পঞ্চপাণ্ডবের বৃত্ত ভাঙছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী
২০২৩ বিশ্বকাপ প্রতিবেশী দেশ ভারতে। অনেকটা চেনা কন্ডিশনে ভালো করতে বাংলাদেশকে কী করতে হবে? চার পর্বের ধারাবাহিকের প্রথমটি আজ। সাবেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন রানা আব্বাস
২০১৯ বিশ্বকাপের আগে দেশের ক্রিকেটে একটা শব্দ খুব জনপ্রিয় হলো—পঞ্চপাণ্ডব। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ—বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাঁচ স্তম্ভ। মাশরাফি যেহেতু আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, এটিই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। ২০২৩ বিশ্বকাপে যে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না, এটি অন্তত নিশ্চিত। আর এতেই ভেঙে যাচ্ছে পঞ্চপাণ্ডবের বৃত্তটা, যাঁরা একসঙ্গে খেলেছেন এক শর অধিক ওয়ানডে। এটা বলে দেওয়াই যায়, পঞ্চপাণ্ডবের সমাপ্তি আসন্ন।
এত দিন ওয়ানডেতে এ পাঁচ তারকা ক্রিকেটারই ছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান ভরসা। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। সাকিব–মাশরাফি–তামিম–মাহমুদউল্লাহ তাঁর চার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। পাঁচজনের একজন না থাকলেই কেমন এক শূন্যতা অনুভব হয়েছে দলে। এখন সেই ক্লাবের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাশরাফি থাকবেন না। কিন্তু বাকি চারজনই থাকবেন, সেটিও কি নিশ্চিত করে বলা যায়?
সাকিব–তামিম–মুশফিকের বয়স ৩০–৩২। ফর্ম, ফিটনেস বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটলে ২০২৩ বিশ্বকাপে তিনজনকেই পাওয়ার কথা। সংশয় শুধু ৩৩ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য আশাবাদী চারজনকেই পাওয়া যাবে পরের বিশ্বকাপে, ‘চারজনকে পাওয়া নিয়ে আমি আশাবাদী। তারা ক্যারিয়ার কত দূর নিয়ে যাবে, সেটি তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে তাদের যে বয়স, এখন যে যুগ, যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারে এবং সবাই ব্যাটসম্যান। ব্যাটসম্যানদের খেলাটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। তবে কষ্ট করতে হবে। এখনকার দিনে ৩৬–৩৭ বছর বয়সে খেলতে নিয়মিত দেখা যায়।’
ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনও হাবিবুলের কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘মাশরাফি বাদে বাকি চারজনকেই পাওয়ার কথা। তারা আরও পরিণত হবে এ সময়ে। আশা করি তারা ধারাবাহিক রান পাবে। ওদের ৩১–৩২ বছর বয়স এখন, আরও চার বছর অনায়াসে খেলতে পারে। আর ভালো দিক যে তারা সবাই ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহ যথেষ্ট ফিট আছে। সহজাত অ্যাথলেট বডি। এটা ধরে রাখতে পারলে ওর সমস্যা হওয়ার কথা না।’
মাশরাফিও আশাবাদী, তাঁকে ছাড়া বাকি সবাই পরের বিশ্বকাপ খেলার সামর্থ্য রাখে। তবে সাকিব–মুশফিকদের শৈশবের গুরু ও বিসিবির নারী ক্রিকেটের প্রধান নাজমুল আবেদীন বিষয়টা দেখছেন অন্য চোখে, ‘মাশরাফি পরেরটা খেলবে না, সেটি তো নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু বাকি যে চারজন আছে, তারা খেলবেই, এটাও নিশ্চিত করা বলা হবে কেন? কেন এই সময়ে এই চারজনের চেয়ে ভালো ক্রিকেটার তৈরি করতে পারবে না বাংলাদেশ? ধরে নিলাম সাকিব বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বাকিদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন কেন হবে? কেন তাদের বিকল্প ক্রিকেটার তৈরি করতে পারব না? তাদের পেছনে ফেলে যদি বর্তমান তরুণ ক্রিকেটাররা পারে, তাহলে ভালো। কিন্তু তাদের চেয়ে আরও ভালো ক্রিকেটার যদি আমরা না পাই, তাহলে বলতে হবে একটা জায়গায় আমরা আটকে রইলাম।’
শুধু পঞ্চপাণ্ডব ভাঙছে না, আরও একটি বিষয় ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। গত পাঁচ বছর বাংলাদেশ অভ্যস্ত ছিল মাশরাফির অধিনায়কত্বে। তাঁর নেতৃত্ব যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট এ সময়ে খেলেছে বাংলাদেশ, নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বেও কি সেই একই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলবে? ব্যাপারটা যদি পরিষ্কার করে বলা হয়, মাশরাফির জায়গায় দলকে নেতৃত্বে দেবেন হয়তো সাকিব। একেক অধিনায়কের দর্শন একেক রকম। অধিনায়কত্বের দর্শনে মাশরাফি–সাকিবের সঙ্গেও নিশ্চয়ই পার্থক্য আছে। শুধু পঞ্চপাণ্ডবের বৃত্ত ভেঙে যাওয়াই নয়, দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়কের অধ্যায় যে শেষ হচ্ছে, এটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও হবে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ।
সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে উতরে যাবে বাংলাদেশ, সেটির একটা ‘প্র্যাকটিস’ হয়ে যাবে এই শ্রীলঙ্কা সফরে। যে চর্চাটার শুরু ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবালকে দিয়ে।