পন্তকে ১০-এ ৫ দিতেও রাজি নন শেবাগ
এমন নয় যে, আইপিএলে এখন পর্যন্ত যাচ্ছেতাই অবস্থা দিল্লি ক্যাপিটালসের। ৬ ম্যাচের ৪টিতে জিতেছে, পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে আছে। এমনকি গত দুই মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন ও আইপিএলের সফলতম দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে নিয়ে রোহিত শর্মা যা করছেন, তার চেয়ে এবার এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থা দিল্লির। রোহিতের মুম্বাই ৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় এই মুহূর্তে চতুর্থ।
এই তথ্যগুলোর সঙ্গে যখন যোগ করে নেবেন, এই মৌসুমেই হঠাৎ করে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন ঋষভ পন্ত, হয়তো সব মিলিয়ে তাঁর পারফরম্যান্সকে খুব একটা খারাপ মনে হবে না। কিন্তু সেসব একদিকে রেখেই কাল পন্তের অধিনায়কত্বের সমালোচনায় নেমে পড়লেন বীরেন্দর শেবাগ।
গতকাল বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের কাছে নাটকীয় উত্তেজনার পর যেভাবে ১ রানে হেরে গেল পন্তের দিল্লি, তা দেখে একেবারেই ভালো লাগেনি শেবাগের। হয়তো নিজে দিল্লির ছেলে, আইপিএলের শুরুর দিকে দিল্লির ফ্র্যাঞ্চাইজির আইকন ছিলেন বলেই দলটার হার মেনে নিতে কষ্ট হয় ভারতের সাবেক ওপেনারের।
কাল বেঙ্গালুরুর কাছে দিল্লিকে এভাবে হেরে যেতে দেখে পন্তের অধিনায়কত্বের সমালোচনা করে শেবাগ বলেছেন যে তিনি দিল্লি অধিনায়ককে ১০-এর মধ্যে ৫-ও দিতে রাজি নন! ওদিকে আরেক ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার আশিস নেহরা সমালোচনা করেছেন পন্তের ব্যাটিংয়ের।
ভারতের জার্সিতে অস্ট্রেলিয়া সফরের পর ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আলো ছড়িয়ে এই বছরে বেশ নাম কুড়িয়েছেন পন্ত। এরপর আইপিএলেও নিয়মিত অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের চোটের কারণে হঠাৎ পেয়ে গেলেন দিল্লির অধিনায়কত্ব। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দলের পারফরম্যান্স তো পয়েন্ট তালিকাই বলছে, ব্যাট হাতে পন্তের নিজের পারফরম্যান্সও খুব একটা খারাপ নয়। এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে দুটি ফিফটি করেছেন, ত্রিশের বেশি রানের ইনিংস আছে আরেকটি।
ফিফটি পন্ত গতকালও করেছেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিতও ছিলেন ৪৮ বলে ৫৮ রান করে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর ১৭১ রানের জবাবে শেষ পর্যন্ত দিল্লির ১ রানের হারের পর পন্তকে সমালোচনায় জর্জরিত হতেই হচ্ছে। পন্তের পাশাপাশি শিমরান হেটমায়ারও ফিফটি (২৫ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৩ রান) করে অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসাব মেলাতে পারেনি দিল্লি।
কিন্তু ব্যাটিং নয়, শেবাগ মূলত পন্তের অধিনায়কত্বের সমালোচনা করেছেন বোলিংয়ের সময় তাঁর পরিকল্পনার অভাবকে। ‘ওর অধিনায়কত্বের জন্য আমি ওকে ১০-এ ৫-ও দিতে রাজি নই, কারণ এমন ভুলের কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না। আপনার মূল বোলারেরই যদি ওভার শেষ না হয়, তার মানে আপনার হিসাবে ভুল আছে। আর অধিনায়কত্ব তো দিন শেষে হিসাবেরই খেলা। এদিকটায় নজর দিতে হবে। একজন অধিনায়ককে অবশ্যই অবস্থা বুঝে তাঁর দলের বোলারদের কাজে লাগাতে হবে’—ভারতের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে বলেছেন শেবাগ।
শেবাগ যে ভুলটার কথা বলছেন, সেটা হলো দিল্লির বোলিংয়ের সময় অমিত মিশ্রর একটা ওভার বাকি থেকে যাওয়া। গত ২০ এপ্রিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ২৪ রানে ৪ উইকেট নেওয়া অমিত মিশ্র কাল ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু বোলিং পরিকল্পনায় পন্ত এমন গড়বড় করে ফেললেন যে শেষ পর্যন্ত অমিত মিশ্রর একটা ওভার বাকিই থেকে গেল।
সে জায়গায় বেঙ্গালুরু ইনিংসের শেষ ওভারটা পন্ত দিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিসকে, ইনিংসে এর আগে যিনি বোলিংই করেননি! তিন ছক্কায় সে ওভারেই ২৩ রান তুলে নেন বেঙ্গালুরুর এবি ডি ভিলিয়ার্স।
এ কারণেই শেবাগ বলছেন, ‘এদিকটা ওকে শিখতে হবে। আর না হলে এভাবে যাকে-তাকে বল তুলে দিতে হবে। একজন অধিনায়কের দক্ষতা বোঝা যায় সে কীভাবে নিজের সিদ্ধান্ত দিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে, সেটার মাধ্যমে। ওকে ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে বোলিং বা ফিল্ডিং অবস্থানে বদল আনতে হবে।’
পন্তকে সব মিলিয়ে ‘১০’-এ ‘৩’ দেবেন জানিয়ে শেবাগ জানালেন ‘স্মার্ট ক্রিকেট’ শেখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা, ‘ঋষভ পন্ত যদি ভালো অধিনায়ক হতে চায়, ওকে এসব ছোট ছোট দিক মাথায় রাখতে হবে। স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হবে, তখনই সে স্মার্ট অধিনায়ক হতে পারবে।’
এদিকে আশিস নেহরা সমালোচনা করেছেন রান তাড়ায় দিল্লির হতশ্রী পরিকল্পনার। এখানেও যত দোষ ‘পন্ত’ ঘোষ! মাঝের ওভারগুলোতে পন্তের ধীরগতির ব্যাটিংকেই দিল্লির হারের কারণ মনে হচ্ছে নেহরার, ‘মাঝের ওভারগুলোতে ঋষভ যেভাবে ব্যাট করেছে, শেষের ওভারগুলোতে যত রান নেওয়ার সুযোগ ও হারিয়েছে...এটা পরিকল্পনার দুর্বলতা ছাড়া আর কিছু নয়। হেটমায়ার যদি আগেভাগে আউট হয়ে যেত, দিল্লি এই ম্যাচ ২৫ রানে হারত!’
দিল্লির পরিকল্পনার দুর্বলতা পরে এককথায়ই বুঝিয়ে দিয়েছেন নেহরা, ‘রান তাড়ার পরিকল্পনাটা ওদের খুবই বাজে হয়েছে। দুজন সেট ব্যাটসম্যান অপরাজিত থেকে যাওয়া সত্ত্বেও ওরা ১ রানে ম্যাচ হেরেছে। এমনটা এই সংস্করণের ক্রিকেটে হতে পারে না!’