই মুহূর্তে আম্পায়ারদের নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল দেখে পন্ত দুই ব্যাটসম্যানকে মাঠ ছেড়ে উঠে আসতে বলেন। রাজস্থানের যুজবেন্দ্র চাহাল আবার কূলদীপকে সেটি করতে নিষেধ করেন। এর মধ্যে পন্ত তাঁর দলের সহকারী কোচদের আরেকজন প্রভিন আমরেকে বলেন মাঠে গিয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে।
দিল্লির সহকারী কোচ শেন ওয়াটসন আবার তখন পন্তকে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলেন। ম্যাচে রাজস্থানের হয়ে শতক হাঁকানো ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পন্তের কাণ্ডকীর্তি দেখে।
পরে ম্যাচটা হেরেছে দিল্লি। আচরণবিধি ভাঙায় পন্তকে ম্যাচ ফি-র পুরোটাই জরিমানা করা হয়েছে। দিল্লি অধিনায়ক লেভেল টু মাত্রায় আচরণবিধি ভাঙার কথা স্বীকার করেছেন বলে বিবৃতিতে জানায় আইপিএল কর্তৃপক্ষ। দিল্লি পেসার শার্দুল ঠাকুরকে ম্যাচ ফি-র ৫০ শতাংশ জরিমানা এবং সহকারী কোচ প্রভিন আমরেকে শতভাগ ম্যাচ ফি জরিমানার পাশাপাশি এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পিটারসেন দিল্লির খেলোয়াড়দের আচরণের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমি জানি না ওরা নিজেদের কী ভাবে, তবে কাজটা খুব ভুল হয়েছে। অনেক বড় ভুল। সবচেয়ে বড় ভুল হলো কোচ মাঠে ঢুকে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোচের এই আচরণ আমার মাথায় ঢোকেনি। তিনি তো দলের সিনিয়র ব্যক্তি। পন্ত খেলোয়াড়দের মাঠ ছাড়তে বলেছেন। আমার কাছে এসব অগ্রহণযোগ্য। কখনো ক্রিকেট মাঠে এসব দেখতে চাই না।’
ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনও দিল্লির খেলোয়াড়দের আচরণের সমালোচনা করে টুইট করেন, ‘দিল্লি ক্যাপিটালস বাজে খেলোয়াড়ি চেতনা দেখাল। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা, এমন আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’